উকুনের ওষুধে করোনা প্রতিরোধের দাবি অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের

  05-04-2020 11:36AM

পিএনএস ডেস্ক : উকুন মারার ওষুধ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর বলে দাবি করছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের একদল গবেষক। তারা বলছেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে একটি ওষুধ পাওয়া গেছে। এটি একধরনের অ্যান্টি–প্যারাসিটিক ওষুধ। সাধারণত, এটি উকুন মারারা কাজে ব্যবহৃত হয়। তারা জানিয়েছেন, এই ওষুধটি ব্যবহার করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাসটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন।

মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত উকুন মারার ওষুধ ‘আইভারমেক্টিন’–এর উচ্চমাত্রার ব্যবহার মানুষের কোষে বাড়তে থাকা করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধি থামাতে পারে। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ‘আইভারমেক্টিন’ করোনা ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি রোধ করে দেয়। তবে এটি মানুষের মধ্যে পুরোমাত্রায় কার্যকর কি না এবং কী পরিমাণে প্রয়োগ নিরাপদ, তা এখনো গবেষকরা নির্ণয় করতে পারেননি। তারা বলছেন, পরবর্তী পদক্ষেপটি হলো সঠিক প্রয়োগ ও পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং সেটি মানুষের জন্য নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করা।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউট ও পিটার দোর্টি ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে।

গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক কাইলি ওয়াগস্টাফ। তিনি বলেন, বর্তমান ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কারণ, ওই ওষুধটি এর আগে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং যুক্তিযুক্তভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায়ও রয়েছে। সাধারণ ভাষায় এই ওষুধটি কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বজুড়ে মাথার উকুন এবং স্ক্যাবিস ধরনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

কাইলি ওয়াগস্টাফ বলছেন, যেহেতু এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ওষুধ, যদি প্রাক-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় পর্যাপ্ত কার্যকারিতা পাওয় যায়, তবে এটিকে সরাসরি মানুষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে। এখন কেবল কার্যকারিতা খোঁজা হচ্ছে।

কাইলি ওয়াগস্টাফ আরও বলেন, যদি আইভারমেক্টিন নামের ওষুধটি কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত এটি দ্রুত ব্যবহার করা যাবে। তিনি বলেন, এটি অবশ্যই বিবেচনা করার মতো। সতর্কভাবে এগোতে হবে। এখন প্রাক-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য তহবিল প্রয়োজন।

এ ছাড়া গবেষণাগারে আইভারমেক্টিন নামের ওষুধটি এইচআইভি, ডেঙ্গু ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যদিকে এই গবেষণায় জড়িত গবেষকদের কাজের প্রশংসা ককরে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনি মিকাকোস এই ওষুধটির অপব্যবহার না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শিশুদের চুলের উকুনের চিকিৎসা ছাড়া এই ওষুধ এখনই কেউ কিনবেন না। কারণ, আমরা দেখেছি, বিদেশে কিছু লোক কিছু ওষুধের কথা শুনেই সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত উপায়ে ব্যবহার করে মারা গেছে।’

এদিকে অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৫০ জন এবং মারা গেছে ৩০ জন।

উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৮০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৬৯১ জন।

এছাড়া বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৪ হাজার ৮০০ জন। যা একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১২ লাখ ১ হাজার ৪৭৬ জন। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৮ জন সুস্থ হয়েছে।

সবমিলিয়ে, বর্তমানে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৩১৮ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩০ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর ৪২ হাজার ২৮৮ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।

ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ১১ হাজার ৩৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৫২ জনের। ইতালিতে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৩২ জন আক্রান্ত, বিপরীতে মারা গেছে ১৫ হাজার ৩৬২ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে।

এছাড়া স্পেনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ১৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর ১১ হাজার ৯৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে ৯৬ হাজার ৯২ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১ হাজার ৪৪৪। চীনে আক্রান্ত ৮১ হাজার ৬৬৯, মৃত্যু ৩ হাজার ৩২৯। ফ্রান্সে আক্রান্ত ৮৯ হাজার ৯৫৩, মৃত্যু ৭ হাজার ৫৬০। ইরানে আক্রান্ত ৫৫ হাজার ৭৪৩, মৃত্যু ৩ হাজার ৪৫২। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৪১ হাজার ৯০৩, মৃত্যু ৪ হাজার ৩১৩ জন।

এছাড়া ভারতে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ গেছে ৯৯ জনের। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮১৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪১ জন মারা গেছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছে বিপরীতে প্রাণ গেছে ৮ জনের।

এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন