ন্যাটো সম্মেলনে এরদোগানের দিকে দৃষ্টি সবার

  03-12-2019 01:22PM


পিএনএস ডেস্ক: মঙ্গলবার ইংল্যান্ডে শুরু হচ্ছে দুই দিনের ন্যাটো সম্মেলন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর ২৮টি সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনেতারা একত্রিত হবেন সম্মেলনে। এই জোটকে কিভাবে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে এবারের সম্মেলনে।

তবে এই সম্মেলন এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন- ন্যাটো জোটকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বেশি ছন্দহীন মনে হচ্ছে। মাত্র দুই দিন আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ন্যাটোর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এর জবাব হিসেবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, ন্যাটোর নয়, ম্যাক্রোঁরই ব্রেন ডেথ হয়েছে। এছাড়া ভূমধ্যসাগর নিয়ে দুই সদস্য রাষ্ট্র তুরস্ক ও গ্রিসের বিরোধ। সিরিয়া নিয়ে ফ্রান্সের সাথে তুরস্কের বিরোধ। রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা অগ্রাহ্য করেছে তুরস্ক।

এরদোগান-ম্যাক্রোঁ বাকযুদ্ধের আগে অবশ্য তুরস্কের সাথেই ন্যাটোর শীতল সম্পর্ক চলছিল কিছুদিন ধরে। বিশেষ করে ন্যাটোর বাধা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছিল আমেরিকা ও ন্যাটো।

তাই এবারের ন্যাটো সম্মেলনে সবার দৃষ্টি থাকবে তুর্কি প্রেসিডেন্টের ওপর। ধারণা করা হচ্ছে, আসল এজেন্ডার বাইরে তুরস্ককে ঘিরে থাকা বিষয়গুলোই হয়ে উঠবে ন্যাটো সম্মেলনের আলোচনার মূল বিষয়। রজব তাইয়েব এরদোগানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, সিরিয়া ইস্যু ও তুরস্কের ওপর সন্ত্রাসবাদের হুমকির বিষয়গুলো তুলে ধরবেন সম্মেলনে।

উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের গঠিত সেফ জোনের বিষয়ে ন্যাটো রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চাইতে পারেন এরদোগান। এই সেফ জোনের মাধ্যমে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া কয়েক লাখ সিরীয় নাগরিককে(যারা উত্তর সিরিয়ার বাসিন্দা) দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে আঙ্কারা।

অন্য দিকে ফ্রান্সসহ কোন কোন রাষ্ট্র সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান এবং পোল্যান্ড ও বাল্টিক অঞ্চলের জন্য ন্যাটোর প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার বিরোধীতা করছে।

গত মাসে ন্যাটোর বাল্টিক প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় ভেটো দিয়েছে তুরস্ক। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, কুর্দী সশস্ত্র সংগঠন ওয়াইপিজিকে তুরস্কের প্রতি হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে আনিত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ বাধা দেয়ায় তুরস্ক পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ওই পদক্ষেপ নিয়েছে।

তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, এক বিষয়ে সমর্থন আদায়ের জন্য অন্য আরেকটি বিষয়ে বাধা দেয়া ন্যাটো জোটের পুরনো কৌশল। অর্থাৎ সিরিয়া ইস্যুতে সমর্থন আদায় করতে তারা বাল্টিক প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকে দরকষাকষির হাতিয়ার করেছ।

এবারের ন্যাটো সম্মেলনে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের এই বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্রিক ও সাইপ্রাসের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়ে আপত্তি তুলতে পারে তুরস্ক। সম্প্রতি তারা এ বিষয়ে গ্রিসকে বাধা দিতে লিবিয়ার সাথে একটি চুক্তিও করেছে। গ্রিস ও তুরস্ক- উভয় দেশই এ ইস্যুতে ন্যাটোর সমর্থন পেতে চাইবে।

এছাড়া সিরিয়া নিয়েও তুমুল বিতর্ক হতে পারে। গত সপ্তাহে ফরাসি প্রেসিডেন্টের আপত্তির পর এরদোগান বলেছিলেন, আপনি আজ হোক কাল হোক সিরিয়ায় তুরস্কের সন্ত্রসবিরোধী অভিযানকে সঠিক বলে মানবেন।

তাই সব কিছু ছাপিয়ে এবারের ন্যাটো সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারে তুরস্ক কেন্দ্রিক। সাম্প্রতিক যে বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তার প্রায় প্রতিটির সাথে তুরস্ক জড়িত। তাই সম্মেলনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের দিকে চোখ থাকবে সবার। এরদোগান তার দেশের অবস্থানের পক্ষে ন্যাটো মিত্রদের সমর্থন কতটা আদায় করতে পারেন কিংবা কতটা ছাড় দেন সেটি দেখার বিষয়।

এর আগে সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের সময় তিনি সফলভাবেই যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান ও সিরিয়ার বাশার সরকারকে রাজি করিয়ে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। নিজেদের সীমান্ত থেকে তাড়িয়েছেন ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের। ইংল্যান্ড এরদোগান কতটা সফল হবে সেটি জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে দুই দিন।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন