ইউক্যালিপটাস গাছের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আগুন ছড়িয়েছে?

  19-01-2020 09:37PM

পিএনএস ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া দাবানলে কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছেন। বিধ্বস্ত হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি ঘর এবং লাখ লাখ একরের জমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

স্মরণ কালের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়তে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত একটি গাছ ইউক্যালিপটাস সাহায্য করেছে কীনা সেটা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। এই গাছটি গাম ট্রি নামেও পরিচিত।

অস্ট্রেলিয়ায় মোট বনাঞ্চলের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি জায়গা জুড়ে আছে ইউক্যালিপটাস গাছ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গাছের অরণ্যে খুব সহজেই আগুন লেগে যেতে পারে।

ইউক্যালিপটাসের ছাল বাকল তার কাণ্ড ও ডাল পালা থেকে এমনভাবে ঝুলে থাকে যে আগুন খুব দ্রুত গাছের উপরের দিকে উঠে যেতে পারে।

তার পর বাতাসের সাহায্যে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে আশে পাশের গাছপালায়, সেখান থেকে পুরো অরণ্যেও।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছপালায় অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ড. জেন কওসন বলেছেন, এই গাছের ছাল বাকলে যখন আগুন লেগে যায়, তখন সেটা বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। নতুন করেও আগুন লাগাতে পারে আরেকটি জায়গায়।"

এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় স্পটিং। এতে আগুন ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে যেতে পারে এবং এটা নেভানোও খুব কঠিন।

"এই গাছ আগুনের মাত্রাকে আরো বৃদ্ধি করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা হয় স্পটিং এর মাধ্যমে," বলেন ড. কওসন।

কিছু কিছু ইউক্যালিপটাস গাছের পাতার মধ্যে এক ধরনের তেল থাকে যেটা খুব সহজেই আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। আগুন লেগে গেলে এই তেলের কারণে সেটা খুব দ্রুত পুড়েও যায়।

এছাড়াও ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে এমন সব ঘাস ও গাছপালা থাকে যেগুলোতেও খুব দ্রুত আগুন লেগে যেতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সময়ের সাথে সাথে এসব গাছপালা শুষ্ক ও খরা পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এসব জায়গায় আগুন লাগাও নিয়মিত ঘটনা।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরকম পরিস্থিতিতে ইউক্যালিপটাস গাছ কিন্তু নিজেকে রক্ষাও করতে পারে।

কিছু কিছু গাছ এমন ক্ষমতাও অর্জন করেছে যার ফলে দাবানলের মধ্যেও এগুলো বেঁচে থাকতে পারে, পুড়ে গেলেও পারে সেরে উঠতে।

পুড়ে যাওয়া বৃক্ষের ডালপালা থেকেও নতুন করে গজিয়ে ওঠতে পারে সবুজ কচি পাতা।

আগুনে পুড়ে যাওয়ার সময় তাদের বীজকোষ বা ক্যাপসুল থেকে বীজ বের হয়ে আসে যার সাহায্যে সেখানে নতুন করে গাছ বেড়ে উঠতে পারে।

তবে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, বনের একই এলাকা যদি খুব তীব্র আগুনে অল্প সময়ের মধ্যে একবারের বেশি ভস্মীভূত হয়, যেরকমটা অস্ট্রেলিয়াতে হয়েছে, সেখানে নতুন করে ইউক্যালিপটাসের চারা গজাতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে।

এই গাছের কোন বিকল্প আছে?
প্রাকৃতিক-ভাবে সৃষ্ট এসব বনাঞ্চলে আছে নানা ধরনের গাছপালা ও বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি।

ড. কওসন বলেছেন, ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে অন্য কোন গাছ লাগানোর ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ে কোন আলোচনা নেই।

সেসব এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসীরা নানা কাজে এই ইউক্যালিপটাস গাছ ব্যবহার করে থাকে। তার মধ্যে রয়েছে এর কাঠ দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি থেকে শুরু করে এই গাছের তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা।

এসব গাছপালার অরণ্য কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন এবং আগুন লাগলে সেটা কিভাবে প্রতিরোধ করা দরকার সেসব নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে অস্ট্রেলিয়ায়।

তার মধ্যে একটি হচ্ছে পরিকল্পনা করে 'নিয়ন্ত্রিত আগুন' লাগানো। এনিয়েও রয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

অন্যান্য দেশেও আছেএই গাছ

অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে গিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে গাছটি সবচেয়ে বেশি লাগানো হয়েছে সেটি হচ্ছে ইউক্যালিপটাস গ্লোবোলাস প্রজাতির।

"ইউক্যালিপটাসের যতো প্রজাতি আছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে কম দাহ্য। তবে এটাও ঠিক যে অন্যান্য দেশের স্থানীয় গাছপালার তুলনায় এই গাছটির দাহ্যতা বেশি," বলেন যুক্তরাজ্যে সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দাবানল বিশেষজ্ঞ স্টেফান ডোয়ার।

এসব গাছ ক্যালিফোর্নিয়া এবং পর্তুগালে দাবানল ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছে।

পর্তুগালের ২০১৭ সালে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের জন্যে ইউক্যালিপটাসকে অন্যতম একটি কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কাগজ তৈরির জন্য দেশটির মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে এই গাছটি লাগানো হয়েছে। পরিবেশবাদী একটি গ্রুপ পাইন গাছ কেটে সেখানে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানোর সমালোচনা করেছে।

স্থানীয় গাছপালার জন্যে হুমকি হওয়ার পরেও অনেক দেশে খুব দ্রুত বনায়নের লক্ষ্যে এই গাছটি লাগানো হয়। এর পেছনে বাণিজ্যিক কারণও আছে। কারণ এটি খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন