পিএনএস ডেস্ক:মামলার ৭০ বছর পর ভারতের অযোধ্যায় মোগল আমলে তৈরি বাবরি মসজিদের জমির মালিক কারা সেই বিতর্কের নিষ্পত্তি করতে যাচ্ছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার রায় দেবেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে গড়া পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।
এ রায় ঘোষণাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। কাল রোববার থেকে শহরে জারি হচ্ছে কারফিউ। চারদিকে লোহার বেড়া আছে। খবর বিবিসির।
১৯৯২ সালে কট্টরপন্থী মৌলবাদী হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় কমবেশি ২০০০ লোক নিহত হয়েছিল।২৪ ঘণ্টা সেটিকে ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকশো সদস্য। আর এখন হাজার হাজার বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে অযোধ্যায়।
বাবরি মসজিদ মামলার রায়কে ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা হচ্ছে অযোধ্যা শহর সহ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে।
রাজ্যের সমস্ত স্কুল-কলেজ কয়েকদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়া নজর রাখা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমেও যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে। লাখনৌ আর জেলা সদরগুলিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
যে শহরকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে সেই অযোধ্যা- বিশেষ করে যে বিতর্কিত জমিতে বাবরি মসজিদ ছিল, সেখানকার নিরাপত্তাও কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, তার জন্য কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন, তা জানতে প্রধান বিচারপতি শুক্রবার ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আর পুলিশ মহানির্দেশককে।
এর আগে বৃহস্পতিবারই নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিতর্কিত জমিটি নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার ঠিক ৭০ বছর পরে অবশেষে রায় দিচ্ছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। আগামী সপ্তাহেই অবসর নেবেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তার আগেই যে তিনি এই ঐতিহাসিক এবং সাম্প্রতিক সময়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিতে চান, সে ঘোষণা আগেই করেছিলেন বিচারপতি গগৈ।
বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারে বারে দাঙ্গা হয়েছে।
কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়।
জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়। এরপর ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে - দুভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।
তার বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রীম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল।
কট্টরপন্থী হিন্দুরা দাবি করেন একটি রামমন্দির ভেঙ্গে মোগল আমলে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল েএবং বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল।
এদিকে, হিন্দু- মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নেতারা ঘোষণা করেছেন যে সুপ্রিম কোর্টের রায় তারা মেনে নেবেন। কিন্তু তার পরও আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা হচ্ছে অযোধ্যা শহর সহ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে।
পিএনএস/এএ
বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘিরে ভারতজুড়ে কড়া নিরাপত্তা
09-11-2019 11:41AM