পুড়ে ছাই হচ্ছে আমাজন, আট মাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ৭৫ হাজারেরও বেশি

  23-08-2019 09:21PM

পিএনএস ডেস্ক : এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে আমাজন। ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ হিসেবে খ্যাত আমাজনে এ বছর রেকর্ডসংখ্যক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কতটা ভয়াবহ এ আগুন?

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে আমাজনে যতগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, আর কখনো তা হয়নি। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আমাজনে রেকর্ডসংখ্যক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর ৮৫ শতাংশ বেশি আগুন লেগেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে আমাজনে ৭৫ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর আগস্ট পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ হাজার। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, ২০১৩ সালে পুরো ব্রাজিলে যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল, চার মাস বাকি থাকতেই এ বছর তার চেয়ে বেশি আগুন লেগেছে। শুষ্ক মৌসুমে, বিশেষ করে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমাজনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একেবারে বিরল নয়। কিন্তু এবারের মতো এত ভয়াবহ আগুনে কখনো পোড়েনি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই বনাঞ্চল।

আমাজনের প্রায় ৬০ শতাংশ অবস্থিত ব্রাজিলে। বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে ব্রাজিলের উত্তরাংশের রাজ্যগুলো। বিশেষ করে উত্তরাংশের চারটি রাজ্যে গত চার বছরে আগুন লাগার হার বেড়েছে ব্যাপকভাবে। পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, আমাজনে লাগা আগুনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোরাইমা, একর, রন্ডোনিয়া ও আমাজোনাস—এই চারটি প্রদেশ। গত চার বছরে রোরাইমাতে ১৪১, একরে ১৩৮, রন্ডোনিয়ায় ১১৫ ও আমাজোনাসে ৮১ শতাংশ আগুন লাগার হার বেড়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণের প্রদেশ মাতো গ্রোসো দো সালে আগুন লাগার হার বেড়েছে প্রায় ১১৪ শতাংশ। অগ্নিকাণ্ডের কারণে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় প্রদেশ আমাজোনাসে এরই মধ্যে জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়েছে।

বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপরও। আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বনাঞ্চলে। শুধু আমাজনেই নয়, বনাঞ্চল ছাড়িয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়েছে অন্য প্রদেশগুলোতেও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস অ্যাটমোসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের (কামস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমাজনের আগুনের এ ধোঁয়া সুদূর আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্তও বিস্তৃত হচ্ছে। আমাজনে লাগা আগুনের ভয়াবহতা বুঝতে সহায়ক হবে আরেকটি তথ্য। আমাজন থেকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরের রাজ্য সাও পাওলোর আকাশও ছেয়ে গেছে ভয়াবহ এ আগুনের ধোঁয়ায়!

আমাজনের মোট আয়তনের প্রায় ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে অবস্থিত। তবে আগুনের রুদ্রমূর্তি কেবল ব্রাজিল অংশের আমাজনে নয়, বরং লাতিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোও দেখছে। ভেনেজুয়েলার আমাজনে এ বছর ২৬ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বলিভিয়া অংশে ১৭ হাজারেরও বেশিবার আগুন লেগেছে। কলম্বিয়াতেও আগুন লেগেছে ১৪ হাজারের বেশিবার।

এদিকে আমাজনের অগ্নিকাণ্ডের পেছনে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাত দেখছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারো। যেসব বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে আমাজনে আগুন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি। অপরদিকে ব্রাজিলের কংগ্রেস সদস্য ও নিম্নকক্ষের পরিবেশবিষয়ক ককাসের নেতা নিলতো তাত্তো বলেছেন, এনজিওগুলোর প্রতি বোলসোনারোর এ অভিযোগ ব্রাজিলের ৩০ বছরের পরিবেশ সুরক্ষা নীতিতে তাঁর প্রশাসনের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। আমাজনের এমন দুরবস্থার পেছনে বোলসোনারোকে দোষারোপ করেছেন রক্ষণশীলেরাও। বোলসোনারো কাঠুরে ও কৃষকদের জমি সাফ করতে উৎসাহিত করছেন বলে বারবার বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

পৃথিবীতে মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০ শতাংশই সরবরাহ দেয় আমাজন। ধোঁয়ার কারণে বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। কামসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু আমাজনে লাগা আগুনের কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২২৮ মেগা টন কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয়েছে। ২০১০ সালের পর কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের এ হার সর্বোচ্চ। শুধু কার্বন ডাই-অক্সাইড নয়, বিপুলসংখ্যক গাছ পোড়ার কারণে বাতাসে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসও নির্গত হচ্ছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে আমাজন। প্রায় ৩০ লাখ স্বতন্ত্র প্রজাতির গাছপালা ও প্রাণীর আবাসস্থল এই আমাজন। প্রতিবছর মিলিয়ন মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয় আমাজনের বিস্তৃত বনাঞ্চল। এই গাছগুলো যখন কাটা হয় বা আগুনে পুড়ে যায়, তখন শোষণ করে রাখা কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন