কোরবানি সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসাআলা

  31-08-2017 02:06PM

পিএনএস ডেস্ক: কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। তাই এর মাসআলা জানাও জরুরি। কার উপর কোরবানি ওয়াজিব তা আগে জেনে নেই।

মাসআলা: প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিস্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ ফজর থেকে ১২ যিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব।

টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলঙ্কার বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আর নেসাব হলো স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, আর রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব-হলো, এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
(ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ১৭/৪০৫; আলমুতুল বুরহানী, ৮/৪৫৫)

কোরবানির পশুর বয়সসীমা:
মাসআলাঃ উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বা ৯ মাস বয়সের হতে হবে। আর ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনোভাবেই হবে না।
(ফাতাওয়া কাযীখান, ৩/৩৪৮; বাদায়েসউসসানায়ে,৪/২০৫-২০৬)

দাঁত নেই এমন পশুর কোরবানি:
মাসআলা : গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তাহলে সেটি দ্বারা কোরবানি সহিহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তাহলে ওই পশু কোরবানি করা যাবে না। (ফাতাওয়া আলমগীরী, ৫/২৯৮)

যে পশুর শিং ভেঙে বা ফেটে গেছে :
মাসআলা : যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গেছে, যে কারণে মস্তিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। কিন্তু শিং ভাঙার কারণে মস্তিস্কে যদি আঘাত না পৌঁছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ। সুতরাং যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি, সে পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। (তিরমিজি ও আবু দাউদ শরিফ, ফাতাওয়া আলগীরী ৫/২৯৭)

কান বা লেজ কাটা পশুর কোরবানি:
মাসআলা : যে পশুর লেজ বা কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের কম হয় তাহলে তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই।
( তিরমিজি ও মুসনাদে আহমদ-শরীফঃ ফাতাওয়া কাবীখান, ৩/৩৫২; ফাতাওয়া আলমগীরী-৫/২৯৭-২৯৮)

কোরবানির অংশ সংখ্যা:
মাসআলা : গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয় ও সাতভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (সহীহ মুসলিম শরীফ: বাদায়েউস সানায়ে, ৪/২০৭)

কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ:
মাসআলা : কোরবানির পশুতে আকিকার নিয়তে শরিক হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই সহীহ হবে।
(হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর, ৪/১৬৬; রদ্দুল মুহতার, ৬/৩৬২)

কোন কোন পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে:
মাসআলা : উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশুছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। (ফাতাওয়া কাবিখান, ৩/৩৪৮;)

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কোরবানি:
মাসআলা : এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না, তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয় ।
(তিরমিজি শরীফঃ ফাতাওয়া আলমগীরী, ৫/২৯৭;)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মাসআলা আনুযায়ী কোরবানির এই ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন