মৃত্যু পূর্ববর্তী তামিমের এসএমএস প্রকাশ

  22-10-2016 04:19PM

পিএনএস ডেস্ক: গুলশান হামলার নাটের গুরু হিসেবে চিহ্নিত তামিম চৌধুরী তার পাইকপাড়া আস্তানায় পুলিশের অভিযানের পর দুই সহযোগীর গুলিতে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে নব্য জেএমবির প্রধানের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি কার গুলিতে মারা গিয়েছিলেন তা জানা যায়নি।

র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এর সবই প্রকাশ করেন বাহিনীর প্রধান বেনজীর আহমেদ। তিনি জানান, সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় নাম আসা নব্য জেএমবির প্রধান তামিম ছিলেন না, ছিলেন অন্য একজন। তার সত্যিকারের নাম সারোয়ার জাহান হলেও পরিচিত ছিলেন আবদুর রহমান নামে। আর সাংগঠনিক নাম ছিল শাইখ আবু ইব্রাহীম আল হানিফ। তামিম চৌধুরী (সাংগঠনিক নাম আবু দুজানা) তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই চলতেন।

গত ৮ অক্টোবর সাভারের আশুলিয়ায় একটি বাড়িতে অভিযানে প্রাণ হারান আবদুর রহমান। এরপর সেই বাড়ি থেকে পাওয়া যাওয়া চিঠিপত্র, আর বিভিন্ন ডিজিটাল যন্ত্র সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়। এর মাধ্যমেই নব্য জেএমবির প্রধানের সঙ্গে তামিমের নিহত হওয়ার আগ মুহূর্তের যোগাযোগের আদ্যোপান্তও জানা যায়।

বেনজীর জানান, দুই জঙ্গি নেতার মধ্যে যোগাযোগ হতো ‘প্রকেটটেড টেক্সট’ এর মাধ্যমে। এই বার্তাগুলো বাইরের কারও পক্ষে ধরা সম্ভব না।



নব্য জেএমবির প্রধানকে যে কথা বলেছিলেন তামিম

গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযান শুরুর আগেও দুই জনের মধ্যে যোগাযোগ হয়। ওই আস্তানায় ছিলেন তামিম। তিনি অভিযান চলাকালে ক্ষণে ক্ষণে তার বিস্তারিত জানাচ্ছিলেন নব্য জেএমবির প্রধানকে।

রাত দুইটা ২৩ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সময় তামিম লিখেন, ‘এই দিকে তাগুদ (সরকারি বাহিনীকে এই নামে ডাকে জঙ্গিরা) এসেছে।’

পরের ম্যাসেজেই তামিম আবার জানান, ‘আমরা ফাইটের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

পরের ম্যাসেজেই তামিম লিখেন, ‘দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’

রাত দুইটা ৫১ মিনিটে তামিম আবার লিখেন, ‘সালাম’।

১৪ সেকেন্ড পর তামিম আবার লিখেন, ‘ভাই আমরা আল্লাহর কাছে যাচ্ছি’।

২০ সেকেন্ড পর তামিম আবার লিখেন, ‘আনুগত্যে ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন।’

আরও ১৪ সেকেন্ড পরে তামিম লিখেন, ‘আপনারা কাজ চালিয়ে যান।’

আরও ১৬ সেকেন্ড পরে তামিম লিখেন, যে প্লানগুলো করেছি, সব কাজে লাগিয়েন’।

তবে তামিম এই বার্তাগুলো দিয়ে গেলেও নব্য জেএমবি প্রধান সঙ্গে সঙ্গে তার জবাব দেননি। রাত তিনটা দুই মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে তিনি প্রথম জবাব দেন। প্রথম ম্যাসেজে তিনি লিখেন ‘ভাই কেমন আছেন’। সাত সেকেন্ড পর প্রধান আবার লিখেন, ‘ভাই কী হয়েছে।’

এরপর তামিম আবার বলেন, ‘ভাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’ পরে তিনি আবার লিখেন, ‘দুই জনকে বলেন আমাকে গুলি করতে, আমি তাগুদের হাতে মরতে চাই না। তারা তাগুদের সঙ্গে ফাইট করে মারা যাক।’

ওই আস্তানায় তামিমের সঙ্গে ছিলেন তার দুই সহযোগীও। পুলিশের অভিযানে নিহত হন তাদের তিন জনই।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, নব্য জেএমবির প্রধানের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র অনুযায়ী পাইকপাড়া অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর সাবেক সেনা কর্মকর্তা মুরাদকে (প্রকৃত নাম জাহিদুল ইসলাম) অপারেশন কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়।

তবে তিনিও ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত হন। এরপর ৮ অক্টোবর গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও আশুলিয়া অভিযানে প্রাণ হারান মোট ১২ জন।

এই ঘটনার ১৩ দিন পর র‌্যাব নব্য জেএমবির প্রধানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। যদিও আশুলিয়া ওই অভিযানের পর তাৎক্ষণিকভাবে জানা গিয়েছিল আবদুর রহমান ছিলেন জঙ্গিদের অর্থদাতা।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন