একটি বিয়ের উপদেশ একমাত্র ইসলামই দেয়

  22-02-2018 01:43PM

পিএনএস ডেস্ক:পৃথিবীতে কয়েকশ ধর্ম আছে। ইসলাম পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। পৃথিবীর প্রত্যেক চার জন মানুষের একজন মুসলমান। মাত্র সারে চোদ্দশ বছরে এই ধর্ম সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। মিডিয়া ও ইসলামের সমালোচকরা এই বলে অপবাদ দেয়, ইসলাম নারীদের অধিকার দেয় না, বহুবিবাহ বৈধ করেছে ইত্যাদি।

এই বহুবিবাহ নিয়ে কয়েকটি কথা বলা যাক। আল্লাহ তালা বলেন, ‘বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন অথবা চারটি। আর যদি আশঙ্কা কর যে (স্ত্রীদের মাঝে) সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে (মাত্র) একটি (বিবাহ কর)….’ [সুরা নিসা ০৪:০৩]

এই আয়াতে বোঝা যাচ্ছে যে কোনো মুসলমান ইচ্ছা করলে একের অধিক বিয়ে (চারের বেশি নয়) করতে পারে। কিন্তু তাতে শর্ত হলো তাকে তার স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার অর্থাৎ একই রকম খাদ্য, বস্ত্র, সন্মান দিতে হবে এবং তাদের একের উপর অপরকে প্রাধান্য দেওয়া চলবে না। আর যে একাধিক বিয়ে করতে ইচ্ছুক, কিন্তু তার মনে হচ্ছে তার স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার বা সমতা রাখতে পারবে না, তাহলে তাকে একটি বিয়েতেই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হচ্ছে। স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করা নিশ্চয় কঠিন কাজ। আল্লাহ মানুষকে সাবধান করে বলেছেন, ‘তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনো সক্ষম হবে না……’ [সুরা নিসা ০৪:১২৭]

উপরের দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইসলামে চারটি বিবাহ করা বৈধ কিন্তু একটি বিবাহ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বহুবিবাহে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘….তোমরা এক জনের উপর সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না ও অপরকে (অপর স্ত্রীকে) ঝুলন্ত অবস্তায় রেখে দিও না …’ [সুরা নিসা ০৪:১২৭]

এ ব্যাপারে মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির দুটি স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে একটির দিকে ঝুঁকে যায়। এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে’। [আহমেদ ২/৩৪৭; আসবে সুনান; হাকিম ২/১৮৬, ইবনে হিব্বান ৪১৯]

বলা হয়ে থাকে, ইসলাম বহুবিবাহ বৈধ করেছে। আসলে ইসলাম বহুবিবাহের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যে কেউ চারটির বেশি বিবাহ করতে পারবে না। কারণ সে যুগে এমনকি আজ থেকে এক দেড়শ বছর আগে এই ভারতেই অনেক মানুষ ৩০-৫০-৮০ এমন কি একশোর বেশি বিবাহ করত! বিশ্বাস না হলে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বহুবিবাহ’ ও ‘বাল্যবিবাহ’ বই দুটি পরে দেখতে পারেন। আপনি যদি পৃথিবীর ইতিহাস পড়েন তাহলে দেখবেন যে সব যুগেই মানুষ অনেক স্ত্রী রাখত। সে জন্যই ডেভেনপোর্ট বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (স.) বহুবিবাহকে সীমার বাধনে বেঁধে ছিলেন’।

ইসলাম চারটি বিবাহকে বৈধ বলেছে এবং একটি বিবাহ করতে উপদেশ দিয়েছে। একের অধিক বিবাহ করাটা ইসলামে ঐচ্ছিক। এটা ফরজ বা ওয়াজেব না। এমনকি বহুবিবাহে উৎসাহও দেয়া হয়নি বরং ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। বহুবিবাহ সকল ধর্মেই বৈধ। কিন্তু কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ আপনি যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারেন কোনো অসুবিধা নেই। পাশ্চাত্যের বিখ্যাত দার্শনিক লিটনার তার ‘মহামেডানিজম’ বইয়ে লিখেছেন, ‘অপরিমিত বহুবিবাহ প্রথাকে মুহাম্মদ (স.) রুখে দিয়েছিলেন’।

তিনি আরো লিখছেন, ‘মুহাম্মদের (স.) এই আইনের উৎসাহ কিন্তু স্পষ্টতই একটি বিবাহের পক্ষেই’। স্পষ্টভাবে জেনে রাখা উচিত, ইসলাম কিন্তু লাগামছাড়া বহুবিবাহ প্রথাকে নিষিদ্ধ করেছে।

মধ্যযুগে বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথার মুখোশে যে বহুবিবাহ প্রথার প্রচলন করেছিলেন, সেই প্রথার সুযোগ নিয়ে কুলীন ব্রাহ্মণ শতাধিক বিবাহে মেতে উঠত। নারীত্বের অপমানের কি চরম পদ্ধতিই না চালু ছিল মধ্যযুগের সেই সমাজে!

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভারতে কোনো হিন্দু কিংবা আমেরিকা বা ইংল্যান্ডে কোনো খ্রিস্টান বহুবিবাহ করতে পারবে না, সেটা দেশের সংবিধান, কোনো ধর্মীয় আইন নয়। ধর্ম অনুযায়ী তারা বহুবিবাহ করতে পারবে। যখন পৃথিবীর সকল ধর্ম বহুবিবাহকে বৈধ করেছে তখন ইসলামকে নিয়ে সমলোচনা কেন?


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন