পিএনএস ডেস্ক: উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সামরিক রেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ার নেতার সাথে বৈঠকে বসেছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১০টায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন এর সাথে বৈঠকে বসেন। খবর বিবিসি
এই বৈঠকের আগে কিম জং উন বলেছেন, দশ বছরের মধ্যে এই প্রথম দুই কোরিয়ার এই সম্মেলন নতুন ইতিহাস তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মুন জায়ে ইন বৈঠকে সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার ৬০ বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথম উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতা সামরিক রেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছেন।
কিম জং আন সকালে যখন দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছান, তখন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট তাকে স্বাগত জানান।
দুই নেতা সেখানে হাতে হাত মেলান।সে সময় দু'জনকেই বেশ আন্তরিক এবং হাসিমুখে দেখা যায়।
বৈঠকের স্থানে দুই নেতাই খোলামেলা আলোচনা করার কথা বলেছেন।
এদিকে, প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউজ বলেছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক এই সম্মেলনে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে।
দুই কোরিয়ার এই সম্মেলন এবং জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনা সামনে রেখে কিম জং উন পারমাণবিক পরীক্ষা এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে এক দশকের বেশি সময় পর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার ঐতিহাসিক বৈঠকে অংশ নিতে মিলিত হয়েছিলেন দুই দেশের শীর্ষ নেতা কিম জং উন ও মুন জায়ে ইন।
শুক্রবার সকালে সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। এসময় তাকে স্বাগত দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন।
দুই দেশের সীমান্তসংলগ্ন ‘পানমুনজম’-এর ‘পিস হাউসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিবিসি জানায়, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টায় করমর্দনে মিলিত হন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট কিম জং উন ও মুন জায়ে ইন। এ সময় কিমকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। পিস হাউজে অতিথি বইয়ে নিবন্ধন করতে কিমকে দেখা যায় বিবিসির সরাসরি এক প্রতিবেদনে। তিনি এখন পিস হাউজে অবস্থান করছেন।
উত্তর কোরীয় দলের সদস্য হিসেবে কিমের সাথে আছেন তার বোন কিম ইয়ো-জং। তাকেও করমর্দনের মাধ্যমে স্বাগত জানান দক্ষিণ কোরীয় নেতা ইন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন ইয়ো জং।
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেন তিনি। এ ছাড়া নামমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রধান কিম ইয়ং-ন্যাম এবং সামরিক কর্মকর্তাসহ কূটনীতিকরা উপস্থিত আছেন কিমের সাথে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আছে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল। এর মধ্যে অন্যতম থাকবেন প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র ও ইউনিফিকেশন (একত্রীকরণ) মন্ত্রী।
দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের কর্মসূচি নিয়ে এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইম জং সিয়ং সাংবাদিকদের জানান, আলোচনার প্রথম দফা শেষে উভয় নেতা আলাদাভাবে দুপুরের খাবার খাবেন। এ সময় উত্তর কোরীয় নেতা তার প্রতিনিধি দলসহ নিজ দেশের সীমান্তে ফিরে আসবেন।
বৈকালিক সেশনে কিম ও মুন ‘শান্তি ও প্রগতির’ প্রতীক হিসেবে একটি পাইন গাছের চারা রোপণ করবেন। যেখানে থাকবে দুই কোরিয়ার মাটি ও পানি। এরপর পরবর্তী সেশনের আলোচনার আগ পর্যন্ত দুই নেতা একত্রে পানমুনজান গ্রামে হাঁটবেন।
এরপর দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হবে এবং একটি চুক্তি ও যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে আলোচনার পর্ব শেষ হবে। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার দেওয়া এক নৈশভোজে অংশ নেবেন কিম জং উন। এরপর কিমের ফিরে আসার আগ পর্যন্ত দুই নেতা ‘স্প্রিং অব ওয়ান’ (এক বসন্ত) শীর্ষক একটি ভিডিও দেখবেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবারের আজকের এ বৈঠকের মাধ্যমে ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের অবসানের পর এ প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করলেন উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতা। আর দুই কোরিয়ার ভাগ হওয়ার পর উভয়পক্ষের মধ্যে এটি হবে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ২০০০ ও ২০০৭ সালে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়।
পিএনএস/আনোয়ার
কিম জং উনের সাথে ঐতিহাসিক বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়া
27-04-2018 10:04AM