লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে ভারতে ইভিএম বিতর্ক

  22-05-2019 10:10AM


পিএনএস ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনে সাত পর্বের ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হওয়ার দুদিন আগে ইভিএম নিয়ে শোর তুলল ভারতের বিরোধী দলগুলো। ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা তুলে মঙ্গলবার দিল্লিতে তারা দেখা করেছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে, দিয়েছে স্মারকলিপি।

তবে নির্বাচন কমিশন তাদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিরোধী নেতাদের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা।

এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে গত রোববার শেষ হয় ভারতে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। ৮৩ কোটির বেশি ভোটারের জন্য ৫৪২টি আসনের নয় লাখ কেন্দ্রে সাত পর্বে চলে ভোটগ্রহণ। ভারতে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর সাথে সাথেই গণনা হয় না। ব্যালট বাক্স কিংবা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো (ইভিএম) কঠোর নিরাপত্তায় সংরক্ষিত থাকে বিভিন্ন রাজ্যের ‘স্ট্রংরুম’গুলোতে। সব পর্বের ভোট শেষে হয় গণনা।

এবার আগামী বৃহস্পতিবার ইভিএম ও ব্যালটের ভোট গণনা শুরু করতে যাচ্ছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। তার আগে মঙ্গলবার ‘স্ট্রংরুমে’ ইভিএম নিয়ে ট্রাকের ঢোকার দৃশ্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বিরোধী শিবিরও নামে অভিযোগের আঙুল তুলে।

ইভিএমের খবর দেখেই নয়াদিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে তেলেগুদেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডুর উদ্যোগে জরুরি বৈঠকে বসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সেই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, অশোক গেহলট ও অভিষেক মনু সাঙ্ঘভি, ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন, আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বহুজন সমাজ পার্টির নেতা দানিস আলিসহ অনেকে।

এরপর বিরোধী ২২টি রাজনৈতিক দলের নেতারা একযোগে যান নির্বাচন কমিশনে। স্মারকলিপিতে তারা ইভিএমে যে কোনো ধরনের কারচুপি এড়াতে ইসির সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেন।

হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, বিরোধী নেতারা ইভিএমে কারচুপি এড়াতে দুটি প্রস্তাব দেন। প্রথমত, যে নির্ধারতি পাঁচটি বুথে ভিভিপ্যাট আগে গুণতে হবে, তারপর তার সঙ্গে ইভিএমের ভোট মিলিয়ে দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভিভিপ্যাট ও ইভিএমে ভোটে গরমিল হলে সব বুথে ভিভিপ্যাট গণনা করতে হবে।

ভারতে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ আগেও উঠেছিল, তা ইভিএম যন্ত্রের পাশে আরেকটি যন্ত্র রেখেছে ইসি, যার নাম 'ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইলিং', সংক্ষেপে ভিভিপ্যাট।

ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর ওই ভোটার যাবে ভোট দিয়েছেন, সেই প্রার্থীর নাম, ক্রমিক সংখ্যা ও প্রতীক ভিভিপ্যাটের ব্যালট স্লিপে ছাপানো অক্ষরে দেখা যাবে। তার পরে সেই তথ্য-সম্বলিত স্লিপ জমা হবে ড্রপবক্সে।

ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত এপ্রিলে এক নির্দেশে প্রতিটি আসনে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে পাঁচটি কেন্দ্রে ভিভিপ্যাট স্লিপ ও ইভিএমের ভোট মিলিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল।

কংগ্রেস নেতা মনু সাঙ্ঘভী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট নমুনা হিসেবে পাঁচটির কথা বলেছিল, কিন্তু যদি কারচুপি একটিতে হতে পারে, তাহলে সব আসনেই হতে পারে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, তাদের আশঙ্কা ইভিএমে কংগ্রেসের পাঞ্জাসহ যে প্রতীকেই ভোট দেওয়া হোক, তা পড়ছে বিজেপির পদ্মফুলে।

গুলাম নবী আজাদ বলেন, তারা ইসিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন, বুধবার ইসি তাদের সাথে ফের কথা বলবে। বুথ ফেরত জরিপে নরেন্দ্র মোদীর ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আভাসের পর বিরোধী দলগুলোর এই পদক্ষেপ নিয়ে পরিহাস করেছেন বিজেপি নেতারা।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিরোধী নেতাদের এই চেষ্টা লজ্জাজনক। আরেক মন্ত্রী রবি শঙ্কর বলেছেন, ‘যখন তাদের নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রবাবু নাইডু, অমরিন্দ্রর সিং, অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা ভোটে জেতেন, তখন ইভিএম খুব ভালো; আর মোদী জিততে চলেছেন বলে ইভিএম খারাপ হয়ে গেল!’

এদিকে বিরোধীদের অভিযোগের পর ইসির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাটি বলেছে, ভোটগ্রহণের পর সব ইভিএম ও ভিভিপ্যাট কড়া নিরাপত্তার মধ্যে স্ট্রংরুমে আনা হয় এবং প্রার্থীদের এজেন্ট ও পর্যবেক্ষকদের সামনেই তা কক্ষ সিলগালা মেরে তালাবদ্ধ করা হয়েছে।

ভোট গণনা শুরুর আগ পর্যন্ত দিনের ২৪ ঘণ্টা ওই সব স্ট্রংরুম ভিডিও ক্যামেরার আওতায় থাকছে বলেও জানায় ইসি। প্রতিটি স্ট্রংরুমের সামনে সশস্ত্র পাহারা থাকার কথাও জানানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভোটগ্রহণের দিন ব্যবহৃত ইভিএমের ভোটই যে গণনা হচ্ছে, সেই সন্দেহ দূর করতে গণনা শুরুর আগে এজেন্টদের ঠিকানার ট্যাগ, সিল ও ইভিএমের বিশেষ নম্বর মিলিয়ে দেখা হবে।

ভোটগ্রহণ শেষের দুদিন পর উত্তর প্রদেশ ও বিহারে স্ট্রংরুমে ইভিএম ঢোকানোর যে ভিডিও ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে ইসি কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, ভোটগ্রহণের দিন যান্ত্রিক কোনো সমস্যার শঙ্কা থেকে বিকল্প কিছু ইভিএম-ভিভিপ্যাট তৈরি থাকে। ওই ভিডিওতে দেখা ইভিএম সেগুলো হতে পারে।

এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ১০০ শতাংশ অর্থাৎ সমস্ত ভিভিপ্যাট মেশিনের সাথে ইভিএমের ভোট মিলিয়ে দেখার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল চেন্নাইয়ের একটি সংস্থা। তবে তা অযৌক্তিক বলে খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন