‘ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মৃত্যুর সংবাদ গুজব’

  25-05-2018 02:45AM

পিএনএস ডেস্ক: ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দি পাকিস্তানি বিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মৃত্যুর সংবাদ গুজব বলে প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হস্টন শহরে নিযুক্ত পাকিস্তানি কূটনীতিক আয়েশা ফারুকী।

'বিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকী কারাগারে মার্কিনিদের নির্যাতনে মারা গেছেন' এমন সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নিন্দাও প্রকাশ করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিযুক্ত পাকিস্তানি কূটনীতিক আয়েশা ফারুকী আজ এক বিবৃতির মাধ্যমে মৃত্যুর সংবাদ গুজব বলে সরাসরি প্রত্যাখান করেন।

তিনি তার বক্তব্যে জানান, গত ১৪ মাসে চতুর্থবারের মতো ড. আফিয়া সিদ্দিকীর সাথে টেক্সাসের কারাগারে আমার সরাসরি দেখা হয় এবং তার সাথে প্রায় ২ ঘন্টা যাবৎ কথা হয়।

মৃত্যুর সংবাদ গুজব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব তথ্য ভুয়া। যার কোন ভিত্তি নেই। এসবের কারণে তার পরিবার আরও ভেঙ্গে পড়বে।

পাশাপাশি ড. আফিয়া সিদ্দিকীর বোন ড. ফৌজিয়া জানান, কিছু সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোর এসব গুজব সংবাদে আমার পরিবার আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আমি বিনীতিভাবে অনুরোধ জানাবো এসব গুজব সংবাদ না ছড়ানোর জন্য।

তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান কূটনীতিকের সাথে যোগাযোগ রাখছি। এমন কিছু ঘটেনি এবং তার কাছে মৃত্যুর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সংবাদ কারাগার থেকে আসে নি বলে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

আফিয়ার সাথে গত দুই বছর ধরে তার পরিবারের কোন সাক্ষাৎ হয় না বলে ড, ফৌজিয়া ( আফিয়ার বোন) জানান, দেখভালের বিষয়টি সরকার থেকে করা হয় এবং কোনো সংবাদ আসলে সেটা সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে আমাদের জানানো হয়।

কে এই বিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকী?
ড. আফিয়া সিদ্দিকা যিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিখ্যাত একজন মুসলিম স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং একজন আলোচিত মহিলা। তিনি করাচীর সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে ১৯৭২ সালের ২ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন।

পিএইচডি ডিগ্রি ধারী এই মহিলাকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ২০০৩ সালে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আল কায়েদার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে পাকিস্তানের করাচির রাস্তা থেকে তার তিন সন্তানসহ গ্রেফতার করে।

পরে প্রচলিত আইনের আওতায় না এনে পাকিস্তানের কারাগারে গ্রেফতার না রেখেই আফগানিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে তাকে ৫ বছর বন্দি করে রাখা হয়। মার্কিন আদালত তাকে ৮৬ বছর কারাদন্ড দেয়। বন্দি অবস্তায় তার ওপর ব্যাপক অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ আছে।

জন্ম ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
জন্ম সূত্রে এই উচ্চ শিক্ষিত মহিলা পাকিস্তানের নাগরিক। শিক্ষা জীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রী ধারী (পিএইচডি)। স্বনামধন্য এই স্নায়ুবিজ্ঞানী শিক্ষা জীবনে অসামান্য মেধার পরিচয় দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে “নিউরোলজি” বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এছাড়াও সম্মান সূচক ও অন্যান্য ডিগ্রীর ১৪০ টিরও বেশি সার্টিফিকেট তিনি অর্জন করেন। তিনি কোরআনো হাফেয ছিলেন। শিক্ষা লাভের পর তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। সহকর্মীরা তাকে অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী হিসেবে পরিচয় দেন।

গ্রেফতারের অভিযোগ ও বন্দি জীবন
আল-কায়দার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় তিন সন্তান আহমদ, সুলাইমান ও মারিয়মকে সহ। আফগানিস্তানে বন্দি রাখা কালে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

তাকে মানসিক, যৌন ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হত এবং দিনের মধ্য কয়েকবার করে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বাগরাম কারাগার থেকে মুক্তি প্রাপ্ত বন্দিরা অভিযোগ করেছে “নির্যাতনের সময়ে আফিয়ার আত্মচিৎকার অন্য বন্দির পক্ষে সহ্য করাও কঠিন ছিলো।” ওই নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অন্য বন্দিরা অনশন পর্যন্ত করেছিলো।

চলমান নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলেন। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান দাবি করে বলেন “তার দু সন্তান ইতোমধ্যেই মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আফগান কারাগারে মারা গেছে।”

তিনি আরো বলেন, “পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা ড. আফিয়া সিদ্দিকাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।”

আদালতে মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ৩৮ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানীকে ৮৬ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অভিযোগ আছে যে তাকে ২০০৮ সালে আফগানিস্তানে অজানা রাসায়নিক পদার্থ ও হামলার পরিকল্পনার নোট সহ গ্রেফতার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ৭টা মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন যে গ্রেফতারের সময় তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মানচিত্র পাওয়া যায়।

ড. আফিয়াকে ৮৬ বছর কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের রাস্তায় বিক্ষোভ হয়। অনেকেই মনে করেন তিন সন্তানের জননী হার্ভার্ড পিএইচডিধারী আফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সন্তাসবিরোধী যুদ্ধের আর একটি নির্দোষ শিকার।

তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি আলোচিত হয় কারাগার থেকে তার বহুল আলোচিত চিঠিটি লেখার পর। চিঠিটিতে আফিয়া দাবি করেন তার ওপর শারীরিক, পাশবিক নির্যাতনের পাশাপাশি একের পর এক ধর্ষণ করা হয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন