ইসরাইলি শক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়লেন এই বীর

  15-05-2018 11:31PM

পিএনএস ডেস্ক:দখলদার ইসরাইলি শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই পা হারিয়েছিলেন ফিলিস্তিনি যুবক ফাদি আবু সালাহ। তবু থেমে যায়নি তার প্রতিবাদী চেতনা। হুইল চেয়ারে বসেই ইহুদি শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে শহীদ হয়ে গেলেন অকুতোভয় সালাহ। সোমবার জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর নিহত ৫৮ জন শহীদ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তিনিও একজন।

রয়টার্স জানায়, দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের কাছেই আরাবাহ নামক গ্রামের বাসিন্দা হচ্ছেন আবু সালাহ।

অল্প বয়সেই বিয়ে করা এ তরুণ একটা সময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিলেন বেশ কয়েক বছর। পরবর্তীতে এক মার্কিন সমঝোতায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্রচেষ্টায় ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পান আবু সালাহ। তার সাথে আরও ৮৯ জন ফিলিস্তিনি বেরিয়ে আসে দখলদারদের কারাগার থেকে।

২০০৮ সালে গাজায় তিন সপ্তাহ ব্যাপী ইসরাইলি সেনা ও হামাসের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধে প্রাণ হারায় বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি। পরবর্তীতে ছয় মাস ধরে চলা এক ইসরাইলে আগ্রাসানে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হন। সে সময় ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে পা হারান ফাদি আবু সালেহ। ডিসেম্বরে নিহত ইব্রাহিম আবু সুরিয়াও সে সময় পা হারিয়েছিলেন।

সুরিয়ার মতোই ইসরাইলি সেনার গুলির জবাবে গুলতি নিয়ে তার পাথর নিক্ষেপের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আবু সালাহর এ লড়াইয়ের কাহিনী। পরবর্তীতে নিহতের ছবিও আলোচনায় ওঠে আসে একইভাবে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদে দেখা যাচ্ছে, এ বছরেরও কয়েকমাস ধরে চলমান বিক্ষোভে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার নিয়ে অংশগ্রহণ করেন তিনি। পশ্চিম তীর থেকে এসে গাজাতেই আশ্রয় নেন তাঁবু গেড়ে। চার শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানেই অস্থায়ীভাবে সংসার গাড়েন তিনি।

ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর ও ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনি উচ্ছেদের নাকবা দিবস উপলক্ষে গত এক সপ্তাহ ধরে গাজায় জড়ো হতে থাকেন ফিলিস্তিনিরা।

১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইহুদিবাদী ইসরাইল সাড় সাত লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করে তা দখল করে নেয়। এদিনটি নাকবা দিবস হিসেবে গত ৭০ বছর ধরে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা।

সোমবার জড়ো হওয়া প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে সকাল থেকেই হুইল চেয়ারে করে নেমে পড়েন সালাহ। একটা পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনারা নির্বিচারে গুলি চালালে তিনিও প্রতিরোধ করা শুরু করেন। দুপুরের পরেই ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন এ লড়াকু ফিলিস্তিনি।

মঙ্গলবার আবু সালাহর শেষকৃত্যে শোকার্ত শত শত ফিলিস্তিনি অংশ নেয়। গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা নিন্দা জানিয়েছেন।

এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মঙ্গলবার গাজা হত্যাকাণ্ডের জেরে জরুরি বৈঠক শুরু হয়েছে।

জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশষ দূত নিকোলা ম্ল্যাদেনোভ গাজা উপত্যকায় অনিয়ন্ত্রিত সহিংসতা দ্রুত বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন