বাম-কংগ্রেস জোট না হওয়ায় লাভ তৃণমূল-বিজেপির!

  20-03-2019 03:49PM


পিএনএস ডেস্ক: আসন্ন লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেসের প্রস্তাবিত জোট ব্যর্থ হওয়ায় রাজ্যটিতে এবার চতুর্মুখী লড়াই দেখা যাবে। আর এতে সবথেকে বেশি সুবিধা হবে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের, সামান্য সুবিধা পাবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিজেপিও। তৃণমূল সূত্রে খবর, জোট ভেস্তে যাওয়ায় আখেরে তাদেরই লাভ হল। তাদের অভিমত রাজ্যে অন্য বিশ্বাসযোগ্য ‘ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি’ না থাকায় আসন্ন নির্বাচনে প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যলঘু ভোট তাদের দখলেই যাবে।

গত সপ্তাহে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে একতরফাভাবে বামেরা ২৫টি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণার পরই কার্যত ভেস্তে যায় বাম-কংগ্রেস জোট প্রক্রিয়া।

তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, জোট না হওয়ার ফলে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে অন্তত ১৫টি আসনে তার প্রভাব পড়বে। যার মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদা দক্ষিণ এবং মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বসিরহাট, ব্যারাকপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং মেদিনীপুর। এই আসনগুলিতে শাসকদলের সাথে বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে।

তৃণমূলের ওই জ্যেষ্ঠ নেতা বলছেন, বাম-কংগ্রেস জোট হলে এর অধিকাংশ আসনেই আমরা সুবিধাজনক স্থানে থাকতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হবে। তবে আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে এবং একবার প্রচারণা শুরু হলে সেই অবস্থার পরিবর্তন হবে।

তৃণমূলের একটা অংশ আবার মনে করছে বাম-কংগ্রেসের জোট না হওয়ায় তৃণমূল বিরোধী ভোট আরও ভাগাভাগি হবে। এতে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা যারা মমতাকে পছন্দ করেন না আবার সিপিআইএম-কেও চায় না তারা এবার কংগ্রেসকেই ভোট দেবে। এতদিন এই ভোটগুলি বিজেপির দিকেই যেতো। আবার সিপিআইএম-এর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভোটাররাও জোট না হওয়ায় নিজেদের দলকে ভোট দেবেন।

বাম-কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা না হওয়ায় উৎফুল্ল বিজেপি শিবিরও। সম্প্রতি নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল আনার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সীমান্ত জেলাগুলিতে উদ্বাস্তুদের মধ্যে ভাল জায়গায় রয়েছে বিজেপি।

এ ব্যাপারে বিজেপির এক নেতা বলছেন, হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশ তৃণমূলের সন্তুষ্টিকরণের রাজনীতি নিয়ে অখুশি। এরা বিজেপির পক্ষেই আছে।

তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রভাবশালী নেতা অর্জুন সিং বলেই দিয়েছেন, ভোটারদের তৃণমূলের ওপর থেকে মোহভঙ্গ হয়েছে, তারা বিজেপিকে ভোট দেবে। কারণ তাদের কাছে বিজেপিই একমাত্র বিকল্প। তৃণমূলের যদি মমতা ব্যানার্জি থাকে তবে আমাদেরও নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ আছেন।

বাম-কংগ্রেসের নেতারাও সহমত পোষণ করে বলেছেন, জোট না হওয়ার ফলে তাদের দুই দলের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে চলেছে এবং এক থেকে দুইটির বেশি আসন জেতা সম্ভব নয়।

পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন মিত্র বলেছেন, এটা সত্য যে এবারের নির্বাচন আরও বেশি করে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ভাগাভাগি হবে। কিন্তু সিপিআইএম-এর বুঝতে হবে যে জোট করতে হলে তাদের আরও নমনীয় হতে হবে।

সিপিআইএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী সুজন চক্রবর্তী জানান, জোট গড়তে হলে কংগ্রেসকেই আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। রাজ্যের মানুষই ঠিক করবেন যে জোট ভাঙার জন্য আমরাই দায়ী কি না। শত বাধা সত্ত্বেও কংগ্রেসের সাথে আমরা একটা ধর্ম নিরপেক্ষ বিকল্প শক্তি তৈরি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু..’

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, রাজ্যটিতে চতুর্মুখী লড়াই হলে সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধান বিরোধী দলই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও রাজ্যটিতে চতুর্মুখী লড়াইয়ে তৃণমূল ৩৪ টি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস ৪টি এবং বিজেপি ২টি আসন পায়। তৃণমূলের শতকরা প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩৯.০৫ শতাংশ, বামেরা ২৯.৭১, বিজেপি ১৭ শতাংশ এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ৯.৫ শতাংশ ভোট। পূর্বের সেই হিসাব এবার মেলে কি না সেটাই দেখার।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন