যেভাবে আদায় করবেন শবে কদরের নামাজ

  01-06-2019 04:00PM

পিএনএস ডেস্ক :আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’–এর ফারসি হলো শবে কদর। অর্থ সম্মানিত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারণী রজনী।

রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস, শবে কদর কোরআন নাজিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত, তথা হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল (আ.)–এর মাধ্যমে বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি মহাগ্রস্ত আল–কোরআন অবতীর্ণ হয়।

এ রাতের বিরাট মাহাত্ম্য ও অপরিসীম মর্যাদার কারণে রাতটিকে ‘লাইলাতুল কদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির মেয়াদ ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করে তা সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারিরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় রাত্রি কী? মহিমান্বিত নিশি সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেয়। সে রাত্রিতে ফেরেশতাগণ রুহুল কুদুস হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা উদয় পর্যন্ত’ (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো’ (মুসলিম)।

শবে কদরের বিশেষ আমলসমূহ হলো নফল নামাজ-তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, ছলাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সলাতুল হাজাত, সলাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া।

এছাড়া সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজ্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা ইয়া-সিন, সুরা ত-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরা তিলাওয়াত করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; তাওবা ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; দোয়া কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার ইত্যাদি করা।

যেভাবে আদায় করবেন শবে কদরের নামাজ
নফল নামাজ : ন্যূনতম বার রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। এ জন্য সাধারণত সুন্নতের নিয়মে ‘দুই রাকাত নফল পড়ছি’ এ নিয়তে নামাজ শুরু করে শেষ করতে হবে।

এ জন্য সূরা ফাতেহার সাথে আপনার জানা যেকোনো সূরা মেলালেই চলবে। বাজারে প্রচলিত কিছু বইয়ে ৩৩ বার সূরা আল কদর, ৩৩ বার ইখলাস ইত্যাদি উল্লেখ করা আছে। তবে সে নিয়মে পড়লেও অসুবিধার কারণ নেই।

হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ৪ রাকাত নামাজ ক্দরের রাতে আদায় করবে এবং উক্ত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ২১ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’য়ালা ওই ব্যক্তিকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দেবেন এবং বেহেশতের মধ্যে এক মনোমুগ্ধকর মহল তৈরি করে দেবেন।

অপর এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ক্দরের রজনীতে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং উহার প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কদর ও সূরা ইখলাছ তিনবার করে পাঠ করবে, নামাজ শেষে সিজদায় গিয়ে নিম্নের দোয়াটি কিছু সময় পাঠ করে আল্লাহর দরবারে যা-ই প্রার্থনা করবে তিনি তাই কবুল করবেন এবং তার প্রতি অসংখ্য রহমত বর্ষিত করবেন।

দোয়াটি হলো : সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

শবেকদরের নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা রাকআ’তাই ছালাতি লাইলাতিল ক্বাদরি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

জিকির ও দোয়া : হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বারবার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (মা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে।

এ রাতে নীরবে-নিভৃতে কিছুটা সময় আত্মসমালোচনা করুন, দেখবেন আপনি সঠিক পথ খুঁজে পাবেন। আত্মসমালোচনা আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলে। আত্মসমালোচনা আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

কদর হলো বছরের সর্বোত্তম রাত এবং এই রাতে পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়েছে। এই রাতে করা কোনো ভালো কাজ অন্য হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই হাজার মাসকে যদি ১২ দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে হিসাব দাঁড়ায় ৮৩ বছরের চেয়ে কিছু বেশি।

এই রাতে ইবাদত করার মর্যাদা সারাজীবন ইবাদত করার চেয়ে আরো অনেক বেশি। এটা এমন এক রাত যেখানে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত খোদার বিশেষ রহমত এবং শান্তি বর্ষিত হতে থাকে।

এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এ কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন