বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে তুরুস্কের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি

  13-07-2018 11:25AM


পিএনএস ডেস্ক: তুরুস্কের ইস্তাম্বুলে কৃষ্ণ সাগরের তীরে দুর্গের মত করে এমন সিম্বল দিয়ে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরি করা হচ্ছে যা তুর্কিদের খারাপ অধ্যায়কে ঢেকে দেয়ার জন্য এবং তুরস্কের অটোমান রাজকীয় ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের ইচ্ছাকে প্রকাশ করে।

ধারণা করা হচ্ছে প্রকল্পটির ব্যয় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি হবে এবং এটার জন্য ৬ টি রানওয়ে নির্মাণ করা হবে যা প্রায় ম্যানহাটন শহরের মত বড় হবে। এক দশকের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আশা করা হচ্ছে তখন এটি বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষের যাতায়াতের একটি ক্ষেত্রে পরিণত হবে যা এই গ্রহের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসাবে সব প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলে দিবে।

এতদসত্ত্বেও বিমানবন্দরটি তুরুস্কের আধুনিক দিনে রুপায়িত হওয়ার একটি মশলাদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি গাণিতিক মারপেঁচ ও অসামরিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার প্রতি তাদের অচেতন অবজ্ঞার প্রকাশ। একইসঙ্গে তারা জাতিকে ফেলে দিচ্ছে একটি আর্থিক সঙ্কটের উঠানামার ঝুঁকির মধ্যে।

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উদ্বেগের বিশ্বে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের তুমুল যুদ্ধে তেলের উচ্চ মূল্য তুরুস্ক হয়তোবা খুব তাড়াতাড়িই সতর্কতার কারণ হতে পারে। দেশটির রাষ্ট্রপতি যিনি একটানা ১৫ বৎসর জাতীয় জীবনে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়ে সোমবার শপথ নেন এবং অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী হন।তিনি তার প্রভাব দ্বারা অসামজ্জস্যপূর্ণ ঋণের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বিপদজ্জনক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন।তাকে সীমিত অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে নিরীক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিনিযোগকারীদের মধ্যে সুস্পষ্ট একটি অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে- কারণ গৃহস্থালী দ্রব্যাদি এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে ফলে তুরুস্কের মুদ্রার মান (লিরা) এবছর এক-পঞ্চমাংশ নিম্মগামী হয়।এর মান সোমবার আরো নিম্মগামী হয় যখন এরদোগান তার জামাতাকে অর্থনৈতিক প্রধানের দায়িত্ব দেন। ফলে বাজারে এমন একটি ভাব লক্ষ্য করা গেছে যে, তিনি খুব তাড়াতাড়ি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ দায়িত্বশীলতার সাথে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন।

বিমানবন্দরটির ১ম ধাপ অক্টোবরে উন্মুক্ত করা হবে এটা জনসাধারণের মনে স্বস্তির কারণ হবে যাদের টাকা এরদোগানের খুব কাছের নির্মাণ সংস্থাগুলির নিকট চলে গেছে।সরকার তাদের যে কোনো ক্ষতির বিরুদ্ধে নিশ্চয়তা প্রাদান করেছে।অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে, বিমানবন্দরটি যাত্রী প্রবাহের চাইতেও মহৎ হিসেবে প্রমাণিত হবে যদি জনসাধারণের অর্থের ব্যয় হ্রাস পায়।

এই নতুন বিমানবন্দরের জন্য যেসব গ্রামবাসী ভূমি দিয়েছে তাদের কাছে এই প্রকল্পটি একটি মন্দ ভয়ের স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে উঠেছে। বোরা দিলার নামে একজন কৃষক যার ভূমি প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তিনি জানান- ‘এরদোগান তার নিজের লোকদেরকেই দেখছেন’।তিনি আরো যোগ করেন ‘আমাদের আর কিছুই হারানোর নেই’।

দুর্যোগের আশঙ্কা হয়ত জায়গা করে নিতে পারে তাদের অর্থনীতিতে যা পৃথিবীর অন্যতম দ্রুততম ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির একটি যেখানে গত বছর প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছিল ৭.৪ শতাংশ হারে।তবে এই প্রবৃদ্ধি ব্যয় হয়েছিল অস্থিতিশীল ঋণের পেছনে, সরকারী-বেসরকারী উভয় খাতে।

সরকার বিশাল বিমান বন্দরের মত অবকাঠামোগত প্রকল্পে সহয়তা করেছে এবং ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে কৃষ্ণ সাগর ও মারমারা সাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ২৮ মাইল দীর্ঘ খাল খনন করেছে। এসব অধিকাংশই বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নেয়া যার মানে লিরার (তুরুষ্কের মুদ্রা) মান অনুপাতে তাদের বোঝা আরো বেড়েছে।

অধিকাংশ তুর্কি কোম্পানি এখন ব্যাংক এবং ঋণদাতাদের বোঝাতে চেষ্টা করছে যাতে তারা তাদের সাহায্য বাড়ায় কারণ তাদের মনে দেওলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এই ভয়ে যে- করদাতা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অজ্ঞাত ক্ষতি হতে পারে। এপ্রিলের শেষে তুর্কি কোম্পানিগুলো ২৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক ঋণ নেয় যা সমগ্র তুরুস্কের অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি।

‘এটি একটি বিশাল সংখ্যা’ বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ সেলভা ডেমিরালফ, যিনি ওয়াশিংটনের ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাংকে কাজ করেছিলেন, বর্তমানে তিনি ইস্তাম্বুলের KOC বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ দান করেন।‘সরকার তাদের আরো বেশী ঋন নিতে উৎসাহিত করছে’ বলে তিনি যোগ করেন।

বর্তমান ঋণের উপর স্থিতিশীল থাকতে হলে প্রয়োজন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তুরুস্ককে আরো তহবিল দেয়া- যেটি একটি ক্রমবর্ধমান সন্দেহজনক প্রস্তাব হবে।

তুরুস্ক তাদের অর্থ সমন্বয় করতে পারে চলমান সুদের হারের উত্তোলন করার মাধ্যমে যেটা ইতিমধ্যে ১৭.৭৫ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে এবং আবাসন ও নির্মাণ শিল্পে হতাশা বয়ে আনবে।

অথবা তুরুস্ক তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আংশিক অবিরত রাখতে পারে এটা দেখতে দেখতে যে, তাদের মুদ্রাস্ফীতি পাহডসম হবে ফলে লিরার (তুরুষ্কের মুদ্রা) মান ডুবতে থাকবে। এটা হয়তবা দেওলিয়া হয়ে যাওয়া কর্পোরেশনগুলোর জন্য তিরষ্কার করার একটি পথ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে তাদের উদ্ধার করার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে পারে। যদি এরকম হয় তবে এটা নিশ্চিতভাবেই একটি বেদনাদায়ক একটি খরচ হবে।

মেরি ওভেনস থমসেন, যিনি জেনেভা ভিত্তিক Indosuzez Wealth Management এর বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বলেন- ‘তুরুস্ক হতে পারে পরবর্তী একটি দেশ যেটি বিচ্ছিন্ন হতে চলছে’, তিনি আরো বলেন, ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার জন্য এর সব রকম উপাদানই বিদ্যমান’।

তুরুস্কে কিছু সমস্যার কারণে সামগ্রিকভাবে উদীয়মান বৈরী বাজারগুলো ক্ষতির সুম্মুখীন করবে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধি করেছে, ফলে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলারের সাথে প্রতিযোগিতার জন্য উন্নয়নশীল দেশ যেমন- আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো এবং তুরুস্ক থেকে তাদের অর্থ উঠিয়ে নিতে পারে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুদ্রার জন্য এটি এক বিরাট ধাক্কা।

কিন্তু তুরুস্ক দাঁড়িয়ে আছে একটি অপ্রত্যাশিত স্বতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর যেটা এক দিয়েছে গোঁড়ামি মুক্ত স্থিতিশীল অর্থনীতি। দুই বছর পূর্বে তাকে (এরদেগান) ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য ব্যর্থ অভ্যুথানের পর থেকে, এরদোগান ক্রমাগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ক্রেডিট নোট খুলেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইতেছে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিখিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে এবং সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে লিরার (তুরুস্কের মুদ্রা) মান সমন্বয় করতে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যাতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি অবশ্য রাষ্ট্রপতির উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে পরিণত হয়েছে।

এরদোগান দাবি করেছেন, মুদ্রাস্ফীতি প্রকৃতপক্ষে উচ্চ সুদের হারের ফলাফল, এটা এমনভাবে বলা যাবে না যে, কেমো থেরাপি ক্যান্সারের কারণ। নির্বাচনের পূর্বে তিনি তুরুস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ও উচ্চ সুদের হার কমানোর হুমকি দিয়েছিলেন। বিনিয়োগকারীরা এটাকে পলানোর পথ হিসাবে নেয় এবং লিরার মানকে নিচের দিকে ঠেলে দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার আরো বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে এর সততা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘সবাই এখন সঙ্কটে আছে’ কথাগুলো বলেছিলেন কান ওজ নামক ইস্তাম্বুলের একটি বই ও ম্যাগাজিন প্রকাশনার মালিক। তিনি আরো বলেন, ‘এটি আমাদের চারাপাশেই রয়েছে।যে কেউই যার নুন্যতম বুদ্ধি ও অর্থীতির সামান্য জ্ঞান রয়েছে সে জানে। কিন্তু সরকার এটা গোপন করতেছে’।

কান ওজ এর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের লাভ একেবারেই কমে গেছে, কারণ লিরার মান কমে গেছে এটা কোম্পানীটিকে বাধ্য করছে আরো অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে ফিনল্যান্ড থেকে কাগজ এবং জার্মানি থেকে আঠা কিনতে। ওজ বলেন ‘আমাদের ম্যাগাজিনের কাটতি নাটকীয় ভাবে কমে গেছে’।

ইস্তাম্বুলের অভ্যন্তরের প্রধান বাজারে গয়না, কার্পেট এবং প্রাচীন জিনিসপত্র বিক্রি করে এমন ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন যে, তাদেরকে অবশ্যই মার্কিন ডলার বা ইউরোতে তাদের দোকান ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু তারা পণ্য বিক্রি করেন লিরার বিনিময়ে। তাদের দোকান ভাড়া বেড়ে গেছে বিশেষত সন্ত্রাসী হামলার তৎপরতার পর থেকে পর্যটক আসা কমে গেছে ফলে পণ্য বিক্রি একদম কমে গেছে।

‘তুর্কি লিরা গরম আবহাওয়ায় আইস-ক্রিমের মত’, কথা গুলো বলেছেন জেকি উকারদাস নামে বাজারের ভেতরের একজন বিক্রেতা যিনি কাশ্মীরী, পাশমিনা এবং রেশম স্কারভ বিক্রি করেন। তিনে আরো যোগ করেন-‘আপনি দ্বিতীয়বার এটি গ্রহণ করবেন, এটি গলতে শুরু করবে’। যেসব কোম্পানী বিদেশি মুদ্রায় ঋন নিয়েছে এখানে তারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

চার বছর পূর্বে মাক্রো নামে একটি জাতীয় চেইন সুপারমার্কেট খুবই দ্রুত সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। তারা ১৮ শতাংশ সুদের হারের বিনিময়ে সাতটি তুর্কি ব্যাংক থেকে ২০০ মিলিয়ন লিরা ঋন নিয়েছিল (যার মুল্য মার্কিন ডলারে ৮৮ মিলিয়ন)। এটি তার ঋণ বোঝা সীমিত করার জন্য মার্কিন মুদ্রায় আরো ১২ মিলিয়ন ঋণ নেয় এবং শুধুমাত্র ৫ শতাংশ সুদের হার লাভ করে।

কোম্পানিটি নতুন স্টাের চালু করে এবং নতুন কর্মী নিয়োগ শুরু করে। কিন্তু ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তুর্কি লিরার মান এক-তৃতীয়াংশ কমে যায় এবং তুর্কি সুদের হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কোম্পানীটির মাসিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ মিলিয়ন লিরা হয়েছিল। একই সময়ে মাক্রো’র লাভ কমতে থাকে এবং তাদের মুদি মালের স্টোরে হ্রাসকৃত মূল্যে পণ্য বিক্রি করে।

এই বছর ঋন পরিশোধের পরিমাণ প্রতি মাসে প্রায় ৯ মিলিয়ন লিরা সমপর্যায়ে পৌঁছায় ফলে মাক্রো আদালতে ঋণ পুনর্বিন্যাসের জন্য মামলা দায়ের করে। সম্প্রতি এতি একটি চুক্তিতে পৌঁছায় যে, সরবরাহকারীদের নিকট থেকে ঋণ মওকুফ পেয়ে এটি তার আবাসন সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবে।

কিভাবে ব্যাবসা চালিয়ে যেতে হবে তা নির্ভর করে আগের বার কি শিখেছে তার উপর, তুরুস্ক এখন এরকমই চ্যালেঞ্চ এর সম্মুখীন।

২০০১ সালে তুরুস্ককে এমন গুরুতর সঙ্কট মোকাবেলা করতে হয়েছিল যে, এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে সাহায্য কামনা করেছিল, ভুরাল একে নামক ব্যাবসায়ী তার ইন্টারসিটি নামক গাড়ি ভাড়া দেওয়ার কোম্পানি হারানোর মত পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। ভুরাল একে, ইন্টারসিটির প্রতিষ্ঠাতা এবং এর প্রধান নির্বাহীকে ইউরোপীয়ান গাড়ির জন্য ইউরোপীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছিল যেখানে তারা তাদের লভাংশ পেয়েছিল তুর্কি মুদ্রা লিরাতে। যখন লিরার মূল্য কমতে থাকে এটি প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার মত পরিস্থিতিতে পড়ে।

এই শিক্ষা তাদেরকে হতভম্ভ করে দেয়। সম্প্রতিক বছরগুলোতে মি. একে ইন্টারসিটি কোম্পানীর পরিধি বাড়ান ৫০,০০০/- হাজার গাড়ির মাধ্যমে, তাকে ইউরোতে নেয় ঋণের সাথে দামের সমন্বয় করতে গিয়ে নতুন মডেল কেনার জন্য হিমশিম খেতে হয়েছিল।

তার প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকেও তার মতোই মার্কিন ডলার এবং ইউরোতে ঋণ নিতে হয়েছিল কিন্তু লাভ তুলতে হবে লিরাতে। তিনি জানান অনেকেই হারিয়ে যাওয়ার পথে, তিনি আশা করেছিলেন যে, তিনি তাদের কিনতে পারবেন এবং তাদের অনিবার্য ভাগ্যের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করবেন।

মি. একে তার বিমানবন্দরের লাউঞ্জ আকারের অফিসে যেখানে জানালাসহ সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে খেলনা গাড়িতে, কেউ তার আশেপাশের বিশৃঙ্খলাকে দূর করে দিবে এই পরিতৃপ্তি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন।

এরপরও তার কোম্পানি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েনি। ধার দেয়া সম্পন্ন হলে তার লভ্যাংশের ৬০ শতাংশ ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি থেকে আসে। এরকম মুদ্রাস্ফীতির সময় এবং বিরামহীন দুশ্চিন্তাতে একে কে তার গাড়িতে ছাড় দিতে হবে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য। কেননা, গত বছর ইন্টারসিটি তাদের টাকা হারিয়েছিল।

বিমানবন্দরটির কাছাকাছি ইয়েনিকোই নামক গ্রামটিতে একধরনের সঙ্কটের অনুভূতি তৈরী হয়েছে তখন থেকেই যখন থেকে এরদোগান এটিকে বিশ্বের অন্যতম আকাশযাত্রার কেন্দ্র করার প্রকল্প হাতে নেন এবং একে লন্ডন ও দুবাই এর মত শহর করার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন।

এটা অবশ্য পাগলামী নয়, ইস্তাম্বুল শহরটি ১৫ মিলিয়ন মানুষের এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে যাতায়াতের অন্যতম পথ। এর প্রাথমিক আতাতুর্ক বিমানবন্দরটি এত সংখ্যক লোকজনের জন্য প্রয়োজন মেটাতে পারে না।

পৃথিবী পরিবর্তনকারীরা এখন কৃষ্ণ সাগরের পাশের ফ্যাকাশে মাটি ছিঁড়ে এত বড় বিমানবন্দরটি নির্মাণ করবে। ডাইলার এবং অন্য গ্রামবাসীরা এখন পথে বসে গেছেন।

ডাইলারের দাদা এই ভূমিতে চাষাবাদ করেছিলেন। তার পিতাও তাই এবং তিনিও শস্য, তরমুজ এবং টমেটো চাষাবাদ করতেছিলেন এতে উদীয়মান গরুটিকে প্রতিস্থাপন করার পূর্ব প্রর্যন্ত।

বিমানবন্দরটি নির্মাণের জন্য রাষ্ট্র তাদের চারণ ভূমি অধিগ্রহণ করেছে তাদেরকে পরিমিত ক্ষতিপূরন দেয়ার মাধ্যমে। সাম্প্রতিক এক বিকেলে ডাইলার অপেক্ষা করেন একটি ট্রাক আসার জন্য যার জন্য তিনি তার ২৮টি গরুকে একজন ব্যাবসায়ীর নিকট বিক্রি করেছিলেন।

মুদ্রাস্ফীতি তার জীবিকাকে নির্মূল করেছে। গ্রামের বাজারে খাদ্যের দাম বেড়েছে। রোমানীয়া ও বুলগেরীয়া থেকে আমদানীকৃত খড়ের দাম পূর্বের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে যা কয়েক মাস আগেও খুব কম মূল্যে পাওয়া যেত। বর্লির দামও বেড়েছে সাথে তার ট্রাকটরের জ্বালানির দামও।

‘আমি আর কোনো অর্থ আয় করতে পারবো না’ ডাইলার জানান, সাথে আরোও জানান ‘খরচ খুব বেশী, চাষাবাদ মৃতপ্রায়’।

তার কোনো আয় নেই, তিনি খুব দুশ্চিন্তায় আছেন এই ভেবে যে তিনি কিভাবে তার স্ত্রী এবং দুই বৎসর বয়সী সন্তানের ভরণ পোষণ দিবেন।

তিনি নতুন বিমানবন্দরটিতে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে যোগদানের জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু এটি বাতিল হয়ে যায় কারণ তিনি মাধ্যমিক স্কুল শেষ করেন নি। তিনি পরিচ্ছন্নকারক এর চাকরির আবেদন করেছিলেন কিন্তু এখনো কিছুই জানানো হয়নি। ডাইলার বলেন ‘সৃষ্টিকর্তা আমাদের রক্ষা করবেন’, ‘আমি বেকার। আমি জানিনা আমাকে কী করতে হবে।’ সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন