গাইবান্ধার এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

  07-02-2017 05:51PM

পিএনএস ডেস্ক:সাঁওতাল পল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গাইবান্ধার এসপি আশরাফুল ইসলামকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।একইসঙ্গে ঘটনার দিন গোবিন্দগঞ্জের চাঁমগাড়ি এলাকায় দায়িত্বরত সকল পুলিশ সদস্যকেও প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করে দেয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

সাঁওতাল পল্লীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা আদালতে জানাতে বলা হয়েছে। আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবু ওবায়দুর রহমান, সামিউল আলম ও মাহজাবীন রব্বানী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। পরে আবু ওবায়দুর রহমান বলেন, আদালত এসপিসহ পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের পাশপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সদর দফতরের প্রতি আদেশ দিয়েছেন। গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে রংপুর সুগার মিলের অধিগ্রহণ করা জমিতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কিছু লোক হতাহত হয়।

এ ঘটনায় করা রিট মামলার রুলের শুনানিকালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ব্রতী সামাজিক কল্যাণ সংস্থা ও অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলডি) নামের তিনটি সংগঠন আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেন।

এ রিটের শুনানি চলমান থাকাবস্থায় পুলিশ সদস্যরা সাঁওতাল পল্লীতে আগুন লাগাচ্ছে এমন ছবি দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। এ ছবি আদালতের নজরে আনা হলে গত ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে কারা আগুন লাগিয়েছে এবং এর সঙ্গে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তা তদন্তের নির্দেশ দেন।

ওই নির্দেশ মোতাবেক গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনার তদন্ত করে গত ৩০ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল জাজিরা টেলিভিশনে প্রদর্শিত ভিডিও ক্লিপ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কিছু পুলিশ সদস্য ও দুইজন সিভিল পোশাকধারী ব্যক্তি সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোয় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। আরও কিছু পুলিশ সদস্য কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন, যারা আগুন লাগানোয় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেননি। তবে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টাও করেননি।

৩১ জানুয়ারি এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত মঙ্গলবার শুনানির পর এ আদেশ দেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পুলিশের গুলির আওয়াজে আতংকগ্রস্ত হয়ে সাঁওতালরা তাদের স্থাপনা ছেড়ে চলে গেলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে গ্রুপটি খামারের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করেছিল, তারাই চামগাড়ী বিলে সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনার কাছে যান। পেনড্রাইভে প্রদত্ত ভিডিও ক্লিপগুলো পর্যবেক্ষণ ও ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল এবং মুসলমান সাক্ষীদের পর্যালোচনায় দেখা যায়, চামগাড়ী বিলে নির্মিত স্থাপনা থেকে সাঁওতালরা চলে যাওয়ার পর আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবির পোশাক পরিহিত সদস্য এবং সাধারণ পোশাকধারী দুইজন ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ওই গ্রুপটির মধ্য থেকে পুলিশ লেখা পোশাকধারী দু`জন, ডিবি লেখা পোশাকধারী একজন ও সাধারণ পোশাকধারী দু`জন (লাল ও সাদা রঙের শার্ট পরিহিত) ব্যক্তিকে সক্রিয়ভাবে চামগাড়ী বিলে সাঁওতালদের স্থাপনায় আগুন লাগাতে দেখা গেছে। অপরদিকে কুয়ামারা, সাহেবগঞ্জ ও হরিণমারী এলাকায় সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনায় কতিপয় স্থানীয় জনতা আগুন লাগিয়েছে।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন