আরও ছড়িয়েছে রহস্যময় ভাইরাস, বাংলাদেশে সতর্কতা!

  21-01-2020 09:07AM

পিএনএস ডেস্ক: চীনে রহস্যময় এক নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। চীনের কর্তৃপক্ষ গত দুইদিনে ১৩৯ জন এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। খবর: বিবিসি বাংলা।

গত ডিসেম্বরে ইউহান শহরে প্রথম যে সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাকে করোনাভাইরাস বলে শনাক্ত করেছিল। গত সপ্তাহেই সিঙ্গাপুর, হংকং, সান ফ্রান্সিসকো, লস এঞ্জেলস এবং নিউইয়র্কে চীন থেকে আগত ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছিল।

এবার বাংলাদেশেও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও স্ক্রিনিং শুরু করার কথা জানানো হল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।

ইউহানের পর চীনের নতুন নতুন শহরেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে আছে বেইজিং এবং শেনঝেন শহরের বাসিন্দারাও।

এদিকে, থাইল্যান্ড এবং জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়া আজ (সোমবার) জানাচ্ছে সেখানেও এই একই ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দুইশো ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে অন্ততঃ তিন জন।

বাংলাদেশে সর্তকতা:

ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর বলছে, তারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে, কারণ চীন থেকে আসা সব বিমান এই বিমানবন্দর দিয়েই ওঠানামা করে। এছাড়া অন্যান্য বন্দরেও চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশে এখনও করোনাভাইরাসে কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করে আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডাঃ সেবরিনা বলেন, স্বাস্থ্য-কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

বিমান বন্দরে স্থাপিত হেলথ ডেস্কে এসব কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। যেসব ফ্লাইট চীন থেকে আসছে সেসব ফ্লাইটের যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, "যারা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা- জ্বর,কাশি,গলাবাথ্যা এসব নিয়ে আসছেন তাদের চেক করা হচ্ছে"।

আইইডিসিআর চারটি হটলাইনও খুলেছে। তারা বলছে, উল্লেখিত লক্ষ্মণগুলো কারো মধ্যে দেখা গেলে এসব হটলাইনে ফোন করে জানাোর জন্য।

নম্বরগুলো হচ্ছে:

০১৯৩৭১১০০১১

০১৯৩৭০০০০১১

০১৯২৭৭১১৭৮৪

০১৯২৭৭১১৭৮৫
আইইডিসিআর বলছে, কারও শরীরে এর কোনও লক্ষণ দেখা গেলে তারা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখবেন। এছাড়া বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন, এয়ারলাইন্সগুলো এবং এভিয়েশনে কাজ করা সবাইকে সচেতনও করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বিমানবন্দরে যে এলইডি মনিটর রয়েছে সেখানে রোগের লক্ষণগুলো জানানো হচ্ছে এবং এবং কারও যদি এই লক্ষণগুলো থাকে তার হেলথ ডেস্কে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।

সংক্রমণ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?

আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে তা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। চীনের কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সংক্রমণ যে ভাইরাসের কারণে হচ্ছে সেটি আসলে এক ধরণের করোনাভাইরাস।

অনেক ধরণের করোনাভাইরাস রয়েছে, কিন্তু শুধু ছয় ধরণের ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। নতুন ভাইরাস-সহ এটি হবে সপ্তম।

একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা দেয় সাধারণ সর্দি, কিন্তু মারাত্মক ধরণের সংক্রমণ বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে সার্স হচ্ছে এক ধরণের করোনাভাইরাস। যাতে ২০০২ সালে ৮০৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং এদের মধ্যে ৭৭৪ জন মারা গিয়েছিল।

ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য (জেনেটিক কোড) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষকে আক্রান্ত করা অন্য করোনাভাইরাসের তুলনায় সার্সের সাথে এটির বেশি মিল রয়েছে।

ভাইরাসটা কি ছোঁয়াচে?

প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেছিলেন যারা চীনের ইউহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোন মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি। অবশ্য এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনো খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

ডা. সেবরিনা ফ্লোরা বলছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তারা আশঙ্কা করছে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে তবে এখনও এত বৃহৎ পরিসরে ভাবছে না সংস্থাটি। এবং ভাইরাসটা ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।

তিনি বলছিলেন, যখন শ্বাসতন্ত্রের অসুখ হয় তখন হাঁচি, কাশি থেকে আরেক জন সংক্রমিত হতে পারে এটা ভেবে নিয়েই আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ যদি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় তাহলে অতি দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন