সারারাত আটকে থাকার পর ভোরে মুক্ত ইয়াঙ্গুনের বিক্ষোভকারীরা

  09-03-2021 11:24AM


পিএনএস ডেস্ক: মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের সানছাউং ডিস্ট্রিক্টে নিরাপত্তা বাহিনী ঘেরাও করলে অন্তত দুই শ’ বিক্ষোভকারী আটকা পড়েছিলেন। সারা রাত আটকে থাকার পর মঙ্গলবার ভোরে পালাতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তবে পুলিশ ওই এলাকা থেকে অন্তত ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে।

১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সানছাউং ডিস্ট্রিক্টে এক মাসের বেশি সময় দৈনিক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।

সোমবার পুলিশ সানছাউং ডিস্ট্রিক্টে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ও স্টান গ্রেনেড ছোঁড়ে। বিক্ষোভকারীরা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ওই এলাকার বাড়িতে-বাড়িতে বিক্ষোভকারীদের সন্ধান করে। এই সময় তারা হুমকি দিয়ে বলে, কোনো বিক্ষোভকারীকে কেউ লুকিয়ে রাখলে তাকে শান্তি দেয়া হবে।

তরুণী বিক্ষোভকারী শার ইয়া মন ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে টেলিফোনে জানান, আরো ১৫-২০ জনের সাথে তিনি একটি ভবনে লুকিয়ে ছিলেন, কিন্তু এখন তিনি নিজের বাড়িতে ফিরেছেন।

তিনি জানান, বিক্ষোভকারীদের পালাতে অনেকেই গাড়ি দিয়ে সাহায্য করেছে এবং মানুষ বিক্ষোভকারীদের সহায়তা করছে।

শার ইয়া মন স্বৈরতন্ত্রের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় প্রকাশ করেন।

অপর এক বিক্ষোভকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর চলে যাওয়ার পর তারা ভোর ৫টায় ওই এলাকা ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন।

এক মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, সানছাউংয়ে পুলিশ অন্তত ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে।

সামরিক প্রশাসনের এক মুখপাত্রের কাছে এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এর আগে বিক্ষোভকারীদের আটকে পরার পর জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় বিক্ষোভকারীদের চলে যাওয়ার অনুমতি দিতে আহ্বান জানায়।

ইয়াঙ্গুনের ভবনে 'আটকে পড়া' বিক্ষোভকারীদের ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জাতিসঙ্ঘের
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভিতে সোমবার বলা হয়, ‘সরকারের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে এবং যখন দাঙ্গা মেটাতে গিয়ে হতাহতের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, বেশিরভাগ লোক যারা স্থিতিশীলতা চান, তারা আহ্বান করছেন দাঙ্গা দমনে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার।’

এদিকে সোমবারের বিক্ষোভে উত্তর মিয়ানমারে ও ইরাবতীর বদ্বীপে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

সোমবার অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ডাকে মিয়ানমারজুড়ে ধর্মঘট পালন করা হয়।

১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় দেশটিতে ৬৫ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছেন। অপরদিকে অভ্যুত্থানের পর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে। সূত্র : রয়টার্স

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন