মধ্যপ্রাচ্যে ১ লাখ ২০ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!

  15-05-2019 04:16AM

পিএনএস ডেস্ক:মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে এক লাখ ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে হামলার ছক তৈরি করে সেদেশের ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে নতুন এ পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে।

গতকাল (১৩ মে) এসব তথ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে তুর্কি সংবাদ মাধ্যম হারিয়েট ডেইলি নিউজ ডটকম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সর্বশেষ সামরিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন সেদেশের ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে এক লাখ ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, গত ৯ মে ভারপ্রাপ্ত ট্রাম্পের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছে ইরানে হামলার বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শ্যানাহান।

তবে সংবাদটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমটির পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউজে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করেনি। আর কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করে পেন্টাগন।

সংবাদ মাধ্যমটির মতে, সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন, সিআইএ পরিচালক গিনা হাসপেল, জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক ড্যান কোটস এবং জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জোসেফ ডানফোর্ড।

বৈঠকে বিভিন্ন পরিকল্পনা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এসব পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় এক লাখ ২০ হাজার সেনা পাঠানোর বিষয়টি। আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই সেসব সৈন্য পাঠানো হবে মধ্যপ্রাচ্যে।

এর আগে গত ১২ মে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ জানায়, পরমাণু চুক্তি ও হরমুজ প্রণালি নিয়ে ইরানের সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে।

উভচর যান ও উড়োজাহাজ পরিবহনে সক্ষম ইউএসএস আর্লিংটন শিগগিরই উপসাগরে থাকা অপর যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে যোগ দেবে বলে জানান তাঁরা।

এরই মধ্যে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি বি-৫২ বোমারু বিমান পৌঁছেছে বলেও পেন্টাগন জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর ইরানের সম্ভাব্য হামলার হুমকি মোকাবেলায় এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

তেহরানের কাছ থেকে হুমকির মাত্রা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি মার্কিন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, ইরান তাদের দিক থেকে হুমকির বিষয়টিকে 'বাজে কথা' বলে উড়িয়ে দেয়। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে হস্তক্ষেপের লক্ষ্যে 'মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ' চালাতেই ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক অস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করছে বলে অভিযোগ তাদের।

ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্তা ইরনা দেশটির জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতা ইউসুফ তাবাতাবি-নেজাদের বরাত দিয়ে জানায়, 'যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নৌযান (ইরানের) কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্রেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।'

পেন্টাগন বলে, তারা ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে চায় না। তবে ওয়াশিংটন ওই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনী এবং স্বার্থের সুরক্ষায় প্রস্তুত। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে পেন্টাগন জানায়, ইরানের কার্যক্রমে কড়া নজরদারি অব্যাহত রাখছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

মধ্যপ্রাচ্যে যে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা মোতায়েন করা হচ্ছে, তা ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমানের সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলায় বেশ কার্যকর বলেও আশ্বস্ত করেছে তারা। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে।

নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ওয়াশিংটন তেহরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করেছে। ইরানের তেল রপ্তানি বন্ধে ক্রেতাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে তারা। ইরান বলেছে, তাদের তেল রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র বাধা হয়ে দাঁড়ালে তারাও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। হরমুজ দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ তেলবাহী জাহাজ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীকে 'বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের' তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের মাধ্যমে ইরানের শাসকদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর যেকোনো আঘাত অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে মোকাবেলা করা হবে।'

যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস আর্লিংটন কবে উপসাগরে পৌঁছাবে তার ধারণা পাওয়া যায়নি। ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন বৃহস্পতিবার সুয়েজ খালের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল বলে জানায় মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড।

সূত্র : হারিয়েট ডেইলি নিউজ ডটকম


পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন