মোদির সঙ্গে মমতার বৈঠক ঘিরে নানা জল্পনা

  18-09-2019 12:29PM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়াদিল্লিতে আজ বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটায় এই বৈঠক হবে। হঠাৎ করে মোদির সঙ্গে মমতার বৈঠক ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনাকল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলেই মমতা চলে যান নয়াদিল্লিতে। লোকসভার নির্বাচনী প্রচারে নেমে মমতা মোদিকে নিয়ে নানা কটূক্তি করেছিলেন। সেই থেকে মমতার সঙ্গে মোদির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। কিন্তু এবার মোদির সঙ্গে মমতার আগ বাড়িয়ে বৈঠকের ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

কলকাতার রাজনৈতিক মহলে মমতার সঙ্গে মোদির বৈঠক ঘিরে শুরু হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। কেউ কেউ মনে করছেন, বৈঠকে মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মমতার মনের কথা জানতে চাইবেন।

আগামী ৫ অক্টোবর মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনো কথা হবে কি না, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নানা আলোচনা আছে। মোদি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই মমতা রাজি হচ্ছেন না এই চুক্তি সম্পাদনে।

এবার লোকসভা নির্বাচনে মমতার দলের বাজে ফল, বিজেপির উত্থান, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, আসামের এনআরসি ইস্যু নিয়ে মমতা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী মোদি এই পরিস্থিতিতে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মমতার অবস্থান সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন বৈঠকে।

মমতা গতকাল কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি যাওয়ার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীর্ঘদিন দিল্লি যাইনি। এবার যাচ্ছি রাজ্যের ব্যাপারে। কিছু টাকা পাওনা আছে। এ ছাড়া কথা হবে ব্যাংক সংযুক্তকরণ, এয়ার ইন্ডিয়া, রেল বিএসএনএল নিয়ে। কথা হবে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল নিয়েও।’

মমতার এই বক্তব্যে রাজ্যের রাজনীতিবিদেরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাঁরা বলেছেন, মমতা এখন নানা চাপে আছেন। সারদা–রোজভ্যালি–নারদ দুর্নীতি মামলা, এনআরসি, ভাষানীতি ইত্যাদি নিয়ে মোদির সঙ্গে তাঁর কথা হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক চাপ কমাতে এবার মমতা বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনে সবুজ সংকেত দিতে পারেন। কারণ, মমতা একসময় ছিটমহল বা সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনেও বিরোধিতা করেছিলেন। পরে সেই চুক্তি সম্পাদনে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন।

রাজ্যের রাজনীতিকেরা মনে করছেন, যেভাবে মমতা পশ্চিমবঙ্গে নানা ঘটনার জালে আটকে পড়ছেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে সম্মত হতে পারেন তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে। যদিও মমতা এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

মমতার মোদির সঙ্গে বৈঠককে কটাক্ষ করতে দ্বিধা করেননি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়। মুকুল রায় গতকাল বলেছেন, ‘এই মমতাই বলেছিলেন, তিনি মোদিকে প্রধানমন্ত্রী মানেন না। শেষ পর্যন্ত সেই মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক করতে হচ্ছে। এটাই আমাদের জয়।’

মুকুল রায় আরও বলেছেন, এই সফরে সারদা মামলায় কলকাতার সাবেক পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের হাত থেকে রক্ষার বিষয়টি থাকবে কি না, সেই প্রশ্নও রয়েছে রাজ্যের মানুষের মনে।

কলকাতার সাবেক পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে এত দিন হাইকোর্ট সিবিআইয়ের গ্রেপ্তারের ওপর স্থগিতাদেশ দিলেও সম্প্রতি সেই রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রাজীব কুমার এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সিবিআই তাঁকে ধরতে পারছে না। রাজীব কুমারকে পশ্চিমবঙ্গের চাঞ্চল্যকর সারদা দুর্নীতি মামলায় জেরা করার জন্য সিবিআই নোটিশ পাঠালেও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। বরং বারবার তিনি সিবিআইকে এড়িয়ে গেছেন। আশ্রয় নিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টে। তবে মমতার তরফ থেকে এসব নিয়ে আলোচনার কোনো কথা বলা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলের নেতা সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘এই মমতাই প্রধানমন্ত্রী মোদির কোমরে দড়ি বাঁধার কথা বলেছিলেন। এখন নিজের কোমরে দড়ি পরার সময় এসেছে। তাই সংকটকালে তিনি মোদির দ্বারস্থ হয়েছেন। সাবেক পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের যা হওয়ার হয়েছে। এবার পিসি-ভাইপো (মমতা-অভিষেক) যাতে বেঁচে যান, তা নিয়েই দেনদরবার।’

চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার। মোদি-মমতার অবস্থা ছিল দুই মেরুতে। মোদিকে হটানোর জন্য লোকসভা নির্বাচনে আদাজল খেয়ে নেমেছিলেন মমতা। মমতা গঠন করেছিলেন বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘ফেডারেল ফ্রন্ট’। ঘোষণা দিয়েছিলেন এবার ক্ষমতায় আসবে ফেডারেল ফ্রন্ট।

কিন্তু মমতার স্বপ্ন সফল হয়নি। সফল হয়নি তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের চেয়ে আরও বেশি আসনে জয়লাভ করে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসেন মোদি। আর মমতা যেখানে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনেই জয়ের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন, সেখানে ২২টি আসনে জেতেন। বিজেপি জেতে ১৮টি আসনে।

কেন মমতা হঠাৎ করে মোদির সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সবাই জানতে চান, যে মমতা জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরোধিতা করেছেন, আসামের এনআরসির বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়েছেন, ভারতের ভাষা নীতির বিরুদ্ধে হুংকার ছেড়েছেন, সেই মমতা কেন আচমকা মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন? সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আজ বিকেলের বৈঠকের পর।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন