দান-খয়রাতে ধর্মীয় নিয়ম মানা হচ্ছে না : হতদরিদ্রদের জীবন নিয়ে চলছে চরম তামাশা

  14-05-2018 09:21PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : চাঁদ দেখা গেলে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রমজান মাস শুরু হবে। জাকাত-ফেতরা আদায়ের মাস রমজান। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সমতা আনয়নের জন্যই মূলত জাকাত-ফেতরার বিধান। এর মধ্য দিয়ে মালদার তার সম্পদের পবিত্রা রক্ষা করেন। আর নিম্ন আয়ের মানুষ জাকাত-ফেতরার পেয়ে নিজেদের দারিদ্র্যতা দূরীকরণে সক্ষম হন। বহুবিধ কারণে উত্তম এই নিয়মটি হালে জীবনহানির আকরে পরিণত।

জাকাত-ফেতরা সবার জন্য কল্যাণকর। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া এমন উত্তম নিয়মটি নিয়ে আমাদের দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে একটি মহল। কয়েক বছর আগে ঢাকায় যার শুরু, শেষ ময়মনসিংহে ঘটেছিল লঙ্কাকাণ্ড। সর্বশেষ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইফতার সামগ্রী বিতরণের নামে ১১টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। দান-খয়রাতের নামে একটি মহলের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এই প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের একটি মাদরাসা মাঠে ইফতার সামগ্রী বিতরণের সময় পদদলিত হয়ে ১১ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে আরো কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ১৪ মে (আজ) সোমবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্প গ্রুপ কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিক মো. শাহজাহান তার বাড়ির পাশের একটি মাদরাসা মাঠে ঘটা করে এ ইফতার সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করেন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) এ কে এম এমরান ভূঁইয়া ঘটনাস্থল থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘৩০-৪০ হাজার মানুষ ইফতার সামগ্রী নিতে ওখানে ভিড় করে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও কক্সবাজার জেলা থেকেও লোকজন সেখানে আসে।’ অব্যবস্থাপনার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। খবরে প্রকাশ, ১০ বছর আগে একই স্থানে জাকাতের কাপড় বিতরণকালে ৬ জনের প্রাণহানি ঘটে।

পরিসংখ্যান মতে, ১৯৮০ সালে ঢাকার জুরাইনে জাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ১৯৮৩ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জাকাতের টাকা নিতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পড়ে ৩ শিশু মারা যায়। ১৯৮৭ সালের ২৩ মে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় সরকারিভাবে যাকাত দেওয়ার সময় ৪ জন মারা যায়। ১৯৮৯ সালের ৫ মে চাঁদপুরে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা যায় ১৪ জন। জাকাত নিতে গিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামে। ১৯৯০ সালের ২৬ এপ্রিল পাহাড়তলীর আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরিতে যাকাত দেওয়ার সময় পদদলিত হয়ে ৩৫ জন নিহত হয়। ময়মনসিংহ শহরে যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে ২০১৫ সালে পদদলিত হয়ে ২৫ জন নিহত হয়েছেন।

হিসাবমতে, ১৯৮০ থেকে আজ পর্যন্ত জাকাত সংগ্রহ করতে গিয়ে ১১১ জন হতভাগ্য প্রাণ হারান। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ইসলাম শান্তির ধর্ম। যেখানে হাঙ্গামার কোনো স্থান নেই। শান্তি-শৃঙ্খলা, সৌন্দর্য ও মমত্ব যেখানে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। সে ধর্মের হতদরিদ্রদের নিয়ে জাকাতের নামে যা করা হচ্ছে ,এটাকে চরম তামাশা বললে কমই বলা হবে। অথচ এটা করে পার পেয়ে যাচ্ছে দায়ীরা। পার না পেলে অন্যরা এখন কী করে একই কাজ করার সাহস পাচ্ছে।

জাকাত দরিদ্রদের হক। জাকাত দিতে গিয়ে মানুষের জীবনহানির ঘটনা অপরাধ বৈকি। ধর্মীয়ভাবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলাম ধর্মমতে, জাকাত তথা দান-খয়রাত সম্পূর্ণ গোপন বিষয় । এ কাজটা করতে হবে এমনভাবে যে, ডান হাতে দান করলে বাম হাত যেন টের না পায়। অথচ দানের নামে তী হঠকারীতাই করা হচ্ছে। আর এর কুফলস্বরূপ জীবন যাচ্ছে সমাজের হতদরিদ্রদের। এর চেয়ে চরম তামাশা আর কিছুই হতে পারে না।

দান-খয়রাতের নামে টাকার গরম জাহির করাই নাকি এই মহলটির মূল কারণ বলে অনেকে মনে করেন। জাকাত, ইফতার সামগ্রী বিতরণসহ দান-খয়রাতের নামে যারা প্রকাশ্যে লোক সমাগম ঘটাচ্ছে, তারা ইসলাম ধর্মের নিয়মের পরিপন্থী কাজে লিপ্ত। যে কাজ করতে গিয়ে মানুষের জীবনহানি ঘটেছে, এর দায়ও তাদেরই। এতে দুনিয়া-আখেরাত দুই জায়গাই তারা অপরাধী। এদের কোথাও ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে ভবিষ্যতে আর কেউ দরিদ্রদের জীবন নিয়ে খেল-তামাশার সুযোগ পাবে না।

লেখক : বার্তা সম্পাদক- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন