মেক্সিকো উপসাগরে যাচ্ছে ইরানি নৌবহর

  24-11-2017 09:27AM


পিএনএস ডেস্ক: ইরানি যুদ্ধজাহাজের একটি বহর বিশ্বভ্রমণে বের হচ্ছে। পারস্য উপসাগরের বহরটি এই সফরে যেসব অঞ্চলে যাবে তার মধ্যে অন্যতম মেক্সিকো উপসাগর, যার এক পাশে মেক্সিকো ও অন্য পাশে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থিত।

এই পদক্ষেপ এমন একটি সময়ের, যখন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মোকাবেলায় সামরিক বাহিনীকে প্রসারিত ও আধুনিক করতে উদ্যোগ নিচ্ছে ইরান। দেশটির নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল হোসেইন খানজাদি বুধবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন, ইরানি যুদ্ধজাহাজের একটি বহর শিগগিরই আটলান্টিক মহাসাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের উদ্দেশে যাত্রা করবে। এ সময় এই বহরটি দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বেশ কিছু দেশেও যাবে। ইরানের আধা সরকারি বার্ত সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সির খবরে এ কথা বলা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মিত্রদের আগ্রাসী পদক্ষেপের মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী মিত্র বৃদ্ধি ও বিশ্বপর্যায়ে ইরানের সামরিক বাহিনীর অবস্থান জোরদার করার লক্ষ্যে ইরান এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ইসরাইল, সৌদি আরবসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা ইরানকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। ইরানি সেনাবাহিনীর উপসমন্বয়ক ও সাবেক নৌবাহিনীপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল হাবিবুল্লাহ সায়ারি চলতি মাসের শুরুতে এক অনুষ্ঠানে আটলান্টিক মহাসাগরে তৎপরতা বৃদ্ধির গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যবর্তী উন্মুক্ত পানিতে দাপড়ে বেড়ানোই নৌবাহিনীর লক্ষ্য হওয়া উচিত। অদূর ভবিষ্যতেই এটি উপলব্ধি করা যাবে।’

নৌবাহিনীপ্রধান হোসেইন খানদাজি তার সংবাদ সম্মেলনে আগামী বছর নতুন যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন চালু এবং ইরানের নৌশক্তি বৃদ্ধিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, পেকান-শ্রেণীর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে সক্ষম এমন একটি যুদ্ধজাহাজ ‘সেপার’ আগামী সপ্তাহে কাস্পিয়ান সাগরের নৌবহরে যোগ দেবে। কিছু নৌযান সংস্কার করা হবে, মারকান উপকূলীয় বন্দর নগরী জাস্কে একটি নৌবাহিনীর জন্য একটি বিমানবন্দর করা হবে।

১৯৭৯ সালে ইরানে পশ্চিমা সমর্থিত শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির সরকারকে উৎখাত করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র কায়েম হওয়ার পর থেকেই দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে চিড় ধরে। এরপর থেকে ইরানের প্রভাব মোকাবেলায় তাদের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবকে সমর্থন দিতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এই বিরোধিতার মাত্রা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে অনেক গুণ।

বিশেষ করে উভয়পক্ষই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে সমর্থন দিতে শুরু করলে দ্বন্দ্ব ছায়া যুদ্ধে রূপ নেয়। অনেক ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবে সহযোগিতার প্রস্তাবও দিতে শুরু করে ইসরাইল। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের সাথে ছয় বিশ্বশক্তির পারমাণবিক চুক্তিকে বৈধতা দেননি। শুরু থেকেই বারাক ওবামার ওই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন ট্রাম্প। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের কট্টরপন্থী অন্য নেতারাও এর বিরোধিতা করেন।

তবে এই চুক্তির ফলেই ইরানের ওপর থেকে পশ্চিমা অবরোধ উঠিয়ে নেয়া হয়। তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে তাদের বাজেয়াপ্ত কোটি কোটি ডলার ফেরত দেয়া হয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমালোচনার পরও ইরান চুক্তির বিষয়টি আবার বিবেচনার জন্য কংগ্রেসে পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও ইরান বলছে তারা কখনই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ বা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে না।

পশ্চিম গোলার্ধে ইরানের এবারের পদক্ষেপটি অপ্রত্যাশিত হলেও নতুন নয়। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লাতিন আমেরিকান বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার জন্য ২০১৪ সালেই মেক্সিকো উপসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল। পারস্য উপসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতির জবাব দেয়াও এর একটি কারণ। এর আগে ২০১০ সালে তেলের পাইপলাইন লিক হয়ে মেক্সিকো উপসাগরে পানি দূষিত হওয়া প্রতিরোধ করতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছিল ইরান। সূত্র : নিউজ উইক

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন