মুরসি হত্যা ও ব্রিটেনের সাথে অস্ত্র চুক্তি : কী ঘটেছিল পর্দার অন্তরালে

  26-06-2019 10:20AM


পিএনএস ডেস্ক: ব্রিটেনের জোটভুক্ত বেশ কয়েকটি দলের এমপি ২০১৮ সালে মুরসির সাথে দেখা করার জন্য মিসর সরকারের কাছে অনুমতি চায়। দেশটিতে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করে এমন পদক্ষেপ নেন তারা। কিন্তু মিসর কর্তৃপক্ষ কারাগারে মুরসির সাথে দেখা করা যাবে না বলে ব্রিটিশ এমপিদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়।

কারাগারে মুরসির সাথে দেখা করার অনুমিত না দেয়ার পর তারা জোর দিয়ে বলে যে, সেখানে তাকে সন্তোষজনক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু মুরসিকে যে যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে এর পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারে না। অবশেষে সম্প্রতি মুরসি আদালতে মারা গেছেন। চিকিৎসাসেবা না দেয়ায় মুরসির মৃত্যুর জন্য মিসর সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে গোটা বিশ্ব।

ব্রিটিশ এমপিদের মিসরে এসে কারাগারে মুরসির সাথে দেখা করার জন্য মিসর ভিসা প্রদান করেনি, সমস্যাটা সেখানে নয়। কেননা তার আগেই বেশ কয়েক বছর ধরেই মিসর কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের কায়রো আসার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করছে। ব্রিটেনের সাথে গ্যাস উত্তোলন থেকে শুরু করে টেলিকমিউনিকেশন পর্যন্ত বেশ কিছু বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করে রাখা হয়েছিল।

মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই বছর পর ব্রিটিশ সরকার মিসরে তাদের কোটি কোটি পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রির প্রক্রিয়া ফের চালু করে। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মিসরের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফের এই অস্ত্র ব্যবসা শুরু হয়। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম ও ভোডাফোনের সাথে করা চুক্তি থেকে মিসর সামান্য কিছু লাভ করলেও ব্যয়বহুল অস্ত্রের কারণে তা কোনো কাজে আসেনি। কিন্তু বদনাম আছে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে মিসরের জন্য এটা গুরুত্ব বহন করে। কেননা এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে বৈধতা পায় তারা।

বৈশ্বিক এই বৈধতার কারণে মিসর সরকার তাদের হাজারো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোরালো প্রমাণসহ হাজির করলেও পশ্চিমা দেশগুলো তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন মিসরে ৬০ হাজারেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী ছিল এবং সংখ্যালঘুদের গুম করে দেয়ার ঘটনা ঘটছিল। মুরসিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত মিসরের ক্ষমতায় আসেন তৎকালীন সেনাপ্রধান সিসি। তিনি ক্ষমতায় আসার পর গোটা দেশে নানামুখী বৈশ্বিক নীতি গ্রহণ করলেও বাদ পড়ে যায় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়।

প্রথমটি হলো ২০১৩ সালের রাবা গণহত্যা। যেখানে বিক্ষোভরত অবস্থায় তার সমর্থক হিসেবে পরিচিত এক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। যার মাধ্যমে সরকার যে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষকে নানাভাবে দণ্ড দিচ্ছে সেই বিষয়টি উঠে আসে। দ্বিতীয়টি হলো ২০১৬ সালে ইতালিয়ান শিক্ষার্থী জুলিও রেগেনি হত্যাকাণ্ড, যা নির্যাতনের আরেকটি নির্মম উদাহরণ।

মুরসির মৃত্যুর পর গোটা বিশ্বে প্রশ্ন উঠেছে বিনা চিকিৎসায় দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়েছে আদালতে হাজিরা দেয়ার সময়। মুরসি ডায়াবেটিস, লিভার এবং কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। আইনজীবী ও পরিবারের অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়নি।

মিসরের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম যেগুলো সিসি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল তারা এই ঘটনার পুরোটাই ধামাচাপা দিয়েছে। পত্রিকার প্রথম পাতায় ছোট করে মুরসির মৃত্যুর খবর ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু সাংবাদিককে সরাসরি টিভিতে মুরসির মৃত্যুর বিষয়টি উদযাপন করতেও দেখা গেছে।

জাতিসঙ্ঘ, মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর, ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মুরসির হত্যার জন্য কারা দায়ী এ বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে। সূত্র : মিডলইস্ট মনিটর

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন