আরিফের ফাঁসি কার্যকর

  16-10-2016 11:11PM



পিএনএস ডেস্ক : দুই বিচারক হত্যা মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ ‘জেএমবির’ অন্যতম শীর্ষ নেতা আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় খুলনা কারাগারে এই রায় কার্যকর করা হয়। ফাঁসির পর চিকিৎসকরা আরিফের মরদেহ পরীক্ষা করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

২০০৫ সালে ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতে যাওয়ার পথে দুই বিচারককে বহনকারী মাইক্রোবাসে বোমা হামলা করে জঙ্গিরা। এতে নিহত হন জ্যেষ্ঠ বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ। এই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইসহ ছয় আসামির ফাঁসি ২০০৬ সালেই কার্যকর হয়। আসাদুল পলাতক থাকায় তার বিচারকাজ বিলম্বিত হয়। চলতি বছর আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে আরিফুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করায় শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা হলো এই জঙ্গির ফাঁসি।

জঙ্গি আরিফের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। রবিবার সকাল থেকেই কারাগারের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় কারাগারের চারপাশে। এছাড়া সাদা পোশাক ও গোয়েন্দা পুলিশও মোতায়েন করা হয়। কারাগার এলাকায় সীমিত করা হয় গাড়ি চলাচল। সংবাদকর্মী ছাড়া সাধারণের প্রবেশ নিষেধ করা হয়।

খুলনা কারাগারে আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের লক্ষ্যে আগেই প্রস্তুত করা হয় ফাঁসির মঞ্চ। ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা কারাগারে সর্বশেষ কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর হয়। এর কার্যকর হলো আলোচিত এই জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড।

ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল হাসান, খুলনা সিভিল সার্জন আব্দুর রাজ্জাক, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রাশেদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুলতান আলম, জেল সুপার কামরুল ইসলাম, র্যাবের এএসপি মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশানর মাহবুব হাকিম প্রমুখ।

খুলনা কারাগারের জেলার জান্নাতুল ফরহাদ জানান, ফাঁসি কার্যকরের দিন নিশ্চিত হওয়ার পর রবিবার দুপুরে পরিবারের সদস্যরা আরিফের সঙ্গে দেখা করে গেছেন। দুপুর ১২টার দিকে আরিফের স্ত্রী, দুই কন্যাসহ পরিবারের ১২ জন সদস্য কারাগারে আসেন। তারা সেখানে প্রায় আধাঘণ্টা অবস্থান করেন।

বিচার প্রক্রিয়া
২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর জেএমবি জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ঝালকাঠির দুই বিচারক নিহত হন। ওই দিন সকাল নয়টার দিকে সরকারি বাসা থেকে জেলা জজ আদালতে যাওয়ার পথে দুই বিচারককে বহনকারী মাইক্রোবাসে হামলা চালানো হয়। হামলার পর ঘটনাস্থলেই মারা যান জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ এবং বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে। আহত অবস্থায় ধরা পড়েন হামলাকারী জেএমবির সদস্য ইফতেখার হাসান আল মামুন।

পরে এ ঘটনায় ঝালকাঠি জেলা দায়রা জজ রেজা তারিক আহম্মেদ ২০০৬ সালের ২৯ মে সাতজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। ২০০৬ সালের ৩১ আগস্ট তাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে উচ্চ আদালত। সে সময় আসাদুল পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি। একই বছরের ২৮ নভেম্বর তখনকার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ছয় জঙ্গির আপিল খারিজ করে দেন। পরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ কার্যকর করা হয় ছয় জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড। তারা হলেন জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক।

২০০৭ সালের ১০ জুলাই এ মামলার আরেক আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফ ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার হন। ওই বছর জুলাই মাসে হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। পরে আপিল বিভাগের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও চলতি বছরের ২৮ আগস্ট তা খারিজ হয়ে যায়। মৃতুদণ্ড কার্যকরে তার সামনে বাকি থাকে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। তিনি প্রাণভিক্ষা না চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয় ফাঁসি। এর মধ্য ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন