দুনিয়া থেকেই অর্জন করুন জান্নাত

  13-07-2018 05:14PM


পিএনএস ডেস্ক :يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ. تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ. يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ.


“মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য।” (সূরা সফ: ১০-১২)

সৃষ্টি যা কিছু দৃশ্যমান, স্রষ্টা ধ্বংসশীলতাকে করেছেন তার বৈশিষ্ট্য। তেমনি ধ্বংসশীল এ পৃথিবীতে মৃত্যুকে করেছেন প্রতিটি প্রাণের চূড়ান্ত পরিণতি। এর মাধ্যমে রুহকে তিনি বিদায় নিইয়ে দেন দেহ থেকে, পৃথিবীর সকল বস্তুসম্ভার থেকে অনন্ত জগতের পথে...।

সেই অনন্ত জগতে আমাদের অবস্থান কোথায় হবে, আমরা চিরসুখের জান্নাতে প্রবেশ করবো, না তীব্র শাস্তির জায়গা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হব, তা নির্ভরশীল আমাদের আমলের উপরই। হাদিস শরীফে এসেছে, “দুনিয়া পরকালের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ”। তাই এ দুনিয়াতে আমরা যে আমল করবো, এর মাধ্যমে মূলত আমরা পরকালের জন্যই পাথেয় সংগ্রহ করবো। তাই আসুন জেনে নিই জান্নাতের কিছু মৌলিক নেয়ামত এবং কোন কোন আমলের প্রতিফল স্বরূপ তা ঘোষিত হয়েছে।

১. জান্নাতের ঘর
আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“আমি তার জন্য জান্নাতের কিনারায় একটি বাড়ির নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যে তর্ক করার অনুশীলন ত্যাগ করবে এমনকি সে সঠিক হওয়া সত্ত্বেও। এবং তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি ঘরের নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে রসিকতার ছলেও মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করবে। এবং তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ অবস্থানে একটি ঘরের নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে তার চরিত্রকে উত্তমরূপে গড়ে তুলবে।” (আবু দাউদ)

হযরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“যে আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ তৈরি করলো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি তৈরি করবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন,
‘যখন আল্লাহর কোন বান্দার সন্তান মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তখন ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের জীবন নিয়ে এসেছো?’ তারা জবাব দেয়, হ্যাঁ। আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমরা কি তার হৃদয়ের টুকরা কে নিয়ে এসেছো?’ ফেরেশতারা জবাব দেয়, হ্যাঁ। আল্লাহ তখন জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার বান্দা কি বলেছে?’ তারা জবাব দেয়, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং বলেছে, ‘আমরা আল্লাহর থেকে এসেছি এবং আল্লাহর কাছেই আমরা ফিরে যাবো।’

আল্লাহ তখন বলেন, ‘আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি কর এবং এর নাম রাখ বাইতুল হামদ (প্রশংসার বাড়ি)।” (তিরমিযী)

হযরত উম্মে হাবীবা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি,
“যে মুসলিম বান্দা আল্লাহর জন্য ফরযের পাশাপাশি অতিরিক্ত বারো রাকাত নামায আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি করে দেবেন।” উম্মে হাবীবা (রা.) বলেন, ‘এরপর থেকে আমি কোন নামাজই পরিত্যাগ করিনি।’ (মুসলিম)

২. চাবি ও দরজা
রাসূল (সা.) এর বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী,
“নামাজ জান্নাতে প্রবেশের চাবি, অযু নামাজের চাবি।” (তিরমিযী)
“পিতা-মাতা জান্নাতে প্রবেশের উত্তম দরজা, সুতরাং দরজা খোলা রাখো অথবা একে চিরতরে হারাও।” (ইবনে মাযাহ)

“যখন একজন নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা পালন করে, তার পবিত্রতা রক্ষা করে এবং তার স্বামীর অনুগত থাকে, তাকে বলা হবে, ‘জান্নাতে প্রবেশ করো, যে দরজা দিয়ে তোমার ইচ্ছা হয়।” (আহমদ)

রাসূল (সা.) এর হাদীসে এসেছে,
“কোন ব্যক্তি যদি তার তিন কন্যাকে যত্নের সাথে লালনপালন করে বড় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” রাসূল (সা.) এর কাছে জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি দুইটি কন্যা থাকে?’ আল্লাহর রাসূল উত্তর দিলেন, “দুইটি হলেও।” কিছু লোক ধারণা করছিল যদি তারা একজনেরও কথা বলে, আল্লাহর রাসূল একজনের জন্য বলতেন। (আহমদ)

৩. সম্পদ
রাসূল (সা.) বলেছেন,
“আমি কি তোমাদের কে জান্নাতের সম্পদসমূহের মধ্যে একটি সম্পদের কথা বলবো না? বলো, ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া আর কেউই শক্তি ও আশ্রয়ের অধিকারী নেই)।” (বুখারী ও মুসলিম)

৪. বাগান
রাসূল (সা.) বলেছেন,

“যদি কেউ কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের বাগানে অবস্থান করে যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।” (মুসলিম)

৫. গাছ
রাসূল (সা.) এর হাদীসে এসেছে,
“যে ‘সুবাহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী’ (মহিমাময় আল্লাহ এবং তারই সকল প্রশংসা) যিকির করলো, সে যেন নিজের জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপন করলো।” (তিরমিযী)

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন