হিন্দুরা পূজা করত, এমন ধারণায় বাবরি মসজিদের জমি গেল মন্দিরে

  10-11-2019 12:27PM


পিএনএস ডেস্ক: অযোধ্যার যে ২.৭৭ একর জমিকে বিরোধের মূল কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়, তা বরাদ্দ করা হয়েছে ‘রামলালা বিরাজমান’ বা হিন্দুদের ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের বিগ্রহকে, যার অর্থ সেখানে রামমন্দিরই তৈরি হবে। ভারতের শীর্ষ আদালতে পাঁচ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক আদালত এই রায় দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটিই ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।

অযোধ্যার বিতর্কিত জমির সবটাই যে কারণে হিন্দুদের দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, রাম চবুতরায় ‘দীর্ঘ নিরবচ্ছিন্ন অব্যাহত পূজার্চনা’ এবং অন্যান্য তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ চালানোর মাধ্যমে বাইরের অংশে দখলিস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। হিন্দু সাক্ষীদের যুক্তি অনুসারে মসজিদের ভেতরে কসৌটি পাথরের স্তম্ভে হিন্দুরা পূজা করতেন বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘মুসলিম সাক্ষীরা স্বীকার করেছেন, মসজিদের ভেতরে এবং বাইরে হিন্দু ধর্মের প্রতীক বর্তমান ছিল।’

তিন গম্বুজের সৌধে যে প্রবেশপথ তা নিয়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। ‘পূর্ব ও উত্তর দিকের দু’টি দরজার সম্ভাব্য একমাত্র কারণ এই যে, বাইরের চবুতরা হিন্দু ভক্তদের দখলে ছিল।’ এর ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘সম্ভাব্যতার ভারসাম্য বিচার করলে প্রমাণাদি থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে যে, হিন্দুরা বাইরের চবুতরায় ১৮৫৭ সালে ইট ও জাফরির দেয়াল তৈরি করা সত্ত্বেও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পূজা চালিয়ে গিয়েছেন।’

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘সব ঘটনাপ্রবাহ মিলিয়ে দেখলে বাইরের চবুতরায় তাদের দখল স্পষ্ট প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।’ ভেতরের অংশ নিয়ে শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরা অযোধ্যা দখলের আগে পর্যন্ত হিন্দুরা যে সেখানে পূজা করত এ সম্ভাবনাই ভারী।’

‘ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মাণের সময়কাল থেকে ১৮৫৭ সালের আগে পর্যন্ত একমাত্র তারাই যে ভেতরের অংশের কর্তৃত্ব ভোগ করত, সে কথা প্রমাণ করতে পারেনি মুসলিম পক্ষ।’ যদিও ভারতের ঐতিহাসিকরা মোটামুটি একমত যে, মুঘল আমলে বাবরের একজন সেনাপতি মির বাকি ১৫২৮ সাল নাগাদ অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর আগে এই স্থানে অন্য কিছুর অস্তিত্ব প্রমাণ হয়নি।

তা ছাড়া বাবরি মসজিদের জমির মালিকানার পক্ষে সব ধরনের প্রমাণ সুপ্রিম কোর্ট স্বীকার করেছে। অযোধ্যায় ১৫২৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায়ের বিষয়টিও বিচারকরা স্বীকার করেছেন।

অন্য দিকে মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিমদের অন্য জায়গায় পাঁচ একর জমি দেয়ার পেছনেও যুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৪৯ সাল থেকে এই বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে লড়ছে মুসলমানরা। অযোধ্যার ওই জমিতে তারা নামাজ পড়তেন এই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে পুরাতত্ত্ব বিভাগের দাখিল করা তথ্যে। তাই মুসলমানদের ওই জমির অধিকার না দেয়া হলেও তাদের মসজিদ তৈরির অধিকার না দেয়া হলে সেটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংবিধানবিরোধী। তাই আইন মেনেই মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি দেয়া হয়েছে।

‘ধর্ম ও বিশ্বাস নয়, আইন অনুযায়ী তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে’ রায় দেয়া হয়েছে দাবি করলেও এটিকে বিতর্কিত মনে করছেন হায়দরাবাদের নালসার আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফয়জান মুস্তাফা। তিনি বলেছেন, ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিচারকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আইনের শাসনের ওপর ধর্মের খড়গ পড়েছে। কারণ বিচারকরা বলেছেন, হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস নিয়ে তাদের কিছু করার নেই এবং যদি তারা বিশ্বাস এখানে রাম জন্ম গ্রহণ করেছেন... তাহলে আমাদের তা মেনে নিতে হবে। ধর্মের ক্ষেত্রে বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয় তখন তা কি ভিত্তি হতে পারে? প্রশ্ন রাখেন ভিসি ফয়জান মুস্তাফা। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন