ঘুমের মধ্য দিয়ে যে শিক্ষা নেওয়ার আছে

  26-05-2018 04:34PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : অফুরন্ত রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও ফজিলতের মাস রমজান। এ মাসের ফজিলত বর্ণাতীত। দিনে রোজা আর রাতে এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে এ মাসটি পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব। কথা আর প্রতিটি কাজের সময় মনে রাখতে হবে রোজার অঙ্গহানি যেন না ঘটে। রোজার প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোজাদারের দ্বারা কখনো অন্যের ক্ষতি হবে না। কথা-কাজে সব সময় রোজাদারকে সতর্ক থাকতে হয়। কারো মনে কষ্ট হয়, জেনে-বুঝে সে রকম আলাপ বর্জন করবেন রোজাদার। আর অধিক সতর্ক থাকবেন অন্যের হক নষ্ট করা থেকে। বিশেষ করে এতিমের হক। প্রতিবেশীর হক। আত্মীয়-স্বজনের হক ও অধিকারের ব্যাপারেও তাকে সতর্ক থাকতে হবে।

রোজা হলো আত্মাকে শুদ্ধির এক বিরাট সুযোগ। সে সুযোগ যারা কাজে লাগাতে সক্ষম হন, তারা পরিপূর্ণ মানুষ। তারাই রোজার পূর্ণ ফজিলত অর্জন বা পাপ্তিতে সফল হবেন। সারাদিন উপবাস করার মধ্য দিয়ে রোজাদার অন্নহীনদের ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে রোজাদারের মধ্যে ক্ষুধার্তদের প্রতি দরদ সৃষ্টি হয়। যে দরদ তাকে দান-খয়রাতে উদ্বুদ্ধ করে বৈকি।

রোজাদারকে অশ্লীল কথা-বার্তা ও আচরণ থেকে দূরে থাকতে হবে। ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি বেশি করে তোওবা করতে হবে। আর তোওবা করার পর ইসলাম ও মানবতার ক্ষতি হয়- এমন কাজ পরিহার করে চলতে হবে। কারো উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না, সব সময় মনে রাখতে হবে রোজাদারের দ্বারা গর্হিত কাজ বেমানান। এটা মনে রাখতে পারলেই সফলকাম হওয়া যাবে।

রোজাদারকে গিবত, প্রতারণা, মিথ্যাচার, সুদ, ঘুষ, মারামারি, ফাঁকিবাজি, ফটকাবাজি, ঠকবাজি, ফেরকাবাজি, বেহায়ানাপনা, মওজুদদারির মতো খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। এমন কাজ বর্জন না করলে রোজার অঙ্গহানি ঘটে। হক্কানি আলেম সমাজের মতে, খারাপ কাজ থেকে দূরে না-থাকা ব্যক্তির রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। তাই অধিক সাবধান থাকতে হবে।

রোজার সব করণীয় ও বর্জনীয় দিকগুলো পালনের মধ্যদিয়ে একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হন। যে মানুষের দ্বারা সমাজ কেবল উপকৃতই হবে। যার মধ্যে থাকবে সামাজিক কল্যাণের নির্দশন। এমন লোকরা হলেন মানবহৈতষী। যাকে দেখলে, যার সঙ্গে চললে, কাজ করলে মনে হবে মানব জীবনের স্বার্থকতা। এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এরা মহানবীর যোগ্য উত্তরসূরি।


মহানবীর উম্মতরা কখনো জেনে-বুঝে কারো অনষ্টি করে না। অন্যের হক নষ্ট করে না। কথা-কাজে কখনো কোরআন-হাদিসের ব্যত্যয় ঘটায় না। মাপে কম দেয় না, প্রতারণা করে না। আমাদের দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ মুসলমান, যারা মহানবীর উম্মতের দাবিদার। অথচ রমজানে দেখা যায় অনেকের মধ্যেই মহানবীর শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে।

সমাজের সাধারণ মানুষকে যারা অহরহ ঠকিয়ে যাচ্ছে, একই শ্রেণী রোজার মাসে অতি মুনাফার লোভে মজুদদারি করে দ্রব্যমূল্য বাড়ায়। সব সময় তারা এসব করে রোজাদারদের কষ্ট বাড়ায়। পচা-বাসি পণ্য খাওয়ায়। পরকাল ও মৃত্যু ভয় থাকলে মূলত এরা এতটা বেপরোয়া হতো না। এরা বেমালুম ভুলে যায়, তাদের প্রতিদিনের ঘুমের মধ্য দিয়ে লাশে পরিণত হওয়ার মতো শিক্ষণীয় দিকটি। আমাদের সমাজে একটি প্রবাদ আছে, ‘ঘুমে আর মরণে সমান।’

অফুরন্ত রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও ফজিলতের মাসে অতি মুনাফাবাজি থেকে ব্যসায়ীদের দূরে থাকা দরকার। দ্রব্যমূল্য গ্রাহকদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দিকগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সব কাজে পুণ্য আছে, এর নজির সৃষ্টির কাজ হাতেকলমে করতে বাধা কোথায়। অপবাধের ঊর্ধ্বে উঠে রমজানে রোজাদারদের প্রতি ব্যবসায়ীদের সদয় ও স্বচ্ছতার স্বাক্ষর রাখা সময়ের দাবি।

লেখক : বার্তা সম্পাদক- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন