‘রোজ রাতে দু-তিন ঘরে আসে, যৌনদাসী হিসাবে আমাকে ব্যবহার করে’

পিএনএস ডেস্ক : মায়ানমার থেকে পালিয়েছে যে ছয় লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা, তারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে এলেও এদের মধ্যে অনেকের ভাগ্যেই সেই কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা জোটেনি। আশ্রয়হীন সহায়সম্বলহীন এসব রোহিঙ্গার মধ্যে অনেকেই যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এক রিপোর্টে এমনটাই দাবি করছে বিবিসি বাংলা। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে গত কয়েকদিন অনুসন্ধান চালায় বিবিসি। সেই অনুসন্ধানেই উঠে এসেছে বিস্ফোরক এই তথ্য।

বিবিসিতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত। দিনের বেলায় এখানে রয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা। কিন্তু রাতের বেলা এখানে দেখা যায় ভিন্ন এক দৃশ্য। আর সেটা খুব একটা সম্মানজনক নয়। এখানে রোহিঙ্গা তরুণীদের দেহ ব্যবসায় লাগানো হয়েছে। আর এটা করছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কয়েকজন। সঙ্গে রয়েছে কিছু স্থানীয় বাংলাদেশী। দেহব্যবসার জন্য তাদের বিক্রি করা হচ্ছে।

বিবিসি এমনই ১৭ বছর বয়সী এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলে। সে জানায়, তাকে একটি হোটেলে আটকে রেখে জোর করে দেহব্যবসা করাচ্ছে কয়েকজন রোহিঙ্গা। এখানে মেয়েটির অবস্থা যৌন দাসীর মতো। নিরাপত্তার স্বার্থে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়।

মেয়েটি জানাচ্ছে, “আমি এখানে কাপড়-চোপড় ধুই। তারা আমাকে দু’বেলা খেতে দেয়। আমি সারাদিন খাটি।” “রাতের বেলা ওরা আমাকে বিছানা থেকে টেনে তোলে। তাদের মুখ ঢাকা থাকে। আমি কান্নাকাটি করলে তারা আমাকে মারধর করে। ছুরি দিয়ে খুন করার ভয় দেখায়। আমার গলা টিপে ধরে।”

তরুণীটি বলছে, এজন্য তাকে কোন টাকাপয়সা দেওয়া হয় না। আরেকটি মেয়ে, যার বয়স ১৫ বছর, জানায় মায়ানমারের সেনাবাহিনী তার মা’কে গুলি করে হত্যা করার পর সে নৌকায় চড়ে পালিয়ে আসে। নৌকা ভাড়ার জন্য তার শেষ সম্বলটুকু দিয়ে দিতে হয়।

এরপর নৌকার মাঝি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে বিবিসিকে জানাচ্ছে, “আমার কাছ থেকে সোনা গয়না নিয়ে সে আমাকে নৌকায় তুলে নেয়। নৌকার ভেতরে ঢোকার পরই সে আমাকে ধর্ষণ করে।” “আমি বাধা দিলে সে বলে নৌকায় যেতে চাইলে তার কথা শুনতে হবে। আমি তখন খুব কাঁদছিলাম।”

বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর তার আশ্রয় হয় এক মহিলার ঘরে। তরুণীটি ভেবেছিল ওই মহিলা তাকে সত্যি সত্যি সাহায্য করছে। কিন্তু মহিলা এখন তাকে দিয়ে জোর করে দেহব্যবসা করাচ্ছে। প্রতি রাতে তার ঘরে ঢুকছে একাধিক পুরুষ। তরুণীটি বলছে, “তারা মহিলাকে টাকা দেয়।

তিনজন এলে আমাকে ২৫০ টাকা দেয়। দুজন এলে দেয় ২০০ টাকা। এসব আমার ভাল লাগে না। আমার খুব ব্যথা লাগে।” “দু’জন বা তিনজন যখন একসাথে আসে। আমি তখন আর সহ্য করতে পারি না। তখন তিনজনের মধ্যে থেকে একজন চলে যায়। তারা আমাকে ওষুধ দিয়ে বলে এটা খাও। ওষুধ খাওয়ার পর আমি আর ব্যথা টের পাই না।”

কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজন এই দুই তরুণীকে এখন সাহায্য সহযোগিতা করছে। কিন্তু তাদের মতো নিরাশ্রয়, সহায়হীন নারী এখানে রয়েছে অনেক। মায়ানমারের হিংসা ছেড়ে পালিয়ে এসব নারী এসে পড়েছে এক নতুন নরকের মধ্যে।

পিএনএস/জে এ /মোহন