ফরাসী পণ্য বর্জনের ডাক দিলেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

  27-10-2020 01:42PM


পিএনএস ডেস্ক: কট্টর ইসলামের বিরুদ্ধে ফ্রান্স সরকারের কঠোর অবস্থান নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান ফরাসী পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।

টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি মুসলমানদের রক্ষা করার আহ্বান জানান "যদি ফ্রান্সে মুসলমানেরা দমন-পীড়নের শিকার হন"।

ধর্মনিরপেক্ষতা কথা বলে ইসলামের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর ক্ষুব্ধ সমালোচনা করেন মি. এরদোয়ান।

ইসলামের নবীর কার্টুন প্রদর্শনের জেরে এক শিক্ষককে হত্যার ঘটনার পর চলা ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে এমন অবস্থান ব্যক্ত করেন মি. এরদোয়ান।

আব্দুল্লাহ আনজোরোভ নামে এক ব্যক্তি গত ১৬ই অক্টোবর স্যামুয়েল প্যাটি নামের ওই স্কুল শিক্ষককে গলা কেটে হত্যা করে।

স্যামুয়েল প্যাটি তার ছাত্রদের সামনে বাকস্বাধীনতার উদাহরণ দেখাতে গিয়ে ইসলামের নবীর ওপর করা একটি কার্টুনের ছবি দেখান।

এরপর প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ নিহত স্যামুয়েল প্যাটির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, "ফ্রান্স কার্টুন থেকে মুখ ফেরাবে না।"

ইসলামের যে কোনো ধরণের চিত্রায়ন বা অঙ্কন ইসলামে নিষিদ্ধ এবং এটা অনেক মুসলমানের অনুভূতিকে আঘাত করে থাকে।

তবে ফ্রান্সের জাতীয় পরিচয়ের অন্যতম ব্যাপার হলো ধর্মনিরপেক্ষতা।

যেখানে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর অনুভূতিকে কেন্দ্র করে বাকস্বাধীনতা খর্ব করাকে ফ্রান্স সরকার অনুমতি দেবে না বলে জানিয়েছে।

কী নিয়ে বিরোধ : তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে মি. এরদোয়ান সোমবার বলেন, "এখন কোন পণ্য কখনোই কিনবেন না যেটির লেবেলে ফ্রান্সকে কৃতিত্ব দেয়ার উল্লেখ আছে।"

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে ইহুদিদের প্র্রতি যে আচরণ করা হতো এখন মুসলিমদের ওপর একই চর্চা চলছে বলেও উল্লেখ করেন এরদোয়ান।

ঘৃণার চর্চা বন্ধ করতে ইউরোপের নেতাদের তিনি এগিয়ে আসতে বলছেন।

ইসলাম নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এতো কড়া কথা বলার কারণে এর আগে এরদোয়ান বলেছিলেন, মি ম্যাক্রঁর উচিৎ নিজের মানসিক সুস্থতা নিয়ে ভাবা।

এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স তুরস্কের দূতকে তলব করেছে।

মি. প্যাটিকে হত্যার জের ধরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট 'ধর্মনিরপেক্ষতা' রক্ষায় অবস্থান নেন এবং 'উগ্র ইসলাম'-এর বিপক্ষে অবস্থান নেন।

এই হত্যাকান্ডের দুই সপ্তাহ আগেই মি. ম্যাক্রঁ ইসলাম ধর্ম 'সংকটে' আছে বলে বিবৃতি দেন।

ফ্রান্সে পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে বেশি মুসলিম বাস করে। কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ 'ধর্মনিরপেক্ষতা'কে পুঁজি করে মুসলিমদের টার্গেট করছে।

কী প্রতিক্রিয়া আসছে : ইউরোপিয়ান নেতারা ফ্রান্সের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।

জার্মানি ফ্রান্সের সাথে সংহতি জানিয়েছে।

জার্মান মুখপাত্র এরদোয়ানের বক্তব্যকে 'অগ্রহনযোগ্য ও মানহানিকর' বলেছে।

নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট বলেছেন, তারা ফ্রান্সের পাশে আছে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সামগ্রিক মূল্যবোধকে তারা এগিয়ে রাখবেন।

ইতালিও ফ্রান্সের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে।

তবে ফ্রান্সের বিপক্ষে তুরস্কের সাথে যোগ দিয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, ফ্রান্সের বিপক্ষে ইসলামকে আক্রমণ করার অভিযোগ তুলেছেন।

কুয়েত, জর্ডান ও কাতারের কিছু দোকান থেকে ফরাসী পন্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াতেও আন্দোলন হয়েছে ফ্রান্সের বিপক্ষে।

গুজব ছড়িয়েছিল ফ্রান্সের ফুটবলার পল পগবা ফ্রান্স কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের পর ফ্রান্সের হয়ে খেলবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এরপর তিনি নিজেই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই তথ্যকে 'মিথ্যা' বলেছেন।

তুরস্কের পরিসংখ্যান বিভাগের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, তুরস্ক যে সব দেশ থেকে আমদানি করে তার মধ্যে ফ্রান্স দশম অবস্থানে আছে।

ফরাসী গাড়ির কোম্পানি রেনল্ট তুরস্কে বহুল ব্যবহৃত একটি গাড়ি। সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন