ব্রিটেনের সঙ্গে ইসলামের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে

  27-05-2018 11:32AM


পিএনএস ডেস্ক: ব্রিটেনের সঙ্গে ইসলামের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে এবং তা শত শত বছর ধরে অব্যাহতভাবে কাজ করেছে। ইসলামের সঙ্গে ব্রিটেনের বন্ধুত্ব অনন্য।

স্পেনের আন্দালুসিয়ায় ৭০০ বছর ধরে মুসলিম সাম্রাজ্য ছিল। জার্মান, পোল এবং অস্ট্রীয়রা ১৫২৯ সালে তুর্কি শাসক কর্তৃক ভিয়েনা অবরোধ প্রত্যক্ষ করেছে। ফরাসিরা ‘পইটিয়ার’ যুদ্ধ দেখেছে। কেবল ব্রিটেনই ক্যাথলিক ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বানিজ্য, আইনের শাসন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং ধারণা ও সংস্কৃতির বিনিময়ের উপর মুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এখন এই বন্ধুত্ব ভুলে যাওয়া হবে একটি ভয়ানক লজ্জা।

এই সম্পর্ক গড়ে তোলার পিছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকার রেখেছেন রানি প্রথম এলিজাবেথ। সংস্কারের সময়ে ইংল্যান্ড ইউরোপের ক্যাথলিক সাম্রাজ্য দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং ১৫৭০ সালে এলিজাবেথকে পোপ পেস ভি পায়াস কর্তৃক গির্জা থেকে বহিষ্কার করা করা হয়েছিল। প্রোটেস্ট্যান্ট রানি ইউরোপীয় হুমকির কাছে নতি স্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এটি তাকে অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ করে। তৎকালীন ৪০০ বছরের পুরনো অটোমান সাম্রাজ্য বলকান, উত্তর আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রাধান্য বিস্তার করতে পেরেছিল।

অটোমান সুলতান তৃতীয় মুরাদ তার প্রজাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রবর্তনের জন্য রানি এলিজাবেথকে লিখেছিলেন যে, ‘যদি তার (রানির) এজেন্ট ও বণিকরা সমুদ্র পথে তাদের জাহাজের মাধ্যমে আসে, তবে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না’। রাজকীয় এই আদেশটি অটোমানদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে এবং বন্দরে ব্রিটিশ বাণিজ্যকে সহায়তা করেছিল।

ব্রিটিশ জাহাজ ও বাণিজ্যিক দূতদের অটোমান সুরক্ষা ইউরোপীয় ক্ষমতাধরদের বয়কট সত্ত্বেও ইংল্যান্ডকে উন্নত করতে সাহায্য করেছিল। ইংল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্টিজমের একত্রিকরণ, ফ্রি ট্রেড এবং ফ্রি অনুসন্ধান, যা অটোমান-এলিজাবেথ চুক্তি করতে সহায়তা করেছিল। রানির রাজত্বের শেষের দিকে ইংরেজ ব্যবসায়ী, কূটনীতিক, নাবিক এবং অন্যরা ইস্তাম্বুল, দামেস্ক, ফাল্লুজা, আলেপ্পো, রাকা, আলজিয়ার্স, বাগদাদ ও ত্রিপোলির মতো জায়গাগুলিতে বসবাস বা ভ্রমণ করতেন।

ইংল্যান্ড ছেড়ে অটোমান সাম্রাজ্যে পাড়ি দেয়া জেরি ব্রাউনের মতো অনেক ঐতিহাসিকদের লেখায় সমৃদ্ধ টার্কিস কার্পেট, রেশম এবং সূচিকর্মের বর্ণনা পাওয়া যায়। ১৬শ’ শতাব্দীর ইংরেজি ভাষায় অনেক আরবি শব্দ জায়গা করে নেয়। সুখর থেকে ‘সুগার’, কারমিজ থেকে ‘ক্রিমসন’, টলব্যান্ড থেকে ‘টিউলিপ’ ইত্যাদি।

ইসলাম ও মুসলিমদের সঙ্গে ইংলিশদের মোহ রানি এলিজাবেথ যুগের পরেও শেষ হয়নি। ১৬৫০ সালে গ্রিক-তুর্কি ভাষায় ‘পাস্কা রোজে’ নামে লন্ডনে প্রথম কফি হাউজ উদ্বোধন করা হয়েছিল। এটি ইয়েমেনের ধার্মিক মুসলিমরা চালু করেছিল। তারা অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে কফি পানকে জনপ্রিয় করছিল, যাতে ঈমানদাররা রাতের বেলায় আল্লাহর উপাসনার জন্য জেগে থাকতে পারেন। তুর্কি ভাষায় ‘কাহেভ’ ইংরেজিতে ‘কফি’ শব্দে পরিচিত হয়ে ওঠে।

ভিক্টোরিয়ান যুগে হাজার হাজার মুসলমান ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করেছিল। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় অটোমান মুসলিমরা ব্রিটিশদের সঙ্গে রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল। অটোমান রাজধানী কনস্টান্টিনোপলেই ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল তার নার্সিং শিল্পের উদ্ভাবন করেছিলেন। রানি ভিক্টোরিয়া সরকার অটোমান সুলতানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি তার (সুলতান) থেকে অনেক বেশি মুসলিমদের একজন সম্রাজ্ঞী। ১৮৮২ সালে সারে কাউন্টির উইকিংয়ে ব্রিটেনের প্রথম মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।

সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- মুন্সী আব্দুল করিমের সঙ্গে রানি ভিক্টোরিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা এবং ঘনিষ্ঠতা মুসলিমদের ব্রিটিশ সমাজের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে গিয়েছিল। রাজপ্রাসাদের অংশ হিসাবে, এই ধার্মিক ভারতীয় রানিকে উর্দু ভাষা, রুমির কবিতা শেখান এবং তাকে আধ্যাত্মিক সান্ত্বনা প্রদান করেন। ২০১৭ সালে নির্মিত ‘ভিক্টোরিয়া এন্ড আব্দুল’ চলচ্চিত্রে এই সম্পর্কের গভীরতা ফুটে ওঠেছে।

প্রায়শই আমরাও ভুলে যাচ্ছি যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অর্ধ মিলিয়ন মুসলমান ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল এবং তাদের একটি বিরাট অংশ যুদ্ধে আত্মহতি দিয়েছিল। এই প্রজন্ম চূড়ান্ত আত্মত্যাগের এই দামী মূল্যবোধকে ধারণ করে।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে প্রায় চার মিলিয়ন মুসলমান ব্রিটেনকে নিজেদের বাড়ি বানিয়েছেন। উপাসনা করার স্বাধীনতা অন্য কোন দেশের চেয়ে ব্রিটেনে এখনো অতুলনীয়। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ‘স্পেকটেটর’ অবলম্বনে

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন