চীনে ভালোবাসা দিবস নেই

  15-02-2020 02:01AM



পিএনএস ডেস্ক: করোনাভাইরাসে যখন প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, আতঙ্ক ছড়িয়েছে অচেনা এই রোগের উৎসভূমি চীন থেকে বিশ্বজুড়ে, সেই সময়ে ভালোবাসা প্রকাশের বিশেষ দিনটি এবার আসছে ভিন্ন চেহারা নিয়ে।

ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এই দিনে ভালোবাসার মানুষকে চুম্বন ও আলিঙ্গন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সেই বাস্তবতায় বছরের যে সময়ে তুমুল ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হত চীনের বড় শহরগুলোর রেস্তোরাঁ মালিকদের, সেই সময়ে ফাঁকা পড়ে থাকছে ওই সব রেস্তোরাঁর চেয়ার-টেবিলে আর মদের বোতলগুলো।

ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সারা বিশ্বের মানুষের বিচরণমুখর সিঙ্গাপুরেও ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে কালো ছায়া নিয়ে এসেছে করোনাভাইরাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ২৫টি দেশে আড়াইশর বেশি মানুষের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরেই আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫৮ জন।

আর চীনে এরইমধ্যে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ লক্ষ পেরিয়েছে, মৃত্যু হয়েছে হাজারের বেশি মানুষের।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখনও অচেনা এই রোগের প্রকোপ চীনের মানুষের মধ্যে যে ভীতি ছড়িয়েছে, তার প্রভাবে সুর হারিয়েছে আনন্দ-উচ্ছ্বলতার ভ্যালেন্টাইনস ডে।

চীনের বাণিজ্য নগরী সাংহাইয়ের সিউল অ্যান্ড সিউল রেস্তোরাঁর মালিক বিল হু’র কথায়ও ফুটে উঠল সেই চিত্র।

অন্য সময় ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে বিশেষ মেন্যু ও রিজার্ভের বুকিং নিয়ে গলদঘর্ম হতে হলেও ‘এ বছর রিজার্ভের সংখ্যা প্রায় শূন্য’ বলে জানালেন তিনি।

গত বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে তে ১৭০ জন ক্রেতাকে খাবার পরিবেশনকারী এই রেস্তোরাঁ মালিক বলেন, ‘হঠাৎ করে এই ভাইরাস মহামারি এসেছে।’

‘এ বছরও অনেকে বুকিং দিয়েছিল, তারা সবাই ফোন করে তা বাতিল করেছে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ভাষ্য মতে, করোনাভাইরাসের প্রকোপে চীনের বহু ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদেরই একজন বিল হু। এই রোগ দেখা দেওয়ার পর চীনের এক শহর থেকে আরেক শহরে ভ্রমণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, লোকজনকে ঘরে থাকতে বলছে কর্তৃপক্ষ, যাতে দৃশ্যত ভুতুড়ে চেহারা নিয়েছে বড় শহরগুলো।

সাংহাইয়ের হেরিটেজ বাই মেডিসন রেস্তোরাঁর শেফ অস্টিন হু বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ‘জঘন্য’ অবস্থা।

‘এখন পর্যন্ত ভ্যালেন্টাইনস ডে দুঃখের বার্তাই নিয়ে এসেছে, এই মুহূর্তে আমাদের মাত্র একটি বুকিং আছে।’

পরিস্থিতি আগের মতো হতে আরও অনেক সময় লাগবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আসল প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা সেই পর্যন্ত টিকে থাকতে পারব কি না।’

করোনাভাইরাসের কারণে এবার চান্দ্রবর্ষের ছুটি উদযাপনেও লাগাম টানে চীন কর্তৃপক্ষ। চীনাদের ভ্রমণের বড় এই মৌসুমে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটন খাত। ওই ছুটি শেষে ১০ ফেব্রুয়ারি অফিস চালু হলেও সহজ হয়নি মানুষের জীবনযাপন।

ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়ে ব্যবসার ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে চাইছেন কেউ কেউ। তবে কর্মী সংকটে সেই কাজও করতে পারছেন না অন্যরা।

আবার অনেকেই বলছেন, এবার তারা ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপনের মানসিকতায় নেই।

টানা ১০ দিন ঘরের মধ্যে থাকার পরেও বিশেষ এই দিনে স্বামীর সঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেয়া ডিনা লি বলেন, ‘একবেলা খাওয়ার জন্য আমি জীবনের ঝুঁকি নিতে যাচ্ছি না।’

‘বাইরে গিয়ে খাওয়ার বদলে আমি শুধু কেএফসি ও ম্যাকডোনাল্ডে খাবারের অর্ডার দিয়েছি, যেহেতু বড় ব্র্যান্ডগুলো ফুড সেইফটি নিশ্চিত করে থাকে।’

সাংহাই শপিং মলের সিউল অ্যান্ড সিউল রেস্তোরাঁর হু বলেন, এই সংকটের সমাধান কবে হবে তা নিয়েই উদ্বিগ্ন তিনি। ঘর ভাড়া, কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এরইমধ্যে তার সাত লাখ ইউয়ান ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

‘আমাদের মধ্যে যাদের এখন কোনো আয় নেই, আমাদের সম্ভবত আর এক থেকে দুই মাস চলার টাকা থাকবে।’

পিএনএস/হাফিজ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন