ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু

  26-10-2016 10:43PM

পিএনএস: ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার চলছে। বুধবার মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন জনৈক মনিরুল ইসলাম, তপন কুমার শীল ও আবু ইউসুফ। এদের মধ্যে আবু ইউসুফ আসামি জিকরুল্লাহ ও আরিফকে হাতেনাতে আটকের বিষয়ের সাক্ষী। আর অন্য দুজন জব্দ তালিকার সাক্ষী। তাদের জবানবন্দি শেষে আসামিদের পক্ষে জেরা করেন তাদের আইনজীবীরা। বিচারক এস এম জিয়াউর রহমান সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আগামী ১১ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

এর আগে এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা আসামি জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম আরিফ ও সাইফুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে চার্জশিটভুক্ত অন্য দুই আসমি মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম ওরফে আকরাম ওরফে হাসিব ওরফে আবদুল্লাহ পলাতক রয়েছে।

চলতি বছরের ২০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর আগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ডিবির পরিদর্শক মশিউর রহমান মামলার তদন্ত শেষে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়।

চার্জশিটে বলা হয়, ব্লগ ও ফেসবুকে কথিত ইসলামবিরোধী লেখালেখির কারণেই ওয়াশিকুরকে খুন করা হয়েছে। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে গত ২৩ মার্চ যাত্রাবাড়ীর নয়ানগরের একটি বাসায় বৈঠক করে হত্যার চুড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়। কথিত বড় ভাই পলাতক হাসিব ওরফে আবদুল্লাহর পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে। বৈঠকে শরীফ, তাহের ওরফে জুনায়েদ, আবরার, জিকরুল্লাহ, আরিফুল ও সাইফুল উপস্থিত ছিল। পরিকল্পনায় ওয়াশিকুরকে চাপাতি দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যার নির্দেশনা দেয় হাসিব। বৈঠকে আটজন অংশ নিলেও কিলিং মিশনে অংশ নেয় চারজন। দুজন চাপাতি নিয়ে বাসার কাছে ওত পেতে থাকে। কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নেয় একজন, নির্দেশনা অনুযায়ী আরেকজন দূরে থাকে।

ওত পেতে থাকা দুই মাদ্রাসাছাত্র জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ব্লগার বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করে। পালানোর সময় হিজড়া ও এলাকাবাসী মিলে দুজনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা জুনায়েদ নামের আরেকজন দ্রুত সরে যায়। এছাড়া আসামি সাইফুল বেগুনবাড়িতে ওয়াশিকুরের বাসার পাশে তাদের জন্য ঘর ভাড়া করে দিয়েছিলেন। এর আগে যাত্রাবাড়ী এলাকায় তারা ভাড়া বাসায় থাকতেন। ওয়াশিকুর হত্যার পাঁচ দিন আগেই ধারালো অস্ত্রসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন সাইফুল। জিকরুল্লাহ এবং আরিফুল হত্যাকাণ্ডের পর পালানোর সময় হিজড়া ও এলাকাবাসী মিলে তাদের আটক করে।

প্রসঙ্গত, ওয়াশিকুর একটি ব্লগে ‘বোকা মানব’ নামে কিছুদিন লিখলেও তিনি মূলত ফেসবুকে ‘কুচ্ছিত হাঁসের ছানা’ এবং ‘গণ্ডমূর্খ’ নামে লিখতেন। রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে রাজধানীর মতিঝিলে ফারইস্ট অ্যাভিয়েশন নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে আইটি বিভাগে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতেন। বাবা টিপু সুলতানের সঙ্গে তিনি বেগুনবাড়ীর ৪/৩-এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে সাবলেট থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপেজলার উত্তর হাজীপুরে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওয়াশিকুরের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি করেন।



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন