শ্রমিকরা মালিকের ভাইয়ের মতো!

  27-04-2019 02:41AM

পিএনএস ডেস্ক :একজন শ্রমিক একটি কলকারখানার প্রাণ। শ্রমিক কলকারখানার উৎপাদনের চাকাকে সচল করেন। একজন উদ্যোক্তা বা মালিক কলকারখানার পুঁজি সরবরাহ করেন। আর শ্রমিক তার শ্রম, মেধা ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে কলকারখানার মালিকের পুঁজির বিকাশ ঘটান।

শ্রমিকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা সুন্নত। অধীনস্থদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে আল্লাহ খুশি হন। এ ছাড়া ভালো ব্যবহার করলে শ্রমিকের মন প্রফুল্ল থাকে। কলকারখানার দৈনন্দিন উৎপাদনের কাজে গতি আসে। শ্রমিকরা কাজের প্রতি মনোযোগী হতে পারেন।

কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এতিম, মিসকিন, প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পথচারী সঙ্গী ও তোমার অধিকারভুক্তদের সঙ্গেও।’ (সূরা নিসা : ৩৬)।

শ্রমিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী কখনও জান্নাতে যাবে না। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, দাস-দাসী বা চাকর-চাকরানিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (জামে তিরিমিজি : ১৯৪৬)। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে আমার বিতর্ক হবে। ১. ওই ব্যক্তি, যে আমার নামে কোনো চুক্তি করে তা ভঙ্গ করেছে। ২. সেই ব্যক্তি, যে কোনো স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছে। ৩. সেই ব্যক্তি যে মজুরের কাজ পুরোপুরি আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু তার মজুরি দেয়নি। (বোখারি : ২২৭০)।

মেহনত করে জীবিকা অর্জন করা নবী রাসূলগণের সুন্নত। হজরত আদম (আ.) চাষাবাদ করেছেন। হজরত দাউদ (আ.) কর্মকারের কাজ করেছেন। হজরত নূহ (আ.) ছুতারের কাজ করেছেন। হজরত ইদ্রিছ (আ.) দর্জির কাজ করছেন। হজরত মুছা (আ.) বকরি চরিয়ে জীবিকা অর্জন করেছেন। হজরত রাসূল (সা.)-এর কাছে একজন ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইতে এলে, তিনি ভিক্ষুকের বাটি এবং কম্বল বাজারে বিক্রি করে, কুঠার কিনে বন থেকে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে কখনও দুর্ব্যবহার করা যাবে না। অপমান অপদস্থ করা যাবে না। হজরত উমর (রা.) মরু ভূমিতে পথচলার সময় ভৃত্যকে উটের পিঠে বসিয়ে নিজের উটের লাগাম ধরে হেঁটেছেন। মালিক-শ্রমিক পার্থক্য শুধু এতটুকুই, যার পুঁজি আছে, তিনি মালিক আর যার পুঁজি নেই, তিনি শ্রমিক। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের কাউকে কারও ওপর রিজিকের ব্যাপারে প্রাধান্য দিয়ে রেখেছেন।’ (সূরা নাহল : ৭১)। ‘আপনি দেখেন, কীভাবে আমি (পার্থিব সম্পদের বেলায়) তাদের একজনকে আরেকজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করলাম।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২১)।

শ্রমিকদেরও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কলকারখানায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। যে শ্রমিক বিশ্বস্ত, তিনি কলকারখানার আদর্শ শ্রমিক। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমার মজুর হিসেবে সেই উত্তম যে শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত।’ (সূরা কাসাস : ২৬)।

শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ করতে হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, তোমরা মজুরের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও। (ইবনে মাজাহ : ২৪৪৩)।

রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই। সুতরাং আল্লাহ যে ভাইকে যে ভাইদের অধীন করে দিয়েছেন, সে তার ভাইকে যেন তাই খাওয়ায়, যা সে নিজে খায়, তাকে তাই পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে। (বোখারি : ৮/৬০৫০)। হে আল্লাহ শ্রমিকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে জান্নাতের পথ প্রশস্ত করার তৌফিক দান করুন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন