বর্ষবরণে ইসলামের ভূমিকা

  02-10-2016 01:28PM



পিএনএস, ইসলাম : ‘নববর্ষ’ শব্দটির সঙ্গে বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের পরিচয় অনেক পুরনো। এ দেশে বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন খুব ঘটা করেই পালন করা হয়। আর হিজরি (আরবি) নববর্ষ সেভাবে পালন করা না হলেও কিছু আরবি মাসের ব্যাপক শো-ডাউন উদযাপিত হয়ে থাকে। মহররম, রবিউল আউয়াল এবং রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজান তার অন্যতম।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হিজরি সাল ঘোষণা করা হয়। আজ ২৯ জিলকদ। বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল সোমবার (৩ অক্টোবর) হিজরি নববর্ষ শুরু হবে। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ‘বর্ষবরণে ইসলামি মূল্যবোধ’ সম্পর্কি কিছু কথা তুলে ধরা হলো-

উপমহাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উদযাপনে বছরের শেষ রাতে আতশবাজি, ঘণ্টাধ্বনি, ফল খাওয়া, কাঁচ তথা তৈজশপত্র ছুঁড়ে মারা, যৌবন হারানো ও চুল-ভ্রু সাদা হওয়ার ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটানো ইত্যাদি আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এ সবের কোনো ভিত্তিই নেই।

অথচ নির্দিষ্ট সময় ও সূর্যকে আহ্বান করতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষাভাষী মানুষ চৈত্রের শেষে, বৈশাখের প্রথম প্রহরে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ তিলক-ঢোলক রাখির আর্শিবাদ লাভ এবং পান্থা-ইলিশের ভূরিভোজসহ নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আবার ইংরেজি নববর্ষে নতুন সময় ও সূর্যকে গ্রহণে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ টা ০১ মিনিটে নববর্ষ উদযাপনের উদ্দেশ্যে আতশবাজি, বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচ-গান, তরুণ-তরুণীর ফ্রি স্টাইলে ফুর্তিসহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসব শুরু হয়।

এ সকল অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ঘটে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অনেক দুঃখ ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। অথচ অন্যায় ও যৌন উত্তেজনামূলক কোনো কাজ, আতশবাজিসহ অপচয়মূলক কার্যক্রম কোনো ধর্মই সমর্থন করে না।

ইসলাম ধর্ম মতে, রাতের বেলায় ইবাদাত-বন্দেগির তাৎপর্য অত্যাধিক। হিজরি সাল যেহেতু চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। তাই সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা থেকেই হিজরি বৎসর শুরু হয়। অন্যান্য বর্ষবরণের মতো ইসলামে বর্ষবরণ বা অনুষ্ঠান উদযাপনের কোনো রীতি-নীতি বা আয়োজন নেই।

হিজরি সনের (আরবি ) শেষ মাস জিলহজ। এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। এ মাসের প্রথম দশক অনেক গুরুত্বপূর্ণ; আবার এ মাস হজের মাস। এ মাস আরাফার ময়দানের মুসলিম মহাসম্মিলনের মাস। এ মাসের শেষ দিনে নতুন বছরের প্রথম রজনীতে ইবাদাত বন্দেগিই হলো শুভ আরবি বর্ষবরণের অন্যতম উপায়।

অন্যান্য সংস্কৃতিতে বর্ষবরণ উদযাপনে রাতের গুরুত্বপূর্ণ যে সময়টিকে আনন্দ উৎসবের লক্ষ্যে টগবগে যৌবনের লাগামছাড়া নেশা মেটানোর সময় হিসাবে বেছে নেয়া হয়। গভীর রাতের সে সময়টির ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে আহ্বান করে থাকেন- অসুস্থকে সুস্থতা দান এবং ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা প্রদানসহ যা ইচ্ছা তা ডেকে ডেকে দিয়ে যান। (মুসলিম, মিশকাত)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফিতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, (যখন) ব্যক্তি ভোর অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, অথবা সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর অতিবাহিত করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে।’ (মুসলিম)

সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী হিজরি নববর্ষ উপলক্ষ্য বর্ষবরণে ইসলামি সংস্কৃতি হওয়া উচিত যে, রাতের অন্ধকারে বিদায় নেয়া বছরের সকল অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজের জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা এবং নতুন বছরের দিন-রাতগুলোতে সুন্দর ও সৎ জীবনযাপনের লক্ষ্যে মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। আল্লাহ তাআলার আলীশান দরবারে এ কামনা করাই হলো বর্ষবরণের ইসলামী মূল্যাবোধ।

বিগত বছরের গোনাহ মাফে এবং হিজরি নতুন বছরের কল্যাণ লাভে হাদিসের আমল করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য আবশ্যক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যদি কোন মানুষ সে সময় লাভ করতে পারে, তবে আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের কোনো কল্যাণ চাইলে আল্লাহ তাকে দান করেন। আর এ সময়টি প্রতি রাতেই রয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত)

বর্ষবরণের অনুষ্ঠান যদি করতেই হয় ,তবে রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে বিগত জীবনে ভুলত্রুটি থেকে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করাই হচ্ছে উত্তম। যেহেতু আতশবাজি, ঘণ্টাধ্বনি, কল্যাণের উদ্দেশ্যে ফল খাওয়া, কাঁচ তথা তৈজশপত্র ছুঁড়ে মারা, যৌবন হারানো ও চুল ভ্রু সাদা হয়ে যাওয়ার ভয়ে নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করাসহ বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, নগ্ন নারীর পুরুষসংমিশ্রণ ইত্যাদি কাজ ইসলামে হারাম সেহেতু মুসলিম মাত্রই এ কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানের ফরজ দায়িত্ব।

আসুন, হিজরি নববর্ষের অনুষ্ঠান পালনে আমরা বিগত জীবনের ভুল সংশোধনে আমলনামা সমৃদ্ধকরণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (সুরা আহযাব : আয়াত ৭০-৭১)

বিশ্বব্যাপী বর্ষবরণের সকল অপসংস্কৃতি পরিহার করে নিজেদের দ্বীন ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বছরের শেষ রাতে এবং নতুন হিজরি বছরের প্রথম দিন থেকে আমলি জিন্দেগি যাপন করাই হোক বর্ষবরণের ধর্মীয় সংস্কৃতি।

বর্ষবরণসহ সকল প্রকার অনুষ্ঠান উদযাপনে আল্লাহ তাআলা পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতিসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে অন্যায় ও ফাহেশা কাজ থেকে হেফাজত করে কল্যাণের পথে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন।
আমিন।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন