পেঁয়াজের ঝাঁজে কাঁদছে এশিয়া!

  14-12-2017 01:17PM

পিএনএস ডেস্ক:বাংলাদেশী মাছের ঝোল, পাকিস্তানের বিরিয়ানি আর মালয়েশিয়ায় বেলাকান পেঁয়াজ ছাড়া কল্পনা করা যায় না। অথচ সেই পেঁয়াজের দাম এতোটাই বেড়ে গেছে যে, এই নিত্যপণ্যের ঝাঁজে এখন বলতে গেলে পুরো এশিয়া কাঁদছে। ভারতে এ নিত্যপণ্যটির দাম কমতির দিকে হলেও বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতে এটার দাম বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহ কম থাকার মধ্যে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি শর্ত বেঁধে দিয়েছে। আর তার প্রভাব পড়ছে পুরো এশিয়ায়। বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটি এখন বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মতো দেশের মানুষকে কাঁদাচ্ছে। পেঁয়াজের যোগান ঠিক রাখতে এখন রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে এসব দেশকে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এশিয়ার কোটি কোটি মানুষের রান্না ঘরে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ। ভারত রপ্তানিতে শর্ত জুড়ে দেয়ার আগেই পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে ঢাকায় এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা।

দেশে গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ছিল। এখন তা ২১৫ শতাংশ বেশি বলে জানাচ্ছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পাঁচ ছয় মাস ধরেই পেঁয়াজের দর বেশ চড়া। তবে দেশি পেঁয়াজ শতক হাঁকায় গত মাসে। নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত ২৩ নভেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে সর্বনিম্ন মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ডলারের এখনকার মূল্য ৮৩ টাকা ধরলে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৭০ টাকার বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন, যা আগের বছরের চেয়ে এক লাখ ৩১ হাজার টন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিগত অর্থবছরে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে পেঁয়াজের জোগান এসেছে ২৯ লাখ টন। অবশ্য চাহিদা ২৩-২৪ লাখ টন বলে ধারণা করা হয়।

ব্লুমবার্গের এক খবরে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপের মূল্যস্ফীতি বাড়লেও যেখানে দেশগুলোর জন্য আশানুরূপ নয়, সেখানে ভারতে উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। পেঁয়াজ-টমেটোর মূল্য বৃদ্ধি ভারতের মূল্যস্ফীতিকে টেনে তুলেছে ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। নভেম্বরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) এর টার্গেট ভেঙে ফেলেছে মূল্যস্ফীতি।

খুচরা বাজারে ৭-৮ দফা পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর গেলো মাসের শেষদিকে পণ্যটি রপ্তানিতে নতুন শর্ত দেয় ভারত। ওই শর্তানুযায়ী, পেঁয়াজ রপ্তানিতে দাম প্রায় দ্বিগুণ করে দেশটি। এতদিন প্রতি মেট্রিকটন পেঁয়াজ ৪০০ থেকে ৫০০ ডলারে রপ্তানি হলেও নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৫০ ডলার।

গেল জুলাই মাসে ভারত থেকে এই পেঁয়াজ রপ্তানি হয়েছে টনপ্রতি ১৮৬ ডলারে। এতে করে এশিয়ার বাজারে পেঁয়াজের যোগানে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

মুম্বাইয়ে অজিত শাহ নামে ভারতের একজন রপ্তানিকারক জানান, নতুন দর ঠিক হওয়ায় এখন আমদানিকারক কমে গেছে। স্বল্প কিছু আমদানিকারক টনপ্রতি ৮৫০ ডলারে পেঁয়াজ কিনতে চাচ্ছে। এতে করে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে।

ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে। অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, চীন ও মিশর।

ওয়াহিদ আহমেদ নামে পাকিস্তানের একজন ব্যবসায়ী নেতা জানান, পেঁয়াজ রপ্তানিতে বর্তমানে পাকিস্তানে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। গেলো দুই মাস ধরে পণ্যটি রপ্তানিতে কোনো ধরনের ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে কোনো সরকারি নিষেধাজ্ঞা নেই।

মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপালের ক্রেতারা এখন পেঁয়াজের জন্য নতুন বাজার হিসেবে মিশর ও চীনের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু এই দেশ দুটি পর্যাপ্ত পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারছে না।

কুয়ালালামপুরভিত্তিক আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব দেশ পেঁয়াজ উৎপাদন করে, তারাই এখন ঘাটতিতে। সুতরাং তারা আপনার চাহিদা মতো পেঁয়াজের যোগান দিতে পারবে না।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন