যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের বিরোধ উস্কে দিতে চায় ভারত

  08-12-2017 06:32AM

পিএনএস ডেস্ক: চীনের সাবমেরিন উন্নয়ন কর্মসূচি মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরীর জন্য চ্যালেঞ্জ- এমন কথা বলে চীনকে দমনে অংশীদার হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে উস্কে দিচ্ছে ভারত। এক চীনা বিশেষজ্ঞ এ মন্তব্য করেছেন।

ভারতীয় সংবাদপত্র ডেকান ক্রনিকলে বলা হয়েছে, ভারতের উচিত বিমানবাহী রণতরীর ওপর কম জোর দিয়ে সাবমেরিনের প্রতি বেশি নজর দেয়া। ভারতের অতি দীর্ঘ উপকূল রেখা এবং দেশের অর্থনৈতিক জীবনপ্রবাহ সৃষ্টিকারী দূরবর্তী জাহাজ চলাচল লেনগুলো রক্ষার জন্য বিমানবাহী রণতরী খুব একটা উপযোগী হবে না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)’র উত্থান ‘বিশ্বের সার্বভৌম দেশগুলোর নৌচলাচলে স্বাধীনতার প্রতি এবং সাগরপথে স্বাধীনভাবে জাহাজ চলাচলে কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।’

সাংহাই একাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের রিসার্চ ফেলো হু জিইয়ং মঙ্গলবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, আমাদের নৌশক্তির উত্থানকে ভারতীয় মিডিয়া অতিরঞ্জিতভাবে প্রকাশ করছে। কারণ চীন পরিষ্কারভাবে বলেছে, নৌশক্তির বিকাশ হলো সাগরপথের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য। আর পিএলএ’র উত্থানে নৌচলাচলের স্বাধীনতায় কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না।

ডেকান ক্রনিকলের রিপোর্টে আরো দাবি করা হয়েছে, চীনের সাবমেরিন উন্নয়নের একটি লক্ষ্য হলো মার্কিন বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ। হু বলেন, পিএলএ নৌবাহিনী হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিদ্বন্দ্বী- একথা বলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ উস্কে দিতে চাইছে ভারত। তিনি বলেন, চীনকে সংযত করার জন্য ভারত চায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা বাড়াতে।

চীনা সামরিক কর্তৃপক্ষ বলেনি, তাদের বহরে কতটি সাবমেরিন আছে।
মার্কিন ম্যাগাজিন দি ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট সেপ্টেম্বরে জানিয়েছিল, চীনের কাছে আছে ৭০টির বেশি সাবমেরিন। তবে মার্কিন বা রুশ সাবমেরিনের তুলনায় চীনা সাবমেরিনগুলো অনেক পিছিয়ে। ডেকান ক্রনিকলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের আছে মাত্র ১৪টি সাবমেরিন।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বা ইন্ডিয়ান ওশান রিজিওনে (আইওআর) কৌশলগত অবস্থান সুসংহত করতে ভারত ও চীন যে ‘মহা-খেলা’য় মেতেছে তাতে খুবই দ্রুত বদলাচ্ছে দৃশ্যপট।

আগামী বছরের শুরুতে যে সময়টাতে আইওআর দিয়ে চীনা নিউক্লিয়ার সাবমেরিন অতিক্রম করার কথা, সেখানে আগে থেকে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের পাশাপাশি একই সময়ে শক্তি প্রদর্শন ও গভীর সমুদ্রে যুদ্ধ সক্ষমতায় শান দিতে ওই এলাকায় বড় ধরনের সামরিক মহড়া প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত।

সম্প্রতি, ভারত তার নৌবাহিনীর বহরে ছয়টি নিউক্লিয়ার-চালিত অ্যাটাক সাবমেরিন (এসএসএন), চারটি নিউক্লিয়ার-চালিত ব্যালিস্টিক মিসাইলবাহী সাবমেরিন (এসএসবিএন) এবং ১৮টি ডিজেল-চালিত সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে খুব দ্রুত এগুচ্ছে।

বর্তমানে নৌবাহিনীকে মাত্র ১৩টি পুরনো কনভেনশনাল সাবমেরিন, গত বছর কমিশন হওয়া দেশীয় এসএসবিএন আইএনএস অরিহন্ত এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ধার নেয়া একটি এসএসএন চক্র রয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক চুক্তির কারণে এতে কোনো নিউক্লিয়ার মিসাইল নেই।

তবে চারটি দেশী এসএসবিএন-এর মধ্যে দ্বিতীয়, বিশাখাপত্তমে ৯০,০০০ কোটি রুপি ব্যায়ে তৈরি ‘আইএনএস আরিধামান’ সাবমেরিন বহরে যুক্ত হবে আগামী বছর। তাছাড়া, ৬০,০০০ কোটিরও বেশি রুপি ব্যয়ে ছয়টি দেশী এসএসএন নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নও শুরু করেছে ভারত। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে, নিরাপত্তা বিষয়ক কেবিনেট কমিটি পরিকল্পনাটির অনুমোদন দেয়।

৪ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা বলেন, ‘এটার (এসএসএন প্রকল্প) কাজ শুরু হয়েছে। এটা গোপনীয় প্রকল্প। কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর বেশি বলা যাবে না।’

আইওআর অঞ্চলে নতুন অভিযানের পরিকল্পনা এবং নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার বিষয়েই বেশি জোর দিচ্ছেন নৌবাহিনী প্রধান। মোদী সরকারও এমনকি নতুন করে চালু হওয়া যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে চারদেশীয় জোটে যোগ দেয়ার ব্যপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। একটি ‘অবাধ, মুক্ত, সম্ভাবনাময় ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চল’ নিশ্চিত করতে এই চার-শক্তির যে লক্ষ্য, তা চীনের সম্প্রসারণবাদী ও একতরফা আচরণ এবং ‘বেল্ট ও রোড’ উদ্যোগের মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

পারস্য উপসাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী পর্যন্ত এলাকায় মিশনকে কেন্দ্র করে জাহাজ মোতায়েন করেছে নৌবাহিনী। সাথে রয়েছে যে কোনো আকস্মিক অভিযানের জন্য যুদ্ধজাহাজের সার্বক্ষণিক মহড়া।

অ্যাডমিরাল লানবা আরো বলেন, ‘উত্তর আরব সাগর, ওমান উপসাগর, পারস্য উপসাগর, আন্দামান সাগর এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মালাক্কা, লোম্বোক ও সুন্দ্রা প্রণালীর প্রবেশপথে নিয়মিত যুদ্ধজাহাজ ও বিমান মোতায়েন তদরকি করা হচ্ছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এডেন উপসাগর থেকে পশ্চিম প্রশান্ত অঞ্চল পর্যন্ত এলাকায় চব্বিশ ঘন্টা আমাদের জাহাজ ও বিমান মোতায়েন করা আছে।’

আগামী বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো পশ্চিম ও পূর্ব সাগরের উভয়দিকে- একটির পর অন্যটিতে- বড় ধরনের ‘ট্রোপেক্স’ (অভিযানের প্রস্তুতিমূলক মহড়া) পরিচালনা করবে নৌবাহিনী। ‘জলসীমায় বিরামহীন গতানুগতিক এবং অগতানুগতিক হুমকি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক নজরদারির পাশাপাশি শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে’, বলেন তিনি।

এন্টি-পাইরেসি মহড়ার অংশ হিসেবে আইওআর অঞ্চলে চীন সাবমেরিন মোতায়েন করেছে দাবি করলেও তা উড়িয়ে দেন নৌবাহিনী প্রধান। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে কমপক্ষে তিনটি নিউক্লিয়ার এবং চারটি সাধারণ সাবমেরিনকে নজরে রেখেছে তার বাহিনী।

অ্যাডমিরাল লানবা জানান, ‘এন্টি-পাইরেসি অভিযানে সাবমেরিন মোতায়েন করাটা খুবই অস্বাভাবিক। পিএলএএন (পিপলস লিবারেশান আর্মি-নেভি) সাবমেরিনগুলো থেকে সম্ভাব্য হুমকির মাত্রা যাচাই করে দেখেছি আমরা।’

পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরে চীনের উপস্থিতি সম্পর্কে নৌবাহিনী প্রধান বলেন, ভারতের জন্য ভবিষ্যতে এটা ‘নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ’ হতে পারে। ‘বন্দরটি একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কিন্তু যদি সেখানে চীনা যুদ্ধজাহাজ আসে, তাহলে বিষয়টি নিরসনের উপায় খুঁজতে হবে আমাদের’, বললেন তিনি।

চীন অবশ্য আইওআর অঞ্চলে তাদের অবস্থান সম্প্রসারণ করতে এরই মধ্যে ‘আফ্রিকার শৃঙ্গ’ জিবুতি’র উপকূলে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন