অল্পের জন্য রক্ষা

  22-04-2019 12:40PM


পিএনএস ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার নেগোম্বোর সেন্ট সেবাস্টিয়ানস গির্জায় চলছিল ইস্টার সানডের বিশেষ উৎসব। অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ আগেভাগেই পৌঁছে যান সেখানে। দিলীপ ফার্নান্দো পরিবার নিয়ে ওই গির্জায় যান সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। একটু দেরিই হয়ে যায় তাঁদের। পৌঁছে দেখেন বেশ ভিড়। এত মানুষ দেখে অন্য গির্জায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দিলীপ। এতে সপরিবারে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। সেখান থেকে চলে যাওয়ার অল্প সময় পরেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

গতকাল রোববার শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৯০ জন। এই তিন গির্জার মধ্যে রয়েছে সেন্ট সেবাস্টিয়ানস। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখানে বহু লোক নিহত হন।

আজ সোমবার সকালে আবার এই গির্জায় এসেছেন দিলীপ। হৃদয়ের টানেই চলে এসেছেন। গতকাল যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেই জায়গাটায় আজ আবার এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বার্তা সংস্থা এএফপিকে অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকাল আমি আর আমার স্ত্রী সকাল সাড়ে সাতটায় এই গির্জায় এসে পৌঁছাই। খুব ভিড় ছিল, দাঁড়ানোর জায়গাও পাচ্ছিলাম না। তাই অন্য গির্জার দিকে রওনা দিই।’

দিলীপ ও তাঁর স্ত্রী চলে গেলেও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যেরা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে দিলীপের দুই নাতনিও ছিলেন। তাঁরা জায়গা না পেয়ে গির্জা বাইরে বসে অপেক্ষা করছিলেন। সে সময়ই এক তরুণকে তাঁরা দেখতে পান। খুব ভারী একটা ব্যাগ নিয়ে গির্জার ভেতর ঢুকছেন। তাঁদের বিশ্বাস ওই তরুণই আত্মঘাতী এই হামলা চালান। শান্ত চেহারার ওই তরুণ যেতে যেতে দিলীপের এক নাতনির মাথায় হাত রাখেন। তিনি ভেতরে ঢোকার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ ঘটে।

দিলীপ বলেন, ‘আমার নাতনিরা জানায়, তরুণটির বয়স ৩০ বছরের মতো হবে। খুব সাদাসিধে চেহারা। তার মধ্যে কোনো উত্তেজনা ছিল না, ভয়ও ছিল না। খুব শান্ত ছিল সে। ওই তরুণ ভেতরে ঢোকার পরপরই বিস্ফোরণ ঘটে।’

বিস্ফোরণের পর দিলীপের পরিবারের সদস্যেরা দৌড়ে ওখান থেকে সরে আসেন। খুব ভয় পেয়েছিলেন সবাই। দিলীপকে ফোন দিয়ে ঘটনার কথা জানান।

দিলীপের গ্রাম এখন শোকের গ্রাম। শোকে মুহ্যমান মানুষের হাহাকারে ভারী পরিবেশ। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোমান ক্যাথলিক কমিউনিটি। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬ শতাংশ আমরা। তবে আমরা ভীত নই। গির্জা যদি আজ সকালে খোলে, তো আজকেই আমরা ভেতরে ঢুকব। আমরা ভয় পাই না। আমরা সন্ত্রাসীদের জিততে দেব না। কোনোভাবেই না।’

এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আর কোনো সন্ত্রাসী হামলা হবে না বলে আশা করেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘প্রতিশোধ নিরর্থক। সরকারের দায়িত্ব আর কোনো ঘটনার আশঙ্কা থাকলে তা প্রতিরোধ করা। এটা আমাদের নয়।’

সরকারের সমালোচনা করে দিলীপ বলেন, হামলার আশঙ্কার পূর্বাভাস পেয়েও সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ ছিল না।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন