ভেলায় ভেসে সাগরে ৪৯ দিন

  26-09-2018 10:15AM


পিএনএস ডেস্ক: ঝড়ের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে ভেসে যাওয়া একটি মাছ ধরার ভেলায় থাকা তরুণ দিনাতিপাত করছিলেন সাগরের নোনা জল ও মাছ পুড়িয়ে খেয়ে। কোনো জাহাজের চোখ পড়েনি তার দিকে, নিদারুণ পরিস্থিতিতে চোখের জলে ৪৯ দিন পর উদ্ধার হন তিনি।

ইন্দোনেশিয়ার ওই তরুণের নাম আলদি নভেল আদিলাং (১৯)। সাগর থেকে উঠে পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন তিনি।

ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ভাষায় ‘রমপং’ নামে পরিচিত কুঁড়েঘরের মতো দেখতে মাছ ধরার ওই ভেলা উপকূল থেকে সমুদ্রের ১২৫ কিলোমিটার গভীরে বাঁধা ছিল।

দেশটিতে ছয় মাস গভীর সাগরে নোঙর করে কাঠের তৈরি এসব ভেলায় বাতি জ্বালিয়ে রাতে মাছ ধরা হয়। ওই আলোতে আকৃষ্ট হয়ে মাছ ফাঁদে ধরা পড়ে।

সুলাবেসি দ্বীপের বাসিন্দা আলদির কাজ ছিল ‘রমপং’-এ আলো জ্বালানো, যাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ কাজের একটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাকার্তা পোস্ট।

তিনি মানুষের দেখা পেতেন সপ্তাহে একদিন, তার জন্য কেউ খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গেলে। এর বাইরে ওয়াকি-টকিতে যোগাযোগ করতে পারতেন তিনি।

গত ১৪ জুলাই ঝড়ো বাতাসে দড়ি ছিঁড়ে ভেলাটি সমুদ্রে ভেসে যায়। এতে কোনো ইঞ্জিন বা প্যাডল ছিল না। বাতাসে কয়েক হাজার মাইল ভাসতে ভাসতে সেটি চলে যায় যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন গুয়াম দ্বীপের কাছে।

খাবার শেষ হয়ে গেলে আলদি সাগরে মাছ ধরা শুরু করেন। ভেলার থেকে কাঠ নিয়ে তাতে আগুন দিয়ে ওই মাছ পুড়িয়ে খেয়ে চলতে থাকে তার দিন। এ সময় অনেকগুলো জাহাজ তার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে চলে যায়। তবে কারো মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হন তিনি।

অবশেষে ৩১ আগস্ট পানামার পতাকাবাহী একটি জাহাজ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রেডিওতে তার সাহায্যের আকুতি শুনে আলদিকে উদ্ধার করে। তবে এই উদ্ধারও ততটা সহজ ছিল না। অনেক ঝামেলা পেরিয়ে আলদির কাছাকাছি পৌঁছানোর পর তার ভেলায় দড়ি ফেলা হয়। সেই দড়িতে ঝুলে ওই জাহাজে ওঠেন তিনি।

এরপর জাহাজ থেকে বেতারে গুয়াম দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে যোগাযোগ করা হলে তারা তাকে তাদের গন্তব্য জাপানে নেওয়ার পরামর্শ দেন। জাপানে পৌঁছানোর পর ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাকে। ৯ সেপ্টেম্বর মানাদাও শহরে পরিবারের কাছে যান তিনি।

অথৈ সাগরের এই পরিবেশে আলদি অনেকবারই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান ওসাকায় ইন্দোনেশিয়া কনস্যুলেটের কূটনীতিক ফজর ফিরদৌস।

‘প্রতিবারই বড় জাহাজ দেখে তিনি আশাবাদী হয়ে উঠেতন। কিন্তু ১০টির বেশি জাহাজ তার পাশ দিয়ে চলে যায়। সেগুলোর কোনোটিই থামেনি বা আদলিকে দেখেনি,’ বলেন তিনি। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন