মমতার জন্য অশনি সংকেত, সতর্ক করল আনন্দবাজার পত্রিকা

  24-05-2019 03:56PM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ফলাফল বিশ্লেষণে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে ২০১৬-র বিধানসভার চেয়ে এ বারের লোকসভায় তৃণমূলের ভোট প্রায় ২ শতাংশ কমেছে। আর বিজেপির ভোট বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এবার নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের আসন দাঁড়াল ২২। বিজেপি ১৮। সন্দেহ নেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই ফল এক বড় সতর্কবার্তা। কারণ শুধু আসন সংখ্যার নিরিখেই নয়, ভোটের ধরনেও মেরুকরণের ছবি স্পষ্ট।

আনন্দবাজার লিখেছে, এই মেরুকরণকে নিছক সাম্প্রদায়িক বললে তা খণ্ডসত্য হবে। এ কথা ঠিক যে, মমতা ঘোষিত ভাবেই সর্বদা সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এখনও দাঁড়ান। তাঁর দিক থেকে বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাজ্যে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট নিজের দিকে টেনে রাখার প্রয়োজনীয়তা যে আছে, সেটাও হয়তো একেবারে অস্বীকার করা যায় না।

কিন্তু এর বাইরেও আরও একটি মেরুকরণ এবার স্পষ্ট। যা অনেক বেশি রাজনৈতিক। সিপিএম এবং কংগ্রেস কার্যত মুছে যাওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছেছে এবার। সিপিএম একটি আসনও পায়নি। ভোট মাত্র ৮ শতাংশ। কংগ্রেস দু’টি আসন পেলেও ভোট ৬ শতাংশও নয়। অর্থাৎ শাসক এবং বিরোধী ভোট সরাসরি দু’টি শিবিরে ভাগ হয়ে গেল। যার অর্থ ২০২১-এ বিধানসভার লড়াই হবে মুখোমুখি— বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের।

লোকসভা ফলের ভিত্তিতে ভোট শতাংশে এখন উভয়ের ব্যবধান দাঁড়াল মাত্র ৩। তৃণমূলের ৪৩, বিজেপির ৪০। ২০১৬-র বিধানসভার চেয়ে এ বারের লোকসভায় তৃণমূলের ভোট প্রায় ২ শতাংশ কমেছে। আর বিজেপির ভোট বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

বিধানসভার ৮ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তো বিজেপির ভোট তৃণমূলকে ছাপিয়ে গিয়েছে। চারটি আসনে জিতে বিজেপি পেয়েছে ৪০.৫০ শতাংশ ভোট, তিনটি আসনে জয়ী তৃণমূল ৩৭.০৪। একটি জিতেছে কংগ্রেস।

মমতার পক্ষে এই সব হিসেব স্বস্তিজনক বলা চলে না। বরং ২০২১-এর জন্য এ এক ‘অশনি সঙ্কেত’। তবে প্রশ্ন, তিনি এটা কী ভাবে দেখবেন? আদৌ বিপদ বলে মানবেন কি?

প্রাথমিক বিশ্লেষণে তৃণমূল নেত্রীর মনে হয়েছে, দেশ জুড়ে বিরোধীদের যে অবস্থা, তার তুলনায় এ রাজ্যে তৃণমূলের ফল খারাপ নয়। পাশাপাশি, তাঁর অভিযোগ, বিজেপির টাকার খেলা, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা, ইভিএম কারচুপির মতো বিষয়গুলিও এড়িয়ে যাওয়ার নয়। তাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী নিজের দলের পরাজয়কে ‘আমার দায়’ বলে স্বীকার করে নিলেও মমতার ‘আমিত্ব’ তাঁকে এখনও তেমন কোনও উপলব্ধিতে পৌঁছে দেয়নি।

বিজেপি যে রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছে, তা অবশ্য গত কয়েকটি উপনির্বাচনের ফল থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। এমনকি, এ বার লোকসভাতেও যে তারাই দ্বিতীয় স্থানে থাকবে, সন্দেহ ছিল না তাতেও। কিন্তু সেই উত্থান এত তীব্র হয়ে প্রায় সমানে সমানে টক্করের চেহারা নেবে সেটা অনেকেই বোঝেননি।

বিজেপি শুধু বেড়েছে তাই নয়, রাজ্যের ২৭টি গ্রামীণ লোকসভা কেন্দ্রের ১৫টিতে এগিয়ে গিয়েছে। রাজ্য রাজনীতিতে এটিও এক লক্ষণীয় বিষয়। সিপিএমের বিরুদ্ধে জনমত ঘুরতে শুরু করেছিল শহর থেকে। গ্রাম বাংলায় তাদের দুর্গ দীর্ঘদিন প্রায় অটুট ছিল। তাই কংগ্রেস বা পরবর্তী কালে তৃণমূল শহরে নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও মূল ভিতে ঘা মারতে পারেনি।

তৃণমূলের নির্বাচনী ধাক্কার পিছনে আরও একটি বিষয় কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তা হল দলের একাংশের ‘দাদাগিরি’। তৃণমূলের যাঁরা সত্যি ‘তৃণস্তরে’ কাজ করে এসেছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, ‘নব্য’ নেতৃত্বের দাপটে তাঁরা আর কোনও জায়গা পাচ্ছেন না।

বিধানসভা ভোট হবে আরও বছর দু’য়েক পরে। সদা পরিবর্তনশীল রাজনীতি তত দিনে আরও কী মোড় নেবে এখনই নিশ্চিত করে তা কেউ বলতে পারে না। সবাই জানেন, ধাক্কা খেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আছে। এবং তাতে তিনি বার বার ‘সফল’ হয়েছেন, এটাই ইতিহাস। তা-ই এ বারেও লোকসভা ভোটের ফলাফল বিচার করে তিনি কী পদক্ষেপ নেবেন, দলের অন্দরে ক্ষমতার ‘পুনর্বিন্যাস’ করে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের নিরসন করবেন কি না, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল যাতে মাঝপথে ‘লোপাট’ হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করবেন কি না, ‘নব্য’ নেতৃত্বের দাপটে কড়া হাতে লাগাম টানবেন কি না, এ সব অনেক কিছুর উপর নির্ভর করবে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ।

ধর্মীয় মেরুকরণের ভোট এ রাজ্যেও এবার বেশ কিছুটা হয়েছে। জেলাতে তো বটেই, খাস কলকাতাতেও এলাকাভিত্তিক ফলে সেই ছবি ধরা পড়ে। রাসবিহারী, ভবানীপুর, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলার মতো এলাকায় তৃণমূল ধাক্কা খেলেও পার্ক সার্কাস, বালিগঞ্জ, কসবা, এন্টালি, চৌরঙ্গির মতো পাড়ায় বিজেপি-কে তারা পিছনে ফেলে দিতে পেরেছে। সূত্র : আনন্দবাজার।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন