বিশ্বকাপের সাথে কূটনৈতিক গেমে পুতিন

  21-06-2018 11:01AM

পিএনএস ডেস্ক : চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের মহাযুদ্ধ। আর তার ভিতর দিয়ে কূটনৈতিক অনেক অগ্রগতি সাধন করে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার হয়তো পশ্চিমাদের সঙ্গে সংঘাত লেগেই আছে। কিন্তু বাকি বিশ্ব?

হ্যাঁ, বাকি বিশ্বের নেতারা কিন্তু রাশিয়া যাচ্ছেন বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে। আর সেই সুবাদে পুতিনের পাশাপাশি বসছেন তারা। করমর্দন করছেন।

এই ফাঁকে কূটনীতির আলোচনাটাও হয়তো সেরে নিচ্ছেন। ফলে বিশ্বকাপের এই সুযোগকে রাজনৈতিক একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন পুতিন। কূটনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট স্কোর করে নিচ্ছেন। বিশ্ব নেতারা এখন মস্কোমুখী। এর মধ্য দিয়ে তারা পুতিনের ভাবমূূর্তিকে সমুন্নত করছেন।

ভূরাজনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি রাশিয়াকে। বিশ্বকাপের সূচনায় সৌদি আরবকে সামনে পায় রাশিয়া। সেই ম্যাচ একটি কূটনৈতিক পয়েন্ট হয়ে ওঠে। ১৪ই জুনের ওই ম্যাচের আগে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে অভ্যর্থনা জানান পুতিন।

ওই ম্যাচে সৌদি আরব ৫-০ গোলে রাশিয়ার কাছে হেরে যায়। কিন্তু ক্রেমলিনের নেতা পুতিন ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স সালমান তার সফরকে অন্যখাতে ব্যবহার করেন। বৈশ্বিক তেলের মূল্য নিয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধিকে তারা গুরুত্ব দেন এ সময়ে।

এ সফরকে এভাবেই ব্যবহার করেন পুতিন। এ সপ্তাহেও পুতিনের বিশ্বকাপ চার্ম অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়া সফর করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। তার উদ্দেশ্য ছিল পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত ও পর্তুগাল-মরক্কোর মধ্যে ফুটবল ম্যাচ উপভোগ করা।

বৃহস্পতিবার তিন দিনের জন্য রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। তাকে স্বাগত জানাবেন পুতিন। এর আগে ১২ই জুন সিঙ্গাপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে বৈঠকের কোনো বার্তা কি পুতিনকে দেবেন তিনি!

এ নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। এ সফরে রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমা’য় ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে মুন জায়ে-ইনের। সেখান থেকে ২৩ শে জুন অনুষ্ঠেয় কোরিয়া-মেক্সিকোর মধ্যকার খেলা দেখতে তার যাওয়ার কথা রয়েছে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তাভে।

সোচির পর অনেকটা সময় গেছে
২০১৪ সালে সোচিতে শীতকালীন অলিম্পিক হয়ে গেছে। তার মধ্য দিয়ে পুতিন বিশ্ব মঞ্চে একবার আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু এবারের সঙ্গে তার গুরুত্বর পার্থক্য রয়েছে। সোচি অলিম্পিকের সময় রাশিয়া ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি ‘পেইড-আপ’ সদস্য।

কিন্তু সেই ওই অনুষ্ঠানের যবনিকাপাত হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তার ইতি ঘটে গেছে, যখন রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের ক্রাইমিয়ার সরকারি ভবনগুলো দখল করে নেয়। ইউক্রেন থেকে তারা ক্রাইমিয়াকে কেড়ে নিয়ে রাশিয়ার পরিধিকে বিস্তৃত করতে চেষ্টা করে।

ওই কর্মকা-ের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ দেয় পশ্চিমারা। তখন থেকেই পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্থান-পতন চলছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ভূপাতিত হয় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে বৃটেনে রাশিয়ার সাবেক গুপ্তচার সের্গেই স্ক্রিপল ও তার মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপলের ওপরে রাশিয়া নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করেছে। এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে মস্কো ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিষাক্ত এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এক পর্যায়ে বিশ্বকাপ ফুটবল বর্জনও করতে পারে কোনো কোনো দেশ এমনটা বলা হয়। সিরিয়া ও পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাত আছে। এসব ঘটনার জন্য পশ্চিমাদের সঙ্গে পুতিনের রাশিয়ার সম্পর্ক মোটেও ভাল যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে এ কারণেই ‘পুতিনের বিশ্বকাপ’ থেকে সন্দেহজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের নেতারা অনুপস্থিত রয়েছেন।

তাই বলে কিন্তু এসব দেশের পর্যটকদেরকে রাশিয়া বিমুখ করা যায় নি। উল্টো এটা সত্য যে, রাশিয়ার বাইরে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ তথ্য ফিফার। রাশিয়ার রাস্তায় রাস্তায়, মস্কোর গলিতে গলিতে বিদেশী পর্যবেক্ষক। তারা আনন্দ করছেন। পান করছেন। উল্লাস করছেন।

এসবই রাশিয়া সম্পর্কে এক দৃশ্যমান বার্তা পৌঁছে দেয়। তা হলো উন্মুক্ত বাহুতে বিশ্বকে স্বাগত জানায় রাশিয়া। রাশিয়া এখন আর নিঃসঙ্গ নয়।
আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও পুতিনের সুবিধা বিশ্বকাপ উপলক্ষে পুতিনের চারদিকে এখন তোষামোদকারী বা ভক্তদের ভিড়। এমনকি বিশ্বনেতারা তার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়।

তিনি আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকটা সুবিধা পাচ্ছেন। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে প্রধানমন্ত্রী দমিত্রি মেদভেদেভ ঘোষণা দিয়েছেন। কি ঘোষণা দিয়েছেন? হ্যাঁ, তিনি রাশিয়ার পেনশন সিস্টেমে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নারী কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার বয়স ৫৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৩ করার কথা বলেছেন।

আর পুরুষদের জন্য ৬০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার কথা বলেছেন। এটি একটি ভীষণ বিতর্কিত উদ্যোগ। এ ঘটনা বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে একটি নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং করবেন। কিন্তু ঘোষণাটি এমন সময়ে দেয়া হয়েছে যখন বিশ্বের কয়েক লাখ পর্যটক তার দেশে।

এ সময়ে তিনি যদি আন্দোলনে যান তাহলে তাতে দেশের সুনাম নষ্ট হবে। তারপরও তিনি প্রস্তাবিত পেনশন বিষয়ক সংস্কারের বিরুদ্ধে আগামী ১লা জুলাই রাশিয়ার ২০টি শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ আহ্বান করেছেন। ইন্সটাগ্রামে তিনি লিখেছেন, আসুন আমরা সততার পরিচয় দিই। পুতিন ও মেদভেদের উদ্যোগে অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানো একটি বাস্তব অপরাধ। লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে এটা একটা ডাকাতির সমতুল্য।

আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানানো। সবার প্রতি আহ্বান জানাবো সেই প্রতিবাদে সামিল হতে। তবে নাভালনি বিশ্বকাপের বিষয়টি মাথায় রেখেছেন। বলেছেন, যে শহরগুলোতে তারা বিক্ষোভ ডাক দিয়েছেন সেখানে বিশ্বকাপের কোনো আসর বসছে না।

পিএনএস/জে এ /

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন