হজ নিয়ে প্রদর্শনী ও বাণিজ্য কখনো কাম্য নয়

  17-03-2019 03:01PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদশালীর উপর হজ ফরজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ একটি বিশেষ স্তম্ভ। হজ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা। ইসলামী পরিভাষায় হজ বলা হয় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কতিপয় এবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ জিয়ারতের সংকল্প করা। এর বাইরে অন্য কিছু করার মানে শয়তানকে খুশি করা।

হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে আল্লাহায়ালা নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, আর লোকদের হজ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহ্বান জানাও- তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে । এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন দুনিয়ার কল্যাণের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কোরবানী করবে, তা থেকে নিজেরা খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে। সূরা আল হজ : ২৬-২৮


আল্লাহর নির্দেশ আসার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত ইব্রাহীম (আ.) বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমার এই ক্ষুদ্র আওয়াজ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কিভাবে শুনবে? উত্তরে আল্লাহ বলেছিলেন, তুমি ডাক দিয়ে দাও। আওয়াজ পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার। আর আজ হজে গমনকারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর কেবল বৃদ্ধিই নয়, স্রোত এতটাই যে, ঠেকানোর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হচ্ছে মহানবীর দেশের পক্ষ থেকে মুসলিম দেশগুলোয়।

ইবনে মাজাহ শরীফের ২৮৯৩ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং হজ ও উমরা পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান।আল্লাহ তাদের ডেকেছেন, তারা সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। অতএব, তারা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তা-ই তাদের দিয়ে দিবেন। আর নাসাঈ শরীফের ২৬২৫ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, তিন ব্যক্তি আল্লাহর মেহমান। হাজী, উমরা পালনকারী ও আল্লাহর পথে জিহাদকারী।

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর কাবা ঘরের হজ ফরয করেছেন এবং এ হজকে ইসলামের একটি স্তম্ভ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার রয়েছে যে, যার এই ঘর পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে, সে যেন তার হজ সম্পন্ন করে। আর যে এ নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা আবশ্যক যে, আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি কিছুমাত্র মুখাপেক্ষী নন। সূরা আলে ইমরান : ৯৭

আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদিস থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ আদায় করেন, কিন্তু কোনো পাপের কথা বা কাজ করেননি, সে ব্যক্তি ওই দিনের মতো হয়ে ফিরে আসবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’। সহীহ বুখারী : ১৫২১ ও সহীহ মুসলিম ১৩৫০। মনে রাখতে হবে, এক দিলে শতভাগ মনোনিবেশ করে হজ পালনের মধ্য দিয়ে নাজাতের সে সুযোগ ভাগ্যে জুটতে পারে।

হজ লোক দেখানোর জন্য নয়। নয়, হাজী সাহেব নাম ধারণের বিষয়। এটা এমন এক এবাদত, যার সম্পর্ক সরাসরি মহান রাব্বুল আলামীনের সঙ্গে। তাই হজ পালনকারীকে সতর্ক থাকা অবশ্য কর্তব্য যে, যার মেহমান হয়ে তিনি বায়তুল্লাহ গমন করেছেন, তার মন-প্রাণ যেন সদা তার জন্য নিবেদিত থাকে। এর বাইরে অন্য কিছু কাঙ্ক্ষিত নয়। এর ব্যত্যয় হলে বা ঘটলে শয়তান খুশি হবে। আর শয়তানকে খুশি করার জন্য নিশ্চয় কেউ জেনে-বুঝে হজে যায় না।

হজে গিয়ে কোনো রকম বাণিজ্য না করাই শ্রেয়। হজের কাজগুলো প্রদর্শনে ব্যস্ত না থেকে যে কাজে যাওয়া হয়েছে, সে এবাদতে মশগুল থাকাই অধিক উত্তম। দেখা গেছে, সেখানে গিয়েও অনেকে ফেসবুক নিয়ে পাগলামি করছে, এসব দেখে মনে হয়; আল্লাহকে রাজি-খুশি করানো নয়, নিজেকে জাহির করাই যেন অন্যতম উদ্দেশ্য। হায় রে মুসলমান। হায় রে আল্লাহর মেহমান।

শয়তানের কারণে সেখানে গেলে অনেকে ভুলে যায় যে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কতিপয় এবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ জিয়ারতের সংকল্প। হজে গিয়ে এর বাইরে আর কিছু করাটা সমীচীন নয়। করলে বারো মুশকিল তেরো আহসানের মতো করা যায়, সে অনেকে বলেও কিন্তু তাতে যে মূল কাজ ও উদ্দেশ্যের ব্যাঘাত ঘটে, তা তো সহজেই অনুমেয়।

হজ ও ওমরায় অনেকে যায় আল্লাহকে পাওয়ার জন্য। যায় নাজাতের জন্য। আর সুযোগসন্ধানীরা যায় দুনিয়ায় নামের পাশে হাজি লাগাতে। চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কোমরকাশা গ্রামের একটা চক্র যায় পকেট কাটার জন্য। নোয়াখালীর একটা অংশ যায় চাদর বিছিয়ে খয়রাত করার জন্য। চাঁদপুরের একই উপজেলার কয়েকটি হজ এজেন্সি হাজিদের মাধ্যমে মাদক পাচার করে। অতীতে মাদকসহ ধরাও পড়ে উল্লিখিত উপজেলার কয়েকজন।

হজটা নিয়ে অনেকে ব্যবসা করে। সোনা-গয়না নিয়ে আসে। অনেক ব্যবসায়ী হজ যাত্রীদের টার্গেট করে টাকা দেয়, সোনা আনার জন্য। আরো কত কী। অনেকে হজ থেকে দেশে এসে খেজুর, জায়নাম, টুপি ও আতর কিনে হজ থেকে এনেছেন বলে স্বজন ও বান্ধুবান্ধদের মাঝে বিতরণ করেন। হজ থেকে এসে হজের নামে মিথ্যাচারেও তাদের বাঁধে না।

হজ থেকে জমজমের পানি, খেজুর, আতর, সুরমা, তজবি, জায়নামাজসহ এবাদত-সংশ্লিষ্ট কিছু জিনিস আনা যেতে পারে, যা কখনো বাণিজ্যিক দিক বিবেচনায় নয়। এর বাইরে একটাই লক্ষ থাকবে, আর সেটা হলো কেবলই এবাদত। এই এবাদতের মধ্যে ভুলেও অন্য কিছু সংস্পর্শে যাওয়া উচিত নয়। মন-প্রাণজুড়ে আপাদমস্তকে আল্লাহকে পাওয়ার এবং তা ধারণ করে বাকি জীবন কাটানোর কামনা থাকলে হজে গিয়ে শয়তানের দোসর হয়ে দেশে আযাব নিয়ে ফেরার আশঙ্কা থাকে না। আজ-কাল অহরহ যা ঘটে চলেছে। মহান আল্লাহ হজ যাত্রীদের কবুল করুন, আমিন।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন