নিজে খাই না, যা পাই বাচ্চাদের জন্য রাখি তাতেও হচ্ছে না

  21-09-2018 04:00PM


পিএনএস ডেস্ক: অপুষ্ট কঙ্কালসার শিশুদের চেহারা দেখে চমকে উঠছেন সবাই। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে পারছেন না কেউই। এখন কান্নার ক্ষমতাটুকুও নেই শিশুদের শরীরে।

একটি ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, ইয়েমেনে অন্তত ৫০ লক্ষ শিশু দুর্ভিক্ষের মুখে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরকে কেন্দ্র করে বড়সড় অভিযান চালাচ্ছে। তাতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের।

হুথি জঙ্গিদের হাতে থাকা হোদেইদা নামে ওই বন্দরের দখল নিতে চায় সৌদি জোট। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি জানিয়েছে, এই বন্দরের ক্ষতি হলে অথবা সাময়িক ভাবে এটি বন্ধ করা হলে চড়চড়িয়ে বা়ড়বে তেল আর খাবারের দাম। যার জেরে আরও ১০ লক্ষ শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সিইও হেল থর্নিং শ্মিট বলছেন, ‘লক্ষ লক্ষ শিশু জানে না যে, পরের বারের খাবারটা পাবে কি না। উত্তর ইয়েমেনের একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি, বাচ্চাদের শরীরে কান্নার শক্তিটুকুও নেই। খিদেয় শরীরটাও নাড়াতে পারছে না। আমার ধারণা, ইয়েমেনের যে কোনও হাসপাতালে গেলেই এই দৃশ্য দেখা যাবে।’

তার মতে, ‘হোদেইদায় যা চলছে, তার প্রভাব ইয়েমেনের শিশুদের উপরে সরাসরি পড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের মাধ্যমে খাবার, জ্বালানি আর সব রকম ত্রাণসাহায্য আসে। সরবরাহে এতটুকু বিঘ্ন ঘটলে হাজার হাজার অপুষ্ট শিশু মারা যেতে পারে। কারণ বেঁচে থাকতে গেলে যেটুকু খাবার লাগে, সেটাও এর পরে ওরা আর পাবে না।’

মানাল (ছদ্মনাম) নামে এক মহিলা জানালেন, অপুষ্টির জেরে তার মেয়ের এখন হাড় জিরজিরে চেহারা। কষ্ট চেপে মা বলেন, ‘ওর হাড়গুলো দেখতে পাচ্ছি। কিছু করতে পারছি না। কোথাও যাওয়ার কোনও অর্থ নেই আমার কাছে। ধার করে গ্রাম থেকে বহুদূরের হাসপাতালে এক বার নিয়ে গিয়েছি মেয়েকে। দিনে শুধু দু’বার খাওয়া। সকালে রুটি-চা। দুপুরে টোম্যাটো, আলু। নিজে খাই না। বাচ্চাদের জন্য রাখি। তাতেও হচ্ছে না।’

এই সঙ্কটে জ্বালানির দাম এত বাড়তে পারে যে বিধ্বস্ত পরিবারগুলি শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও পারবে না, বলছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কর্মরত আর এক ব্যক্তি। তার দাবি, ইয়েমেনি রিয়াল-এর পতনে গত কয়েক দিনে খাবারের দাম প্রচণ্ড বেড়েছে। তাই এখনও পর্যন্ত বাজারে খাবার মিললেও অনেক পরিবার অত বেশি দামে কিনতেই পারছে না। গ্যাসোলিন এবং রান্নার গ্যাসের দামও বেড়ে গিয়েছে ২৫ শতাংশ।

জাতিসংঘের দাবি, বন্দর-শহরটির উপরে আরও আঘাতের অর্থ, আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া। যার জেরে আড়াই লক্ষ মানুষ মারা যেতে পারে। লোহিত সাগরের এই বন্দর দিয়ে ৭০ শতাংশ সাহায্য পাঠানো হয়। গত জুন থেকে সেনা অভিযান চলছে। তবে কিছু দিনের জন্য লড়াই বন্ধ ছিল।

জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে দু’পক্ষকে শান্তি-আলোচনায় বসানোর চেষ্টাও হয়েছে। জেনোভায় গত মাসেও সে চেষ্টা চলেছে। কিন্তু আলোচনা ভেস্তে দিতে পারস্পরিক দোষারোপ চলতে থাকে। হুথিরা বৈঠকে যোগ দিতেই আসেনি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে তৃতীয় বার থাবা বসাচ্ছে কলেরাও। কলেরা ঠেকাতে সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাঠানো ওষুধ পৌঁছনো যাচ্ছে না। গত বছরও এ দেশে ১১ লক্ষ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিল।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন