রোজার বহুমাত্রিক সুবিধা

  30-05-2017 04:35PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : শুরু হয়েছে রহমত, বরকত এবং মাগফিরাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এক মাস রোজা রাখেন। সব দেশে রোজার সেহরি ও ইফতারের সময় সমান নয়। কোনো দেশে কম-বেশি হয়। অথচ তারা রোজা পালনে মোটেও কার্পণ্য করেন না।

ঋতুর পরিক্রমায় ক’বছর ধরে আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়টি হলো প্রায় ১৫ ঘণ্টার বেশি। বিশ্বে এমন সব দেশ আছে, যেখানে কখনো সূর্যাস্ত যায় না। আবার কিছু দেশ আছে, যেখানে মাত্র ৫৫ মিনিটের জন্য সূর্যাস্ত যায়। এমন দেশও মুসলমানরা রমজানের রোজা পালন করেন।

সুমেরু বলয়ে থাকা দেশগুলোয় রোজা রাখা আসলেই বেশ কষ্টকর। কেননা সেখানে এমন কিছু দেশ আছে, যেখানে সূর্য অস্ত যায় না বা মাত্র দুয়েক ঘণ্টার জন্য সূর্য অস্ত যায়। এসব দেশের মধ্যে আছে নরওয়ে, লেপল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ইত্যাদি। ফিনল্যান্ডে মাত্র ৫৫ মিনিটের জন্য সূর্য অস্ত যায়। তার পরও সেসব দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিয়মিত রোজা পালন করেন।

যে দেশে মাত্র ৫৫ মিনিটের জন্য সূর্যাস্ত যায়, সেখানের মুসলমানরা ২৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট রোজা পালন করেন। সে তুলনায় আমাদের খুব বেশি সময় রোজা রাখতে হয় না। তার পরও অনেকে রোজা পালনে অমনযোগী। রোজার নেয়ামত থেকে তারা ইচ্ছাকৃত দূর থাকছে। রোজার দুনিয়া-আখেরাতের বহুমাত্রিক উপকার থেকে তারা নিজেদের বঞ্চিত করছে।

ফিনল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশি মোহাম্মদ বলেন, ১টা ৩৫ মিনিটে তাদের রোজা শুরু হয় এবং শেষ হয় পরের দিন ১২টা ৪৮ মিনিটে। মোট ২৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট রোজা রাখতে হয় তাদের। তার ভাষায়, ‘আমার যেসব বন্ধু, পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়রা বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন, তারা বিশ্বাস করতে পারেন না যে আমরা ২০ ঘণ্টার বেশি রোজা রাখতে পারি।’

যেসব দেশে বেশি সময় রোজা পালন করতে হয়, তারা নিজেদের মতো পদ্ধতি তৈরি করে নিয়েছেন। যেমন ল্যাপল্যান্ডে সূর্যাস্ত হয় না। সেখানকার মুসলমানরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সময় মিলিয়ে সিয়াম সাধনা করেন। মহান আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আন্তরিকতার কারণেই তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সময় মিলিয়ে রোজা পালনে সক্ষম।

আল্লাহ তায়ালা দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসব্যাপী রোজা পালন করাকে ফরজ করেছেন। যাদের মাঝে রোজা পালন করার শর্তাবলী থাকবে, তাদের জন্য রমজানের রোজা পালন করা ফরজ। কারণ আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের রোজা বান্দার জন্য ফরজ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা এই (রমজান) মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৫)।

শারীরিক, মানসিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে রোজার গুরুত্ব অত্যধিক। এই রোজা পালনে শারীরিক সব রকম যোগ্যতা থাকার পরও অনেকে ফাঁকিবাজি করছে। এই ফাঁকিবাজি মূলত তারা নিজের সঙ্গেই করছে। জেনে-বুঝে নিজেকে ঠকানোর এমন কাজ বেকুব ছাড়া আর কারো দ্বারা সম্ভব নয়। যে রোজার বদলা স্বয়ং রাব্বুল আলামিন দেবেন, সে সুযোগ লুফে না নেয়া চরম বোকামি বৈকি।

রোজা রাখার মধ্য দিয়ে দরিদ্রদের কষ্ট অনুভব করা যায়। আবার শরীরের জাকাতও হয়ে যায়। যাদের অধিক মেধ-ভূড়ি, তাদের জন্য রোজা যারপরনাই উপকারী। যারা ডায়াবেটিসে ভোগেন, নিয়ম মেনে চলা তাদের উপরিহার্য- রোজা তাদের সে নিয়ম পরিপূর্ণভাবে মানতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। রোজায় এসব রোগ উপশম না হলেও নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

অনেক রোগী আছে, যারা রোজায় রোগমুক্ত থাকেন। বহুরূপী খাদক আছে, তারাও নিজেকে সংযত রাখেন রোজা পালনের মধ্য দিয়ে। যাদের অনেক রকম বদ অভ্যাস আছে, তারা রোজায় এসব ত্যাগে সক্ষম হন। বিড়ি-সিগারেটের মতো নেশা পরিত্যাগে এই রোজায় অনেকে সফল হন। রোজা পালনে যারা অনিচ্ছুক, রোজার সময়ে তাদের রোগ-বালাইর যেন শেষ নেই। তারা একটিবারও ভাবে না, ফিনল্যান্ডবাসীকে ২৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট রোজা রাখতে হয়, সে তুলনায় আমাদের সময় কত কম।
রোজাদারকে কেউ ইফতার করালে সমপরিমাণ সোয়াব বা পুণ্য তিনি পাবেন। অথচ এতে রোজাদারের সওয়াব বা পুণ্যে কমতি হবে না। হাদিসে আছে, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ পাকের কাছে মেশক আম্বরের চেয়ে উত্তম। রোজাদারের মর্যাদা আল্লাহ পাকের কাছে এতটাই উপরে। তার পরও যারা রোজা পালনে আন্তরিক নয়, আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুন।

মুসলিম-প্রধান দেশ হিসেবে আমাদের একটা পরিচিতি রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে খোদ রাজধানী ঢাকায় প্রকাশ্যে দেখা যায়, রাস্তার পাশে দিনের বেলায় খাবার গ্রহণের দৃশ্য! হোটেল-রেস্তরাঁয় কাপাড় টানিয়ে ভেতরে অবাধে দেদার খাচ্ছে একটি শ্রেণী। কাউকে কাউকে বিড়ি-সিগারেট টানতেও দেখা যায়। যে দেশে ৮০ শতাংশ মুসলমান, সে দেশে এই চিত্র দুঃখজনক ও লজ্জার।

রহমত, বরকত এবং মাগফিরাতের শওগাত নিয়ে যে রমজান আমাদের মাঝে এসেছে, দ্বীনদারা সে নেয়ামতকে সাদরে গ্রহণ করবে। রোজার হক আদায়ে সতর্ক থাকবে। রোজাদারদের কষ্ট হয়- এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে। রোজার পালনের মধ্য দিয়ে সংযম ও আত্মশুদ্ধির সর্বোচ্চস্তরে নিজেকে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে। আল্লাহ আমাদের রোজা ও এবাদতকে কবুল করুন।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ/ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন