পিএনএস ডেস্ক : আজকের এই পৃথিবীতে সব কিছুর আবিষ্কারক কিন্তু বিজ্ঞানীরা। সব কিছু বলতে কি বুঝাতে চেয়েছি নিশ্চয় বুঝেছে পাঠকরা? পৃথিবীর আদিকাল থেকে এই পর্যন্ত যা কিছু আবিষ্কার হয়েছে সব কিন্তু বিজ্ঞানীদের মেধা ও গবেষণায় তৈরি হয়েছে। তাদের গবেষণা না থাকলে, চিন্তা-চেতনার বিকাশ না থাকলে হয়ত আজ এই সব আবিষ্কার আমাদের কপালে থাকতো না। পূর্ব পুরুষদের ন্যায় আমাদেরও চিঠির মাধ্যমে আদান প্রদান করা লাগত।
আমরা এই সময়ে এসে বিজ্ঞানীদের কল্যাণে অনেক নতুন নতুন জিনিসের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনটাকে সহজ করে দিয়ে এই বিজ্ঞানীরা। বলতে গেলে, এখন আমরা অনেক কম কষ্টেই অনেক কাজ করে ফেলতে সক্ষম হচ্ছি। মাহাকাশও এখন মানুষের অনেক কাছে। যা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানীদের বদৌলতে। বিজ্ঞানীরাই মূলত আমাদের দুরারোগ্য থেকে মুক্তির উপায় শিখিয়েছে। বলতে গেলে আমরা এখন অনেকটাই বিজ্ঞাননির্ভর হয়ে গেছি।
তবে এত কিছু বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীরা দিয়েছে। তবে প্রশ্ন হল সে আদিকাল থেকে এই পর্যন্ত সবকিছুর সমাধান কী তারা দিতে পেরেছে? অর্থাৎ, যত যা আমাদের দরকার কম বেশী সব বিজ্ঞানীরা দিয়েছে, তবে এতে করে সবকিছুর সমাধান কী এসেছে? এই প্রশ্নের জবাব যদি কারো মনে আসে, তাদের উদ্দেশে বলব, এত কিছুর পরেও অনেক কিছুর সমাধানই বিজ্ঞান আমাদের দিতে পারেনি। আমাদের পৃথিবীর এমন কিছু রহস্য আছে যা বিজ্ঞান এখনো ভেদ করতে পারেনি। আজ আমরা ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের তেমন কিছু রহস্যজনক বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করব।
মাটির নিচে কী?
অনেকের মনে বহু বছর ধরে একটি প্রশ্ন, আচ্ছা আমাদের নীচে কী? অর্থাৎ যে সুন্দর পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি তার নীচে আসলে কিসের অবস্থান তা জানতে চায় মানুষ। তাদের এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এখনো দিতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। আমাদের পৃথিবীর মাটির নিচে একদম গভীরে কী আছে তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি এখনো। ভূপৃষ্ঠ এবং এর নিচের অল্প কিছু গভীরতা পর্যন্ত কি আছে আমরা শুধু সেটুকুই জানি। অনেকের ধারণা যে, পৃথিবীর গভীরে পেট্রল, কয়লা, সোনা ইত্যাদির মত খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। হ্যাঁ! সত্যিই। তবে এগুলো শুধু কিছুটা গভীরে গেলে পাওয়া যায়। কিন্তু তারও নিচে অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্রে ও কেন্দ্র সংলগ্ন অঞ্চলে কি আছে তা এখনো জানা যায়নি।
একদা বিজ্ঞানীরা চেয়েছিলেন বিষয়টি জানতে। তা অনেক বছর আগের কথা এটি। সেদিন বিষয়টি জানতে গিয়ে একটি ১২ কিলোমিটার লম্বা গর্ত খোঁড়েন তারা এবং এটিই পৃথিবীর সব থেকে দীর্ঘতম গর্ত। এর থেকে গভীর গর্ত এর আগে বা এখনো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। এই গর্তটির নাম ছিল কোলা সুপার ডিপ বোরহল। এটি রাশিয়াতে করা হয়েছিল। এই গর্তটি বানাতে প্রায় ছাব্বিশ বছর সময় লেগেছিল। এখন অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, যে ১২ কিলোমিটার গর্ত করার পরে এমন কি হলো যে আর গর্ত করল না বিজ্ঞানীরা? হুম! এই প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। তবে আগেই বলে রাখি, তার গভীরে যদি যাওয়া হত, তাহলে এই পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যেত।
প্রশ্ন ছিল, কেন তারা থেমে গেলেন? আসলে বিজ্ঞানীরা থেমে যায়নি, তারা এই প্রোজেক্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়। কারণ ১২ কিলোমিটার গর্ত করার পরে নিচের উস্নতা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। পৃথিবীর যত গভীরে যাওয়া যায় এর উষ্ণতা তত বাড়তে থাকে। প্রায় ১২ কিলোমিটার খোঁড়ার পরে নিচের উষ্ণতা এতোটাই বেড়ে যায় যে, এরপরে যদি মাটি খোঁড়া হত তবে মাটি খোঁড়ার সব যন্ত্র গলে যেত। আর এই উষ্ণতায় পুরো পৃথিবী গলে ধ্বংস হয়ে যেত। এই গর্তটিকে ডিপেস্ট আরটিফেসিয়াল পয়েন্ট অন আর্থ বলা হয়। অর্থাৎ এর নিচে কি আছে, তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
তবে ২০১৪ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানে বলা হয় মানুষ পৃথিবীর আরো গভীরে যেতে গেলে পানি ডিঙ্গিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ সেইখানে সমুদ্রের সন্ধান পাওয়া যাবে। যেখানে ভু-পৃষ্ঠের সমুদ্রের থেকেও অনেক বেশি পানি থাকবে। বিষয়টি শুনতে অনেকের অবাক লাগতে পারে, এই কারণে এটি বিশ্বাস করতেও অনেকটা কষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল জার্নালেও লেখা হয়েছে। তবে যদি পৃথিবীর অনেক গভীরে পানি থেকে থাকে তবে সেখানেও প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। কারণ আমরা জানি পানি জীবনের উৎস। তাই যদি মানুষের পক্ষে কোনো দিন ও ভূপৃষ্ঠের এত গভীরে যাওয়া সম্ভব হয় তবে মানুষ বিভিন্ন প্রকার জীবও আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে। তবে সেটা হয়ত যুগ যুগ ধরে সম্ভব হবে না। কারণ সেদিনের পর থেকে গভীরে যেতে গেলে অনুমতি সাপেক্ষে যাওয়ার বিধান করা হয়েছে।
অনাবিষ্কৃত গুহা: মানুষ এখনো সুমুদ্রের পঁচানব্বই শতাংশ সম্পর্কে জানেনা, ঠিক তেমনই পৃথিবীতে অনেক গুহা আছে, যার সম্পর্কে মানুষ পুরোপুরি অপরিচিত। যে সমস্ত গুহার সন্ধান মানুষ এখনো পর্যন্ত পেয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগ গুহা বানানোর কারণও মানুষ জানে না। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির মিশন অনুযায়ী, পৃথিবীর নব্বই শতাংশ গুহা সম্পর্কে মানুষ এখনো জানে না। আমেরিকা পৃথিবীর সব থেকে এক্সপ্লোর দেশ অর্থাৎ আমেরিকায় অবস্থিত বেশির ভাগ জায়গাই মানুষের জানা কিন্তু তা শর্তেও আমেরিকার পঞ্চাশ শতাংশ গুহার সম্পর্কেও মানুষ কিছুই জানতে পারেনি। তাই মানুষের ধারণা যদি মানুষের পক্ষে এই সব গুহাতে যাওয়া সম্ভব হয় তবে তারা সেইখানে অনেক নতুন নতুন অদ্ভুত প্রকৃতির জীব দেখতে পাওয়া যাবে। আর এই সব গুহা সম্পর্কে জানা গেলে নতুন নতুন আবিষ্কার বের করা সম্ভব।
অনাবিষ্কৃত সভ্যতা: আমরা প্রাচীন সভ্যতার কথা শুনলেই শুনেছি সিন্ধু সভ্যতা, মিসরীয় সভ্যতার কথা। আমরা কেবল স্কুল এবং কলেজেও এই সব সভ্যতার কথা পড়েছি। কিন্তু গবেষকদের মতে, পৃথিবীতে এমন লাখ লাখ সভ্যতা ছিল যার সম্পর্কে আমরা এখনো কিছুই জানি না আর তারাও জানাতে পারেনি। তাদের মধ্যে কিছু কিছু সভ্যতা এখনো বর্তমান আছে। আমরা দেখতে পাই প্রতি বছরই কোনো না কোনো নতুন শহর আবিষ্কার করেন গবেষকরা। এমনও হতে পারে যে, পৃথিবীর নিচে কোন আন্ডারগ্রাউন্ড সভ্যতাও রয়ে গেছে, যা আমরা জানি না। বিজ্ঞানীদের অনাবিষ্কৃত এই সব তথ্য যদি কোনো দিনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয় তবে এমন অনেক নতুন জিনিস মানুষ জানতে পারবে যে, যা সত্যি কেউই কল্পনা করেনি।
পিএনএস/এএ
বিজ্ঞানীরা কী পারবেন এসব অজানা জানাতে?
22-04-2019 12:47AM