ইন্দোনেশিয়ার আসন্ন গণভোট নিয়ে নানা মেরুকরণ

  16-08-2018 11:38AM


পিএনএস ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন কিনা এ বিষয়ে আইনগত বৈধতা নিয়ে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে দেশটির ইসলামিক ভাবাপন্নদের ভোট নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে। যেখানে দেশটি ২২৮ মিলিয়নেরও অধিক মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

কিন্তু সমালোচনা সত্বেও ২০১৯ সালের নির্বাচনের জন্য তার রানিংমেট হিসাবে বৃদ্ধ মারুফ আমিনকে পরিচিত করিয়ে দেয়াতে এটা বোঝা যাচ্ছে যে তার জন্য প্রেসিডেন্ট পদে টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অন্যদিকে ১৬ মাস আগে তার রাজনৈতিক মিত্র হিসাবে পরিচিত সংখ্যালঘু খ্রিস্টান এবং চীনা বংশোদ্ভুত জাকার্তার গভর্ণর বাসুকী পুর্ণামাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং এতে করে বাসুকী পূর্ণামার সাথে তার মিত্রতা ভেঙ্গে পড়েছে।

যদিও কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলা যায় যে, ইন্দোনেশিয়া এখনো একজন অমুসলিম প্রেসিডেন্টের জন্য প্রস্তুত নয় তার পরও বেশির ভাগ ভোটার দেশটির নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ধর্মকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না বলে জানা গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির বিভিন্ন নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো প্রেসিডেন্টের ধর্ম অবমাননা সম্পর্কীয় অনেক প্রচারণা চালায়, তবে তাদের এমন প্রচারণা কোনো কাজে দেয়নি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট উইডো ৬১ বছর বয়সী প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মাহফুদ মাহমুদ্দিনের বদলে ৭৫ বয়সী আমিন মারুফকে তার রানিংমেট হিসাবে নিয়ে কোনো ধরনের সুযোগ নিতে চাননি।

তবে তিনি একজন ধর্মীয় ব্যক্তিকে তার রানিংমেট হিসাবে নেওয়াতে দেশটির ধর্ম নিরপেক্ষ নেতারা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হিসাবে দেখছেন।

যদিও আমিন একজন ইসলামী ব্যাংকিং এবং ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এর পরও তিনি তেমন একটা ব্যবসায়ী মনা নয় এবং এই বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে তাকে চায়ের কাপে চা ঢালা ছাড়া আর কিছু করতে হবে না বলে মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ান উলামা কাউন্সিলের(এমইউআই) চেয়ারম্যনের মতে আমিন মারুফ ধর্মীয় দিক থেকে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মাহফুদের চাইতেও বেশী যোগ্য।

‘এটা একটা দিক যে, প্রেসিডেন্ট মনে করছেন তার ধর্মীয় ভাবমূর্তি সঠিক পথেই রয়েছে।’ দেশটির একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এ কথা বলেন। ‘তিনি তার চিন্তা চেতনা হারিয়েছেন এবং অতি মাত্রায় চাপের ফলে দিশা হারিয়ে ফেলেছেন।’

দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্টের প্রতি এমনকি আমিন মারুফ থেকেও কিছু চাপ এসেছে। আমিন মারুফ সম্প্রতি বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট তার বদলে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মাহফুদকে মনোনয়ন দেয় তবে তিনি প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক দলকে বিদায় জানাতে বাধ্য হবেন। দেশটির একজন জৈষ্ঠ কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন ‘এটাই এখন ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতা।’

আমিন মারুফকে মনোনয়ন দেয়ার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট উইডো গৌড়া মুসলিম ভোটারদের তার দিকে টানতে চেয়েছেন এবং দেশটির কিছু রাজনৈতিক নেতা তার ধর্মীয় বিচ্যুতির যে অভিযোগ তুলেছেন তার প্রতি জাবাব দিতে চেয়েছেন এবং সাথে সাথে এই অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে চেয়েছেন যে, তার পিতামাতা দেশটির কুমিউনিষ্ট দলের সাথে যুক্ত। কিন্তু তিনি এটা করে তার ব্যাপক জনসমর্থন হারানোর বিষয়ে একটি ঝুঁকি নিয়েছেন যারা হয়ও এবার তাকে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।

এর সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট উইডোর দলের সাথে গ্রেট ইন্দোনেশিয়ান মুভমেন্ট দলের নেতা প্রাবোউ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট সুশিলো বামবাং এর মিত্রতা নাটকীয় ভাবে ভেঙ্গে গেছে।

প্রাবোউ হয়তো প্রেসিডেন্ট উইডোর বর্তমান বিরোধী জাকার্তার গভর্ণরকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার দল থেকে মনোনয়ন দিতে পারেন এবং এতে করে উইডোর জন্য রাজনৈতিক ময়দান টিকে থাকাটা কঠিন হতে পারে।

সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রাবোউ এর নির্বাচনী প্রচারনায় এক ট্রিলিয়ন রুপি(৬৯ মিলিয়ন ডলার) দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উইডো আমিন মারুফকে একজন ধর্মীয় নেতা হিসাবে প্রচার করেছেন এবং সাথে সাথে এও প্রচার করছেন যে, সাবেক পিপিপি এবং পিকেবি এর আইন প্রণেতা হিসাবে তার অগাধ জ্ঞান রয়েছে।

দেশটির শরিয়া ভিত্তিক পিপিপি সংঘঠনের চেয়ারম্যন মুহাম্মদ রোমাহুরমুজলি বলেন, ‘আমরা এমন নেতা চাই যিনি একই সাথে একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হবেন এবং সোসাল মিড়িয়াতে ধর্ম বিরোধী প্রচারণার অবসান ঘটাবেন।’

কিন্তু এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির শিক্ষিত এবং সংখ্যালঘু ভোটাররা অখুশি হতে পারে। আমিন মারুফ যিনি ২০০৫ সালে ধর্ম নিরপেক্ষতা, অবাধ স্বাধীনতার বিপক্ষে মন্তব্য করেছিলেন যা দেশটির সহনশীল মনোভাবের প্রতি হুমকীর কারণ।

১৯৭৫ সালে একটি আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয় যারা সরকারকে বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুতে ফতোয়া দিয়ে সহযোগীতা করে। মারুফ আমিন ২০০৮ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে আহম্মদীয়াদের বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া জারী করেন যা দেশটিকে সে সময় অগ্নিগর্ভ করে তোলে।

আমিন মারুফ ২০১৬ সালে জাকার্তার গভর্ণর পূর্ণামার বিরুদ্ধে কুরআনের একটি আয়াতের অপব্যখ্যা দেয়ার দায়ে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলেন। অনেকে মনে করেন ডান পন্থিরা উইডোর উচ্চ মাত্রার রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটাতে চলেছে এবং তার ভবিষ্যত রাজনৈতিক জীবনের উপর গভীর কালিমা লেপন করতে চলেছে।

এই প্রভাবশালী ইসলামী বিশেষজ্ঞের দেয়া সাক্ষের ভিত্তিতে দেশটির আদালত সম্প্রতি জাকার্তার গভর্ণর পূর্ণামাকে দুই বছরের কারদন্ড দিয়েছে যার প্রভাব সামনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পড়তে পারে। সূত্র: এশিয়া টাইমস

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন