আবারো মিয়ানমারের বিষয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব গৃহীত

  17-11-2018 11:31AM


পিএনএস ডেস্ক: মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বিপুল ভোটে আবারো একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার এ-সংক্রান্ত একটি ভোট অনুষ্ঠিত হয়। পরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর টেকসই প্রত্যাবাসনে এই প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সদস্য দেশগুলোর উপস্থিতিতে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। ১৪২টি দেশ এর পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় ১০টি দেশ। ২৬টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

ওআইসি ও ইউ-এর পক্ষে যথাক্রমে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়া এই প্রস্তাব তুলে ধরে। ওআইসি ও ইইউ-এর সব সদস্যরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মেক্সিকোসহ মোট ১০৩টি দেশ এই প্রস্তাবটি কো-স্পন্সর করে।

প্রস্তাবটি ভোটে যাওয়ার আগে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওআইসির পক্ষে তুরস্ক ও ইইউ-এর পক্ষে অস্ট্রিয়া বক্তব্য রাখে। তুরস্ক ও অস্ট্রিয়ার বক্তব্য সমর্থন করে এর পক্ষে ভোট দানের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ। ভোট গ্রহণের আগে ও পরে দেওয়া বক্তব্যে প্রায় সব সদস্য দেশই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্যে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানায়।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তাঁর বক্তব্যে প্রস্তাবটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা সদস্যরা মিয়ানমারের আশ্বাসের প্রতি কোনোভাবেই আস্থা রাখতে পারেনি। সেই সঙ্গে একটি পরিবারও মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হয়নি। তারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে নাগরিকত্বের পূর্ণ নিশ্চয়তা, নিজভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সহিংসতা থেকে সুরক্ষা, সহিংসতার বিচার করা এবং ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির পূর্ণ নিশ্চয়তা ছাড়া তারা ফিরে যাবে না।

রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির নিশ্চয়তার জন্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বাধাহীনভাবে মিয়ানমারে ঢুকতে দেওয়ার দাবি জানান মাসুদ বিন মোমেন।

রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের নীতিগত অবস্থানের কথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আবারো মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের ধরে রাখা বা জোর করে ফেরত পাঠানো এর কোনোটিতেই একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ নেই।

গত বছর সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ওআইসির আহ্বানে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে একই বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, যা পরে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে পুনরায় পাস হয়। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আওতায় মিয়ানমারসংক্রান্ত স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন, কাচিন ও সান প্রদেশে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাবলীর প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট প্রকাশ করে। স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারপারসন মারজুকি দারুসমান এ রিপোর্টের ওপর সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জোরালো সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন।

চলতি বছরের প্রস্তাবে মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির নিয়োগ আরো এক বছরের জন্য বর্ধিত করাসহ তার কাজকে আরো বেগবান করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও এতে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্যতম কার্যকলাপের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়টি জোরালোভাবে আনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার জন্যে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়ার কথাই বলেছে আন্তর্জাতিক পক্ষ।

গত বছরের চেয়েও বেশি ভোটে এবারের প্রস্তাবটি পাস মিয়ানমারের বিপক্ষে বিশ্ব জনমতের জোরালো অবস্থানেরই সুস্পষ্ট প্রতিফলন বলেই উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি। তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত এই প্রস্তাব আগামী ডিসেম্বরে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপিত হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন