অজ্ঞদের জন্য জ্ঞানীদের অনুসরণের বিকল্প নেই

  17-12-2017 12:24AM

পিএনএস ডেস্ক: ৪৩. তোমার আগেও আমি ওহিসহ মানুষকেই তাদের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। অতএব, তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করো।

[সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৩ (দ্বিতীয় পর্ব)]
তাফসির : মানুষ নবী হওয়ার ব্যাপারে যারা বিস্ময় প্রকাশ করে, এ আয়াতে তাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, এবারই প্রথম নয় যে আল্লাহ তাআলা কোনো মানুষকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। হজরত নুহ, ইবরাহিম, মুসা, ঈসা (আ.)সহ আগের সব নবী মানুষ ছিলেন। এ বিষয়ে যাঁরা সুপণ্ডিত, তাঁদের জিজ্ঞেস করলে বিষয়টা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

এ আয়াতে কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে সুপণ্ডিতদের জিজ্ঞেস করতে বলা হয়েছে। এ কথা বোঝানোর জন্য কোরআনে ‘আহলুজ জিকর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আহল শব্দের অর্থ পরিবার, বলয়, যোগ্য ইত্যাদি। আর ‘জিকর’ শব্দের সাধারণ অর্থ হলো স্মরণ। কিন্তু কোরআনের পরিভাষায় ‘জিকর’ শব্দটি বহু অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এক আয়াতে কোরআনের জন্য ‘জিকর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, “এটা বরকতময় ‘জিকির’ (কোরআন)। আমি তা অবতীর্ণ করেছি। তবু কি তোমরা তা অস্বীকার করবে?” (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৫০)
প্রশ্ন হলো, এ আয়াতে সুপণ্ডিত বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে ড. ওহাবা জুহাইলি (রহ.) লিখেছেন, এখানে ‘আহলুজ জিকর’ হলেন আহলুল ইলম বা ব্যাপক অর্থে জ্ঞানী সম্প্রদায়। চাই তাঁরা অতীত ইতিহাসের সুপণ্ডিত হোক বা আগের আসমানি কিতাবের পণ্ডিত হোক কিংবা কোরআনের সুপণ্ডিত হোক। কেননা সামষ্টিকভাবে তাঁরা বিভ্রান্তির অপনোদন করতে সক্ষম। তাঁরাই বিষয়টা ভালোভাবে অবগত যে আগে যত নবী এসেছেন, তাঁরা সবাই মানুষ ছিলেন। (আততাফসিরুল মুনির : ১৪/৪৬১)

আলোচ্য আয়াতের বক্তব্য নির্দিষ্ট বিষয়ে হলেও ইসলামী আইনশাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী এর আবেদন সর্বব্যাপ্ত। অর্থাৎ যাঁরা যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাঁরাই সে বিষয়ে ‘আহলুজ জিকর’ বা অনুসরণীয়। সুতরাং যে ইসলাম সম্পর্কে জানে না, তার জন্য জরুরি হলো, ইসলাম সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞেস করা ও তাঁদের অনুসরণ করা।

এটাই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত যে সাধারণ মানুষ নির্দিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের শরণাপন্ন হবে। চিকিৎসার জন্য মানুষ চিকিৎসকের কাছে যাবে। রাষ্ট্রীয় আইনের বিষয়ে তারা আইনবিদের শরণাপন্ন হবে। ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য প্রকৌশলীর শরণাপন্ন হবে। ঠিক তেমনি দ্বিন শেখার জন্য দ্বিনের সুপণ্ডিতদের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রখ্যাত তাফসিরবিদ ইমাম কুরতুবি (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই যে সাধারণ মুসলমানদের জন্য আলেম-উলামার তাকলিদ বা অনুসরণ অপরিহার্য।

এ আয়াতের বাচনভঙ্গিমায় আরো একটি বিষয়ে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। বিষয়টি হলো, এখানে ‘আহল’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘আহল’ মানে পরিবার, বলয়, যোগ্য ও সুপরিপক্ব। সুতরাং সাধারণ ভাসা ভাসা জ্ঞানের অধিকারীদের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না। বরং যাঁরা নির্দিষ্ট বিষয়ে এতই পরিপক্বতা ও পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন যে এখন তাঁদের ওই পরিবারভুক্ত বিবেচনা করা হয়, এমন লোকদের অনুসরণ কাম্য। অন্যথায় সাধারণ ভাসা ভাসা জ্ঞানের অধিকারী লোকদের শরণাপন্ন হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই কোরআন সে বিষয়েও মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছে।

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন