‘চার দেশীয় জোটে’ উপযুক্ত নয় ভারতীয় নৌবাহিনী

  23-11-2017 12:39PM


পিএনএস ডেস্ক: : যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই উদ্যোগ সফল করতে হলে ‘চার দেশীয় জোটকে’ অবশ্যই নয়াদিল্লিতে দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজ করা অবিশ্বাস দূর করতে হবে আগে। মিত্রদের মধ্যে প্রকৃত সামরিক সহযোগিতা নিয়ে সংশয় এই কাজে বাধা সৃষ্টি করছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের উদীয়মান শক্তির সাথে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে একত্রিত করার উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই জোট গঠনের প্রয়াসকে। এই উদ্যোগের কেন্দ্রে থাকবে যৌথ নৌমহড়া।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্র-নির্ধারিত যুদ্ধ-ব্যবস্থা এবং ডাটা লিঙ্কের ভিত্তিতে সহজেই একসাথে কাজ করতে পারলেও ভারত থেকে যাচ্ছে বাইরে। ভারতের বেশির ভাগ রণতরী ও যুদ্ধবিমান রাশিয়ার তৈরি বলেই শুধু নয়, দেশটির সরকার এবং সামরিক বাহিনী তথ্য আদান-প্রদান এবং স্পর্শকাতর সামরিক যোগাযোগব্যবস্থা উন্মুক্ত করতে ব্যাপকভাবে অনীহ।

অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ভারতের সাথেই যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি নৌ মহড়া চালিয়েছে। কিন্তু নৌবাহিনী সূত্র এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মহড়াকে যৌথ যুদ্ধের প্রস্তুতি নয়, বরং ‘সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানিকতা’ বলাই ভালো।

কারণ ভারত তথ্য আদান-প্রদান চুক্তিতে সই করবে না। ফলে অতি সাধারণ এসএমএস-ধরনের তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে ভয়েজ ও টেক্সট কমান্ড দিয়ে এসব মহড়া চালানো হয় বলে ভারতীয় ও জাপানি সামরিক সূত্র জানিয়েছে।

সামরিক মহড়া পর্যবেক্ষণকারী নয়া দিল্লির ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো অভিজিত মিত্র রয়টার্সকে বলেন, ‘মনে করুন, ১৯৮০-এর দশকে আপনার বাড়িতে আসার জন্য আপনার বন্ধুকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আপনার বাঁ দিকের অর্থ আপনার বন্ধুর কাছে ডান দিক মনে হতে পারে। কারণ পরিস্থিতিগত সচেতনতা আপনাদের কারোই নেই।’

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আমেরিকানরা যা চায় তা হলো গুগল ম্যাপের ওপর পিন ফেলে একসাথে আঘাত করতে। আপনি জানেন, কোথায় আপনার বন্ধু এবং সে জানে কোথায় আপনার বাড়ি এবং কিভাবে সেখানে যাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে মন্তব্য করার জন্য অনুরোধে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সাড়া দেয়নি।

সামরিক বিষয়াদি নিয়ে তথাকথিত চার দেশীয় জোট গঠনের উদ্যোগ এক দশক আগের। তখনও চীনকে নিয়ে উদ্বেগ থেকেই উদ্যোগটি নেয়া হয়েছিল। বিষয়টি এখন নতুন করে আলোচিত হচ্ছে। সম্প্রতি ম্যানিলায় আঞ্চলিক এক সম্মেলনের ফাঁকে কর্মকর্তা-পর্যায়ের একটি বৈঠকও হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ‘অবাধ, উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক’ প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে ভারতের সহযোগিতা চেয়ে আলোচনা করেছে।

ভারত ও প্যাসিফিক মহাসাগর দুটিকে ‘একক কৌশলগত এলাকা’ হিসেবে অভিহিত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে আঞ্চলিক মিত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, এটি ভারত, জাপান ও মার্কিন সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে বড় ধরনের সমন্বয় সাধন করবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বার্ষিক ‘মালাবার’ নৌমহড়ায় আগের চেয়ে শক্তিশালী রণতরী নিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা তাতে জাপানকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।

চলতি বছর ইউএসএস নিমিৎজ ক্যারিয়ার গ্রুপকে ভারতের পূর্ব উপকূলে মোতায়েন করা হয়। ভারতের বিমানবাহী রণতরী এবং জাপানের হেলিকপ্টারবাহী রণতরী এতে অংশ নেয়।

তবে জাপানি সমুদ্র প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, মহড়ার সময় ভারতীয় নৌবাহিনী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভয়েজ ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে কাজ সেরেছে। তথ্য আদান-প্রদান এবং অন-বোর্ড কমান্ড সেন্টারগুলোতে ডিসপ্লের জন্য কোনো স্যাটেলাইট লিঙ্ক ছিল না।

তিনি বলেন, যেকোনো যৌথ মহড়ায় সবচেয়ে জটিল বিষয়টি হয় সাধারণ কমিউনিকেশন।

মহড়ার লক্ষ্য ছিল যৌথ টহলের পরিবেশ সৃষ্টি করা। এর ভিত্তিতেই ভারত মহাসাগর ও প্যাসিফিকে ভারত ও তার মিত্ররা টহল দেবে বলে ধরা হচ্ছে।

পেন্টাগনের মুখপাত্র ও মার্কিন মেরিন কোরের লে. কর্নেল ক্রিস্টোফার লোগান বলেন, মহড়ার লক্ষ্য ছিল পারস্পরিক আরো উন্নত নির্ভরশীলতা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে ভারতের বর্ধিত ভূমিকা সম্পর্ককে জোরদার করবে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক লজিস্টিকস চুক্তি করেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সিকিউরিটি মেমোরেনডাম অব এগ্রিমেন্ট (সিআইএসএমওএ) ভারতের সাথে তথ্য আদান-প্রদানে গতির সঞ্চার করবে।

তবে নয়া দিল্লির সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, ভারত এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে সিআইএসএমওএ-এ রাজি হলে তার সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রকাশ হয়ে যাবে। এমনকি ভারতের অপারেশনগুলো সম্পর্কেও জেনে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সবসময় একই হবে- এমন নয়, বিশেষ করে ভারতের চির-প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের ক্ষেত্রে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন