সূরা মায়েদা এর রুকু ভিত্তিক মূল বক্তব্য

  10-09-2018 02:17PM

পিএনএস (মো. সোলাইমান) : প্রথম রুকু(১-৫): মানুষের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত্যুজীব, তা যে কোন ভাবে মৃত্যু হতে পারে, যেমন কন্ঠরুদ্ধ হয়ে বা ওপর থেকে পড়েগিয়েও হতে পারে,এবং রক্ত, শূকরের গোশত অথবা হিংস্রপ্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব ও দেব দেবির নামে যবেহ করা পশুও তোমাদের জন্য হারাম,তবে আল্লাহর নামে যেসব পশু যবে করছো তা তোমাদের জন্য হালাল।এছাড়া জুয়া খেলা তোমাদের জন্য হারাম, অত:এব তোমরা ফাসেকী ত্যাগ করে আল্লাহর আনুগত্য কর, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহ কারী।

দিতীয় রুকু(৬-১১): হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য তৈরীহও তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুইপর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, এবং মাথার ওপর হাত বুলাও ও পা দু’টি গেরো পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, আর যদি জানাবাত অবস্থায় থাকো তাহলে গোসল করে নাও, অথবা যদি রোগগ্রস্তহ হও বা সফরে থাকো ও মলমূত্র ত্যাগ করে আসো বা নারিদেরকে স্পর্শ করে থাকো, এবং পানি না পাও তাহলে পাক পবিত্র মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করো, এটাই তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষথেকে সঠিক নিয়ম।

তৃতীয় রুকু(১২-১৯): যারা বলে “মারয়াম পুত্র ঈসা (আ:)আল্লাহ” তারা অবশ্যি কুফর করেছে, হে মুহাম্মদ (স:) ওদেরকে বলে দাও, আল্লাহ যদি মারয়াম পুত্র মসীহকে, তার মাকে ও সারা দুনিয়াবাসীকে ধ্বংস করতে চান, তাহলে আল্লাহকে তার এ সংকল্প থেকে বিরত রাখার ক্ষমতা কার আছে? আল্লাহতো আকাশ এবং জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক, তিনি যা চান সৃষ্টি করেন, তার শক্তি সবকিছুর ওপর পরিব্যাপ্ত।

চতুর্থ রুকু(২০-২৬): মুসা (আ:) তার জাতিকে বললো, তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরন করো, যা তিনি তোমাদেরকে দান করেছিলেন, এবং সেই পবিত্র ভূখন্ডে প্রবেশ করো, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন, তখন তারা সেখানে প্রবেশ করতে অসিকৃতি জানালো, তখন আল্লাহ জবাব দিলেন: ঠিক আছে তাহলে ঐ দেশটি চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্য হারাম, তারা পৃথিবীতে উদভ্রান্তের মতো ঘুড়ে বেড়াবে, এ নাফর মানদের প্রতি কখনো সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করো না।

পঞ্চম রুকু(২৭-৩৪): আল্লাহ বলেন হে মুহাম্মদ (স:) বনী ঈসরাইলদেরকে আদম (আ:) এর দু’ছেলের সঠিক কাহিনি শুনিয়ে দাও, তারা দু’জন কুরবানী করলো, তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হলো, অন্য জনেরটা কবুল করা হলো না, তাই একজন অন্য জনকে হত্যা করলো, অত:এব বনী ঈসরাইলের জন্য আল্লাহ একটি ফরমান লিখেদিলেন, কেহ যদি অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করে সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো, আর যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করলো, সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করলো।

ষষ্ঠ রুকু(৩৫-৪৩): চোর পুরুষ বা নারি যেই হোক না কেন, উভয়ের হাত কেটে দাও, এটা তাদের কর্মফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তবে যে ব্যক্তি অন্যায় করার পর তাওবা করবে এবংনিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে,আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

সপ্তম রুকু(৪৪-৫০): তাওরাতে আল্লাহ ইহুদীদের জন্য যে বিধান লিখে দিয়েছিলেন, তাহলো প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক ইত্যাদি। অর্থাৎ সব রকমের জখমের জন্য সমপর্যায়ের বদলা, তার পর যে ব্যক্তি ঐ শাস্তি সাদকা করে দেবে তা তার জন্য কাফফারায় পরিনত হবে, কাজেই হে মুহাম্মদ (স:) তুমি আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী তাদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করো, এবং তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো না।

আষ্টম রুকু(৫১-৫৬): হে ঈমানদারগণ! ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, আর যদি তোমাদের মধ্য থেকে কেউ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে তাহলে সেও তাদের মধ্যেই গন্য হবে, আবশ্যি আল্লাহ জালেমদেরকে নিজের পথনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত রাখেন, আসলে তোমাদের বন্ধু হচ্ছে আল্লাহ, তার রসূল (স:) এবং সেই ঈমানদাররা যারা নামাজ কয়েম করে, যাকাত আদায় করে, এবং আল্লাহর সামনে বিনত হয়, অত:এব তাদের জেনে রাখা দরকার আল্লাহর দলই বিজয় লাভ করবে।

নবম রুকু(৫৭-৬৬): হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পূর্ববতী আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের দীনকে বিদ্রুপ ও হাসি-তামাসার বস্তুতে পরিনত করেছে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু হিসাবে গ্রহন করো না, আল্লাহকে ভয় করো যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো, ইহুদিরা বলে আল্লাহর হাত বাধা, আসলে তো বাধা হয়েছে ওদের হাত, এবং তারা যে কাজের কথা বলছে সে জন্য তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে, আল্লাহর হাত তো দারাজ যেভাবে চান তিনি খরচ করে যান।

দশম রুকু(৬৭-৭৭): হে মুহাম্মদ (স:) আহলি কিতাবদের পরিস্কার বলে দাও, তোমরা কখনই কোন মূল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে না, যতক্ষন না তোমরা তাওরাত, ইনজিল, ও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নাযিল করা অন্যান্য কিতাব গুলোকে প্রতিষ্ঠিত করবে, তবে তোমরা কি?আল্লাহকে বাদদিয়ে এমন কিছুর ইবাদত করছো, যা তোমাদের না ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা রাখে না উপকারের? অথচ একমাত্র আল্লাহই তো সবার সব কিছু শোনেন ও জানেন।


এগারোতম রুকু(৭৮-৮৬): যখন তারা এ কালাম শোনে, যা রাসূল (স:) এর ওপর নাজিল করা হয়েছে, তোমরা তখন দেখতে পাও সত্যকে চিনতে পারার কারনে তাদের চোখে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে,তারা বলে ওঠে,“হে আমার রব! আমরা ঈমান এনেছি, সাক্ষদাতাদের মধ্যে আমাদের নাম লিখে নাও” তাদের এ উক্তির কারনে আল্লাহ এমনসব জান্নাত তাদের দান করবেন, যার নিম্নদেশ দিয়ে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়, এবং তারা সেখানে থাকবে চিরকালের জন্য।

বারোতম রুকু(৮৭-৯৩): তোমরা যে সমস্ত অর্থহীন কসম খেয়ে থাকো, তার জন্য আল্লাহর কাছে পাকড়াও করতে হবে না, কিন্তু তোমরা জেনে বুঝে যেসব কসম খাও সেগুলোর ওপর তিনি তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, আর এধরনের কসম ভেঙে ফেলার কাফফারা হচ্ছে, দশ জন মিসকিনকে মধ্যম পয্যায়ের আহার দান করো, অথবা তাদের কাপর দাও বা একটি গোলাম মুক্ত করে দাও, আর যার এ সামার্থ নাই সে তিন দিন রোজা রাখবে, এ হচ্ছে তোমাদের কসম ভেঙে ফেলার কাফফারা, এভাবে আল্লাহ নিজের বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট করে দিতে চান।

তেরোতম রুকু(৯৪-১০০): তোমাদের জন্য ইহরাম বাধা অবস্থায় সমুদ্রের শিকার এবং তা খাওয়া হালাল করে দেয়া হয়েছে, যেখানে তোমরা অবস্থান করবে সেখানে তা খেতে পারো, এবং কাফেলার জন্য পাথেও হিসেবে নিয়ে যেতেও পারো, তবে যতক্ষন তোমরা ইহরাম বাধা অবস্থায় থাকো ততক্ষন তোমাদের জন্য স্থলভাগের শিকার হারাম করে দেয়া হয়েছে, কাজেই তোমরা আল্লাহর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকো, অত:এব আল্লাহ পবিত্র কাবা ঘরকে মানুষের জন্য সমাজ জীবন প্রতিষ্ঠার মাধ্যম পরিনত করেছেন।

চোদ্দতম রুকু(১০১-১০৮): আর যখন তাদেরকে বলা হয়, এসো সেই বিধানের দিকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং এসো রাসূল (স:) এর দিকে, তখন তারা জবাব দেয়, আমাদের বাপ-দাদাকে যে পথে পেয়েছি সে পথই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তারা কি নিজেদের বাপ-দাদারই অনুসরণ করে চলবে, যদিও তারা কিছুই জানতো না এবং সঠিক পথও তাদের জানা ছিল না?হে ঈমানদারগণ! নিজেদের কথা চিন্তা করো, অন্য কারোর গোমরাহীতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই যদি তোমরা নিজেরা সত্য সঠিক পথে থাকো। তোমাদের সবাইকেআল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। তখন তোমরা কি করছিলে তা তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন।

পনেরোতম রুকু(১০৯-১১৫): যখন হাওয়ারীরা বলেছিল,হে মারয়াম পুত্র আপনার রব কি আমাদের জন্য আকাশ থেকে একটি খবারের পরিপূর্ণ খাঞ্চা নাযিল করতে পারবে? ঈসা (আ:) বলেছিল আল্লাহকে ভয় করো, তারা বলেছিল আমরা কেবল এতটুকুই চাই যে, আমরা সেই খাঞ্চা থেকে খাবার খবো, এবং আমরা নিশ্চিত হবো যে আপনি যা কিছু বলছেন তা সবই সত্য, এবং আমরা তার সাক্ষী হয়ে যাবো, কিন্তু আল্লাহ বলেন, এরপর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কুফরী করবে তাকে আমি এমন শাস্তি দেবো, যা দুনিয়ার আর কাউকে দেইনি।

ষোলতম রুকু(১১৬-১২০): আল্লাহ যখন বলবেন, হে মারয়াম পুত্র তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে, আল্লাহকে বাদদিয়ে আমাকে ও আমার মাকে ইলাহ হিসাবে গ্রহন করো? তখন ঈসা (আ:) জবাব দেবে, যদি আমি এমন কথা বলতাম তাহলে আপনি নিশ্চই তা জানতে পারতেন, আপনি তো সকল গোপন সত্যের জ্ঞান রাখেন, আপনি যার হুকুম দিয়েছিলেন তার বাইরে আমি তাদেরকে আর কিছুই বলিনি, আর আপনি আল্লাহ তো সমস্ত জিনিসের তত্বাব্ধায়ক ও সংরক্ষক।


পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন