সু চি ‘লজ্জা নিবারণের ডুমুরপত্র’

  18-09-2018 10:20AM


পিএনএস ডেস্ক: মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের নেত্রী অং সান সু চির কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য ও অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী ক্রিস্টোফার ডমিনিক সিডোটি।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের ৪০০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপনের আগে যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্মমতা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চালিয়েছে, তা ঢাকতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী সু চি নিজেকে পরিণত করেছে ‘লজ্জা নিবারণের ডুমুরপত্রে’।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক মানবাধিকার কমিশনার সিডোটি বলেন, রাখাইনে সহিংসতা থামাতে ব্যর্থতার দায় মিয়ানমারের নেত্রী সু চি এড়াতে পারেন না। সু চি প্রথম যে কাজটি করতে পারতেন তা হল- রাখাইনে গণহারে ধর্ষণের যে বিপুল অভিযোগ এসেছে সেসব ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে না দিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাওয়া বন্ধ করা। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ৮০ শতাংশ মানুষের ভোট তিনি পেয়েছেন। এটা তাকে বিপুল নৈতিক সমর্থন দিয়েছে কর্তৃত্ব দিয়েছে। সেনাবাহিনীর নৃশংসতার লজ্জা ঢাকতে কৌপিনের ভূমিকা নেওয়া তিনি বন্ধ করতে পারতেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন স্থাপনায় একযোগে হামলার পর গতবছর ২৫ অগাস্ট থেকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর ওই দমন অভিযান শুরু হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট।

মঙ্গলবার জেনিভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তাদের ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।

তিন সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন অগাস্টের শেষে তাদের ২০ পৃষ্ঠার যে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে নৃশংস সেই দমন অভিযানের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আইন প্রয়োগের নামে ভয়ঙ্কর ওই অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করারও সুপারিশ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন।

এই মিশনের নেতৃত্ব দেন ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসমান। সদস্য হিসেবে আরও ছিলেন শ্রীলঙ্কার আইনজীবী নারী অধিকার বিশেষজ্ঞ রাধিকা কুমারস্বামী।

গতবছর গঠিত জাতিসংঘের এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্যরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা ৮৭৫ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়ে, নথিপত্র, ভিডিও, ছবি এবং স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

সেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্র আরোপিত যে অবিচার চলছে তা প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়নের রূপ পাওয়ায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভুগতে হচ্ছে এই জনগোষ্ঠীকে।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের অপরাধের জন্য পূর্ণ দায়মুক্তি পেয়ে আসছে, কখনোই তাদের বিচারের জবাবদিহি করতে হয়নি। কোনো একটি অভিযোগ উঠলেই তা অস্বীকার করা, খারিজ করে দেওয়া এবং তদন্তের পথ বন্ধ করে দেওয়া হল তাদের সাধারণ নিয়ম।

তদন্তকারীরা তাদের প্রতিবেদনে বলেছেন, রাখাইনের হত্যাযজ্ঞের হোতাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা অস্থায়ী একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে; আর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকেই এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদে ওই হোতাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা বা এ ধরনের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সিদ্ধান্ত দিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের মধ্যে দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যে অভিযোগ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উঠেছে, তার বিচারের এখতিয়ার ওই আদালতের রয়েছে। আইসিসির সদস্য না হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে মিয়ানমার ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করলেও বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে তাতে সমর্থন দিয়েছে।

সিডোটি বলছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের সুবিচারের জন্য আইসিসি হতে পারে একটি পথ। এর বাইরে রাখাইনের ঘটনার বিচারের জন্য আলাদাভাবে বিশেষায়িত একটি ফৌজদারি আদালত গঠন করা যেতে পারে। তাছাড়া যে মাত্রার অপরাধ সেখানে হয়েছে, তাতে যে কোনো দেশ তার সার্বজনীন বিচারিক এখতিয়ার কাজে লাগাতে পারে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন